সালাহ উদ্দিনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়েছে, শতভাগ নিশ্চিত স্ত্রী

SHARE

hasina ahmed‘নিখোঁজ’ বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমদকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে গেছে বলে শতভাগ নিশ্চিত বলে দাবি করেছেন তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ।

গত ১০ মার্চ থেকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ ‘নিখোঁজ’ রয়েছেন

সোমবার সকালে গুলশানের বাসায় সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী সহমর্মিতা জানাতে আসলে সাংবাদিকদের কাছে তিনি একথা জানান।

হাসিনা আহমেদ বলেন, ‘‘১৩ দিন হয়ে গেছে- এখনো আমার স্বামী নিখোঁজ। কিভাবে কোথায় আছেন- কিছুই জানি না। আমি শতভাগ নিশ্চিত উত্তরার বাসা থেকে আমার স্বামীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে গেছে। আমাদের কাছে অনেক সাক্ষ্য প্রমাণ আছে, যা ইতিমধ্যে মিডিয়াতে প্রচার হয়েছে।’’

তিনি বলেন, ‘‘আমি ইতিমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছি, এখনো জানাচ্ছি- তিনি যেন নির্দেশ দেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমার স্বামীকে জনসমক্ষে হাজির করে।’’

সোমবার সকাল পৌনে ১১টায় গুলশানের ৭২ নং সড়কের ৭ নম্বর প্লাটিনাম রেসিডেন্স এর এপার্টমেন্টে বি চৌধুরী ও তার ছেলে বিকল্প ধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী আসেন। তারা নিখোঁজ সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদের সঙ্গে কথা বলেন। সন্তানদের খোঁজ-খবর নেন।

হাসিনা আহমেদ আবেগময় কণ্ঠে বলেন, ‘‘আমরা স্বামীকে ফিরে পেতে আমি সকলের সহযোগিতা চাই। আমরা বিশ্বাস আছে- সকলে সহযোহিতা করলে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমার স্বামী নিশ্চিত আমার কাছে ফিরে আসবেন।’’

সাংবাদিকদের কাছে সা্বেক রাষ্ট্রপতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘১৩ দিন ধরে সালাহউদ্দিন আহমেদকে খুঁজে পাওয়া যাবে না, তিনি হারিয়ে যাবেন। সরকারের দায়িত্ব তাকে খুঁজে বের করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া। সরকার তা করতে পারেনি, এটা তাদের চরম ব্যর্থতা।’’

তিনি বলেন, ‘‘আমি সরকারকে জানিয়ে দিতে চাই- আপনারাদেরই (সরকার) দায়িত্ব সালাহউদ্দিন আহমেদকে খুঁজে বের করা। এটা করতে না পারেন আপনারা পদত্যাগ করুন।’’

একই সঙ্গে তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদের আবেদনে প্রধানমন্ত্রীর সাড়া দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সালাহ উদ্দিন আহমেদের স্ত্রী আমাকে বলেছেন, তিনি শতভাগ নিশ্চিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তার স্বামীকে তুলে নিয়ে গেছে। তারা ডিবি পরিচয়ে এসে নিয়ে গেছে। এই অবস্থায় আমি প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাবো- তিনি যেন সালাহউদ্দিনের স্ত্রীকে সাক্ষাৎ দিয়ে তার কথা শুনেন।’’ গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর বরাবর স্বারকলিপি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাক্ষাৎ চান।

সাবেক রাষ্ট্রপতি ক্ষোভের সুরে বলেন, ‘‘বর্তমান সরকারের আমলে এভাবে হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নিকৃষ্টতম উদাহরণ হয়ে আছে। অতীতেও অনেকে এভাবে নিখোঁজ- গুম হয়ে গেছেন। আর ফিরে আসেনি। এটা সরকারের চরম ব্যর্থতা বলে আমি মনে করি।’’

বি চৌধুরী বলেন, ‘‘আমি দেশের সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে সরকারকে বলতে চাই- রাজনীতি নয়, মানবিক দিক বিবেচনা করে সালাহউদ্দিন আহমেদকে দ্রুত খুঁজে করে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেন। কারা এজন্য দায়ী খুঁজে বের করুন।’’

১০ মার্চ রাতে উত্তরার একটি বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিনকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হয় বলে তার পরিবারের অভিযোগ। স্বামীর খোঁজ চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট আবেদনও করেছেন তার স্ত্রী হাসিনা। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে আদালতকে বলা হয়েছে, পুলিশ সালাহ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেনি। তার কোনো খোঁজও পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে আগামী ৮ এপ্রিল হাই কোর্টে আবার শুনানির তারিখ রাখা হয়েছে।

সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এপিএস ছিলেন সালাহ উদ্দিন। পরে তিনি চাকরি ছেড়ে কক্সবাজারের সংসদ সদস্য হন এবং প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তার স্ত্রী হাসিনাও সংসদ সদস্য ছিলেন।

তাদের দুই ছেলে দুই মেয়ের মধ্যে বড় ছেলে সৈয়দ ইব্রাহিম আহমেদ কানাডায় ও বড় মেয়ে পারমিজ আহমেদ ইকরা মালয়েশিয়াতে লেখাপড়া করেন। ছোট ছেলে সৈয়দ ইউসুফ আহমেদ ও ছোট মেয়ে ফারিবা আহমেদ রাইদা দেশেই থাকেন।