র’র এজেন্ট পাক সেনাবাহিনীর মেজর!

SHARE

koyshikভারতের রাজস্থানের গঙ্গানগরে ১৯৫২ সালের ১১ এপ্রিল জন্ম হয় রবীন্দ্র কৌশিকের। প্রথম জীবনে থিয়েটার অভিনেতা হিসেবে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেন তিনি।

২১ বছর বয়সে অংশ নেন লৌখনোতে আয়োজিত জাতীয় ড্রামা মিটে। এখান থেকেই গোটা জীবনটা অন্য দিকে মোড় নেয় রবীন্দ্র কৌশিকের। এই নাট্য সম্মেলনেই তিনি চোখে পড়ে রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং বা র-এর কর্মকর্তাদের। তার অভিনয় ক্ষমতা দেখে গুপ্তচর হিসেবে রবীন্দ্র কৌশিককে পাকিস্তানে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় র। র-এর ছদ্মবেশী এজেন্ট হিসেবে নিয়োজিত হন কৌশিক। দিল্লি দু-বছরের প্রশিক্ষণের পর ২৩ বছর বয়সে পাকিস্তানে পা রাখেন তিনি।

নতুন নাম হয় নবি আহমেদ শাকির। ছদ্মনাম ও ছদ্মপরিচয়ে শুরু হয় নতুন জীবন। করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে এলএলবি পাশ করেন তিনি। যোগ দেন পাকিস্তানি সেনা বাহিনীতে। দক্ষতা ও কার্যক্ষমতার গুণে সহজেই উঠে সেনা বাহিনীর উপরের স্তরে। রাজস্থানের নাট্য অভিনেতা রবীন্দ্র কৌশিক হয়ে ওঠেন পাক সেনাবাহিনীর মেজর নবি আহমেদ শাকির। বিয়েও করেন আমানত নামে একটি স্থানীয় মেয়েকে। পাশাপাশি নিঃশব্দে চলতে থাকে ‘র’-এর কাজ।

১৯৭৯ থেকে ১৯৮৩-র মধ্যে ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমন অনেক পাক সরকার ও সেনা বাহিনীর গোপন খবর দেশে পাঠান তিনি। ‘র’ তার নাম দেয় ‘ব্ল্যাক টাইগার’। বেশ কয়েক বার তার পাঠানো খবরের জেরেই পাক সেনার হামলার পরিকল্পনা বানচাল করে দিয়েছে ভারত। কিন্তু ১৯৮৩-র শেষের দিকে নেমে আসে বিপর্যয়। ইনায়েত মাসিহা নামে একজনকে কৌশিকের সঙ্গে দেখা করতে পাকিস্তানে পাঠায় ‘র’। কিন্তু ধরা পড়ে যায় সে। মাসিহাকে জেরা করেই রবীন্দ্র কৌশিকের আসল পরিচয় জানতে পারে পাক সেনা।
১৯৮৩-র সেপ্টেম্বরে গ্রেপ্তার হন কৌশিক। শিয়ালকোটের জেলে দু-বছর ধরে চলতে থাকে অকথ্য অত্যাচার। ৮৫ সালে তাকে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দেয় আদালত। পরে অবশ্য তা খারিজ করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে পাক সুপ্রিম কোর্ট। শিয়ালকোট ছাড়াও কোট লাখপত এবং মিনারওয়ালি জেলে ১৬ বছর কাটান তিনি। অত্যাচার ও অনাহারে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন কৌশিক। অ্যাজমা, টিবি ও হার্টের অসুখে আক্রান্ত হয়ে পড়েন তিনি। মুলতানের জেলে ২০০১-এর ২১ নভেম্বর মৃত্যু হয় তার।