সংস্কার কর্মসূচি থেকে নাগরিক সমাজকে বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই বলে মনে করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেছেন, আমরা বারবার বলেছি যে জাতীয় ঐকমত্য গঠনে শুধু রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে আলোচনা যথেষ্ট নয়, নাগরিক সমাজের মধ্যেও এ বিষয়ে এক ধরনের ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠা করা দরকার। তাই নাগরিক সমাজকে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে হবে।
আজ রবিবার কৃষিবিদ ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছি তা জানানোর পাশাপাশি স্বচ্ছতার জন্য যে বিষয়ে সমঝোতা হয়নি তাও জনগণকে অবহিত করা হবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের বিষয়টি তুলে ধরে আলী রীয়াজ জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক আদর্শিক অবস্থানের কারণে মতপার্থক্য থাকবে, সব বিষয়ে ঐক্যমত প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না, এটা হচ্ছে বাস্তব।
তিনি বলেন, পাশাপাশি আমরা নাগরিক সমাজের চিন্তাভাবনাগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে আজকে আমরা এখানে আপনাদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি এবং এই আলোচনার মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের কার্যক্রমের ব্যাপারে আপনাদের পরামর্শ নেব।
আলী রীয়াজ বলেন, যে সব বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য হয়েছে এগুলো জানাব।
আর যেসব বিষয়ে ঐক্যমত প্রতিষ্ঠা করা যায়নি সেগুলোও আমরা জানাব। এর কারণ হচ্ছে স্বচ্ছতার জন্য এবং জনগণের পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের সহযোগিতা করার জন্য। আমরা মনে করি সেটা খুবই জরুরি। সেই বিবেচনা থেকেই আমরা এখন পর্যন্ত অগ্রসর হচ্ছি এবং সেক্ষেত্রে আপনাদের পরামর্শ আমাদেরকে সাহায্য করবে।
আলী রীয়াজ জানান, ঐকমত্য কমিশন চেষ্টা করবে যে জাতীয় সনদ তৈরি হচ্ছে তার পাশাপাশি যে প্রতিবেদন তৈরি করা হবে সেখানে যেন এই মতামতগুলো থাকে।
সুশীল সমাজের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনার গুরুত্বের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যমত কমিশন ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝিতে গঠিত হওয়ার পর থেকে নির্ধারিত সময় দেওয়া হয়েছে ছয় মাস। সেই ছয় মাসের প্রায় মাঝামাঝি সময়ে আমরা উপস্থিত। এই সময়ে আমরা বিভিন্নভাবেই প্রতিবেদনগুলো প্রকাশ করা ছাড়াও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তার সংক্ষেপ এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো নিয়ে যোগাযোগ করেছি। দলগুলো তাদের মতামত দিয়েছে।
প্রাথমিক পর্যায়ে ৩৩টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করা হয়।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, আমরা একটা মাহেন্দ্রক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি। অমিত সম্ভাবনা তৈরি করেছি, কিন্তু যে কোনো সম্ভাবনা যেমন চ্যালেঞ্জ তৈরি করে; এই পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জগুলো অত্যন্ত কঠিন। আমাদের প্রত্যাশা যে সমাজের বিভিন্ন অংশের মধ্যে এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের যে সুযোগ, সেই সুযোগকে আমরা গ্রহণ করতে পারব।
তিনি জানান, ৫৩ বছর ধরে যে চেষ্টা, সেই চেষ্টার পাশাপাশি গত ১৬ বছর ধরে যে সংগ্রাম সর্বোপরি জুলাই আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে রক্তপাত, প্রাণনাশ, মানুষের আত্মদান সেগুলোর কাছে আমাদের দায় আছে। আমাদের সেই দায়িত্বের জায়গা থেকেই আশা করি যে সকলেই তাদের নিজস্ব জায়গা থেকে এই কাঠামোগত পরিবর্তনগুলো যতটা অর্জন করা সম্ভব, সেজন্য সক্রিয় থাকবে। সেই আশা থেকেই আমাদের এই আলোচনা। আশা করি যে আপনাদের মতামত আমাদেরকে সাহায্য সহযোগিতা করবে।
আলোচনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ ছাড়াও সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।