এই তো চিরচেনা পাকিস্তান!

SHARE

বিশ্বকাপে আজ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪১ রানে হেরেছে পাকিস্তান। অস্ট্রেলিয়ার ৩০৭ রান তাড়া করতে নেমে ২৬৬ রানে অলআউট হয়েছে সরফরাজ আহমেদের দল
ওয়ানডেতে প্রথমবারের মতো পাঁচ উইকেট নিলেন মোহাম্মদ আমির। বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির তালিকায় শীর্ষেও উঠেছেন আজকের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে। কিন্তু পাকিস্তানি পেসারের মন খারাপ হতেই পারে। তাঁর আগুন ঝরানো বোলিংকে সার্থক করতে পারেনি পাকিস্তান। শুরুতে জয়ের পথে থেকে দলটি পথচ্যুত হয়েছিল আশ্চর্য এক পতনে। এরপর পেসার ওয়াহাব রিয়াজ হঠাৎ করেই ব্যাটসম্যান হয়ে উঠলে শেষ দিকে টান টান উত্তেজনা ফেরে ম্যাচে। এ যেন চিরায়ত পাকিস্তান! কোনো কিছুই নিশ্চিত না। শেষ পর্যন্ত অবশ্য স্টার্কের দুর্দান্ত এক ওভারের কারণে ৪১ রানে হেরেছে পাকিস্তান।
জয়ের জন্য ৩০৭ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। তাড়া করতে নেমে ২৫ ওভার পর্যন্তও জয়ের পথে ছিল পাকিস্তান। মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে ১৩৬ রান তুলে ফেলেছিল দলটি। কিন্তু পাকিস্তান তো চিরকালীন অনিশ্চয়তায় ভরপুর এক দল—সেই নাম রাখতেই বুঝি পতন শুরু হলো ইনিংসের দ্বিতীয় অংশের শুরু (২৬তম ওভারে প্রথম বল) থেকে! এক প্রান্ত আগলে রাখা ইমাম-উল-হককে তুলে নেন প্যাট কামিন্স। পরের দুই ওভারে নেই আরও ২ উইকেট! সব মিলিয়ে পাঁচ ওভারে পরেছে ৪ উইকেট, এর মধ্যে টানা তিন ওভারেই ৩টি!
১৩৬ থেকে ১৬০— এ ২৪ রানের মধ্যে গোটা মিডলঅর্ডার হারায় পাকিস্তান। দ্রুত ৪ উইকেট হারানোর পর পেসার হাসান আলী অসম্ভবকে সম্ভব করার চেষ্টা করেছিলেন। ৩ ছক্কা ও ৩ চারে ১৫ বলে ৩২ রানের ‘ক্যামিও’ ইনিংস খেলা হাসান ওপরের ব্যাটসম্যানদের যেন বোঝাতে চেয়েছিলেন, এভাবে ব্যাট করতে হয়। ৩৪তম ওভারে(৩৩.৫) কাটায় কাটায় ঠিক দলীয় ২০০ রানে হাসানকেও হারায় পাকিস্তান। ঝাই রিচার্ডসনকে ছক্কা মারতে গিয়ে খাজাকে ক্যাচ দেন হাসান। জয় থেকে পাকিস্তান তখন ৯৬ বলে ১০৮ রানের দূরত্বে। এক প্রান্তে অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ তখন যেন ‘নিঃসঙ্গ শেরপা’—হাতে যে মাত্র ৩ উইকেট। কে জানে, ওই আশ্চর্য পতন না ঘটলে ফলটা অন্যরকমও হতে পারত।
দ্বিতীয় (৫৪) ও তৃতীয় উইকেটে (৮০) পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের জুটি পেয়েছে পাকিস্তান। এরপর হাসান ও ওয়াহাব রিয়াজকে নিয়ে হাল ছাড়েননি সরফরাজ। পেসার থেকে ব্যাটসম্যান বনে যাওয়া ওয়াহাব অষ্টম উইকেটে মাত্র ৬৩ বলে ৬৪ রান তুলে ম্যাচে ফেরান পাকিস্তানকে। ওয়াহাব এদিন অবিশ্বাস্য ব্যাট করেছেন। ম্যাক্সওয়েল-কোল্টার নাইলকে সীমানার ওপাশে পাঠাতে কুণ্ঠা করেননি। সরফরাজ সিঙ্গেলস নিয়ে স্ট্রাইক দিয়ে গেছেন ওয়াহাবকে।
জয়ের জন্য শেষ ৭ ওভারে ৫১ রান দরকার ছিল পাকিস্তানের। ৪৪তম ওভারে ৬ রান নিয়ে লক্ষ্যটা নাগালের মধ্যেই রাখেন সরফরাজ-ওয়াহাব। ৩৬ বলে দরকার ৪৫ রান। ম্যাচে টান টান উত্তেজনা। কিন্তু পরের ওভারে ওয়াহাব ও আমিরকে তুলে নিয়ে ম্যাচটা আবারও পাশার দানের মতো উল্টে দেন স্টার্ক। ৩ ছক্কা ও ২ চারে ৩৯ বলে ৪৫ রান করেন ওয়াহাব। ৪৫তম ওভারে স্টার্কের দুর্দান্ত বোলিংটাই শেষ পর্যন্ত ভাগ্য ঠিক করে দেয় ম্যাচের। বাকি ছিল স্রেফ আনুষ্ঠানিকতা। পরের ওভারে সরফরাজকে রান আউট করে তা সেরেছে অস্ট্রেলিয়া। ৪০ রান করা সরফরাজ এদিন অসহায়ের মতো দেখেছেন দলের হার।
টন্টনের পেসবান্ধব উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে ১০ উইকেট পেয়েছিলেন পেসাররা। মোহাম্মদ আমির একাই নিয়েছেন ৫ উইকেট। অস্ট্রেলিয়ারও যেহেতু চার পেসার, তাই বোঝাই যাচ্ছিল গতির ঝড় তুলবেন কামিন্স-স্টার্করাও। ঘটেছেও ঠিক তাই। শুরুর ঢিমেতাল থেকে গা ঝাড়া দিয়ে ওঠা পাকিস্তানকে পুড়িয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার পেসাররাই। ওয়ানডেতে শখের বশে বল করা অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ শুধু ১টি উইকেট নিতে পেরেছেন। বাকি ৮ উইকেট পেসারদের। ৩৩ রানে ৩ উইকেট নেন কামিন্স।
এ জয়ে ৪ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দুইয়ে উঠল অস্ট্রেলিয়া। ৪ ম্যাচে ৩ পয়েন্ট নিয়ে আটে নেমে গেল পাকিস্তান।