পুলিশ হেফাজতে ঝুট ব্যবসায়ী সুজন হত্যা মামলায় বাদী নারাজী দাখিল না করায় অব্যাহতি পেলেন মিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সালাহউদ্দিন আহমেদ।
সোমবার নিহতের স্ত্রী মমতাজ সুলতানা লুসির নারাজী দাখিলের কথা থাকলেও তিনি কোন নারাজী দেননি। অধিকন্তু দাখিলকৃত চার্জশিট গৃহীত হলে তার কোনো আপত্তি নেই বলেও আদালতকে জানান। অতঃপর ভারপ্রাপ্ত মহানগর দায়রা জজ ইমরুল কায়েস গত ৬ নভেম্বর সিএমএম আদালতের দাখিলকৃত বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নেন।
এরও আগে গত ১৮ জানুয়ারিও বাদীপক্ষ নারাজি দাখিলের জন্য সময়ের আবেদন মঞ্জুর করলে ১৮ ফেব্রয়ারি দিন ধার্য করেছিলেন।
মামলাটির জুডিশিয়াল তদন্ত প্রতিবেদনে মিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সালাহউদ্দিন আহমেদকে অব্যাহতি দেওয়ার বিরুদ্ধে ওই নারাজি দাখিল করার কথা ছিল।
উল্লেখ্য, গত ১৩ জুলাই রাতে মিরপুর থানা হেফাজতে ঝুট ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান সুজন নিহত হন। ওই অভিযোগে গত ২০ জুলাই ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে নিহতের স্ত্রী মমতাজ সুলতানা লুসি এই মামলা করেন।
নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩ এর ১৫ (১)(২)(৩)(৪) ধারায় মালাটি দায়ের করা হয়।
মামলাটির বিচার বিভাগীয় তদন্ত শেষে গত ৬ নভেম্বর সিএমএম আদালত মহানগর দায়রা জজ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই প্রতিবেদনে ওসি সালাহ উদ্দিনকে নির্দোষ ঘোষণা করা হয়।
মামলায় ওসি সালাহ উদ্দিন ছাড়াও মিরপুর থানার এসআই জাহিদুর রহমান জাহিদ, এএসআই রাজ কুমার, কন্সটেবল আসাদ, কন্সটেবল রাশেদুল, জনৈক মিথুন, নাসিম, ফয়সাল, খোকন ও ফয়সালকে আসামি করা হয়।
প্রতিবেদনে ১০ জন আসামির মধ্যে ওসি সালাহ উদ্দিনসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের অব্যাহতি এবং মিরপুর থানার এসআই জাহিদুর রহমান জাহিদসহ অপর ৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে মর্মে উল্লেখ করা হয়।
অভিযুক্ত হওয়া ৫ জন হলেন, এসআই জাহিদুর রহমান জাহিদ, এএসআই রাজ কুমার, কন্সটেবল আসাদ, কন্সটেবল রাশেদুল, জনৈক মিথুন।
নির্দোষ প্রমাণিত হওয়া ৫ জন হলেন, ওসি সালাহ উদ্দিন, জনৈক নাসিম, ফয়সাল, খোকন ও পলাশ।
মামলায় বাদীর দাবি, গত ১৩ জুলাই রাত সোয়া ১২টায় বাদিনীর ভাড়া বাসায় বাড়ীওয়ালা দরজা খুলতে বলে। বাদিনী দরজা খুলতেই আসামি এসআই জাহিদুর রহমান জাহিদ, এএসআই রাজ কুমার, কন্সটেবল আসাদ, কন্সটেবল রাশেদুল, জনৈক মিথুন, নাসিম, ফয়সাল, খোকন ও ফয়সালকে দেখতে পান। ওই সময় বাদিনীর স্বামী মাহবুবুর রহমান সুজন পুলিশ আসার খবরে রান্না ঘরের সানসেটে লুকিয়ে ছিল। সেখান থেকে এএসআই রাজ কুমার তাকে নামিয়ে আনে। এরপর এসআই জাহিদ ও এএসআই রাজ কুমার বাদিনীর স্বামীর গামছা দিয়ে মুখ ও চোঁখ বাধে এবং দুই হাত পিছনে দিয়ে হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে টানতে টানতে বাথ রুমে নিয়ে বালতি ভরা পানিতে মাথা চুবিয়ে লোহার রড দিয়ে বেদম প্রহার করে।
এরপর এসআই জাহিদ বাদিনী, তার স্বামী ও শিশু পুত্র মোশারফকে নিয়ে রাত পৌনে দুইটার দিকে মিরপুর থানায় আসে। ওই সময় এসআই জাহিদ ওয়্যারলেসে একজনকে ফোন করে বলেন, স্যার হারামজাদাকে তো অর্ধেক মেরে থানায় নিয়ে এসেছি। এখন কি করব? অপর প্রাপ্ত থেকে উত্তর আসে, ওকে হয় ক্লোজ করে দাও না হয়, ফাইনাল করে দাও।
এরপর থানায় বাদিনী তার স্বামীর কান্নাকাটি ও চিৎকার শুনতে পান। পরদিন সকালে ওসি সালাহ উদ্দিন তার রুমে বসিয়ে ভেতর রুম থেকে এক গ্লাস পানি এনে তাকে খেতে দেন। যা খেয়ে বাদিনীর চরম অসন্তি বোধ হয়। শরীরে ঝিম ঝিম লাগে।
তখন সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে বলে বলেন, যদি স্বামীকে দেখতে চান তবে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করেন। এভাবে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করায়। বলেন, স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে জানতে পারেন তার স্বামীর লাশ ঢাকা মেডিকেলে আছে।
বাদিনীর স্বামীর লাশ ঢাকা মেডিকেল থেকে বাসায় আনার পর বাদিনী তার স্বামীর হাতের কব্জিতে কালো দাগ, পায়ের গোড়ালিতে কালদাগ, পিঠের ডানপাশে কাল দাগ ও মাথার পিছনে কালদাগ দেখতে পান।