শিশুদের সাথে দিন কাটালেন রাষ্ট্রপতি

SHARE

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ রোববার বঙ্গভবনে একদল শিশুর উদ্দেশ্যে বলেছেন, “তোমাদের দেশকে ভালোবাসতে হবে। দেশের গর্বিত নাগরিক হিসেবে তোমাদের নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে হবে, কেননা ভবিষ্যতে রাষ্ট্রপতি তোমাদের মধ্য থেকেই হবে।”image_111910_0

রাষ্ট্রপতির অতিথি হিসেবে এসব শিশু রোববার বঙ্গভবনে দিন অতিবাহিত করে।রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের অতিথি হিসেবে কয়েকজন সুবিধা বঞ্চিত সহ ২৬০ জন শিশু  তার সাথে দুপুরের খাবার গ্রহণ করে এবং তাকে শিক্ষা থেকে শৈশব পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করে নিজেদেরকে সমৃদ্ধ করে।

রাষ্ট্রপতি শিশুদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এবং বলেন, “এখনও আমি ছাত্র এবং তোমরা সবাই আমার শিক্ষক।”

আজিমপুর শিশু বিকাশ একাডেমির দশ বছর বয়সি শিশু স্মৃতি বলে, “আমি আজ খুবই উদ্দীপ্ত ও আনন্দিত। আমি কখনোই দেশের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের কথা কল্পনা করিনি।”

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় বঙ্গবভবনে ‘রাষ্ট্রপতির সাথে শিশুদের সাক্ষাৎ’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
শিশুরা রাষ্ট্রপতির বাবভবনের সবুজ মাঠে দৌড়, বল নিক্ষেপসহ বিভিন্ন খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করে।

রাষ্ট্রপতি এবং অন্যান্য দর্শক-শ্রোতাদেরকে তারা নিজেদের সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে বিমোহিত করে তোলে। শিশুদের পরিবেশিত রবীন্দ্র সঙ্গীত, নজরুল গীতি, লালন গীতি, দেশাত্মবোধক ও লোকগান এবং নৃত্যনাট্য দর্শক-শ্রোতাদের ব্যাপক প্রশংসা লাভ করে।

অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি বলেন, “তোমরা খুবই ভাগ্যবান যে, একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে তোমরা বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে সাক্ষাৎ করতে পারছো। আমি মনে করি এটা তোমাদের জীবনের একটি স্মরণীয় ও ব্যতিক্রমি ঘটনা।”

আবদুল হামিদ বলেন, “আমরা একটি পরাধীন দেশের নাগরিক ছিলাম। বঙ্গভবনের মতো রাজকীয় প্রাসাদে আমরা প্রবেশের চিন্তাও করতাম না। আমাদের বাক্ স্বাধীনতা বা মত প্রকাশের স্বাধীনতা ছিলনা এবং সংস্কৃতির চর্চাও কঠোরভাবে সীমাবদ্ধ ছিল।”
তিনি বলেন, “কিন্তু তোমাদের বাক্ স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংস্কৃতি চর্চার স্বাধীনতা এখন সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত।”

স্মৃতিচারণ করে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, “তোমাদের সাথে আজ সময় কাটিয়ে, আমি শৈশবের নস্টালজিয়ায় আপ্লুত হয়ে পড়েছি। তোমরা জানো আমি কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকা থেকে এসেছি।”

রাষ্ট্রপতি বলেন, “আমি দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় বেড়ে উঠেছি। হাওরের ঢেউ, প্রকৃতি ও পাখিরা ছিল আমার শৈশবের বন্ধু এবং সংগ্রাম ছিল দৈনন্দিন জীবনের অংশ”।

তিনি বলেন, “যদিও আমি এখন আমার কর্তব্য ও দায়িত্বের জন্য বঙ্গভবনে বসবাস করছি কিন্তু আমি সব সময় আমার জন্মস্থানকে অনুভব করি এবং সুযোগ পেলেই আমার গ্রামের বাড়িতে ছুটে যাই।”
শিশুদেরকে তাদের গ্রামের বাড়িতে স্বত:স্ফূর্তভাতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “তোমাদের অধিকাংশই শহরে বেড়ে উঠছ, কিন্তু তোমাদের নানা-দাদা এবং নানী-দাদীরা গ্রামে বসবাস করেন। তোমরা দেখতে তোমাদেরকে পেয়ে তারা কেমন খুশি হন!”।

রাষ্ট্রপতি তার বক্তৃতায় চার বছর বয়সি শিশু জিহাদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন। শনিবার রাজধানীর শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনীর পরিত্যক্ত পানির পাম্পের গভীর থেকে জিহাদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

তিনি জিহাদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

শিশুরা তাদের আঁকা একটি ছবি রাষ্ট্রপতিকে উপহার দেয়।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, মন্ত্রণালয়ের সচিব তারিক-উল-ইসলাম এবং বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর চেয়ারম্যান সেলিনা হোসেন।–বাসস