সাহসী পোশাকে মুসলিম মডেল হালিমা অ্যাডেন

SHARE

মাত্র তিন বছর আগের কথা। হালিমা অ্যাডেন তখন কলেজ ছাত্রী। হঠাৎ সংবাদের শিরোনাম তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের সুন্দরী প্রতিযোগিতা ‘মিস মিনেসোটা’য় একজন প্রতিযোগী। প্রতিযোগী তো অনেকেই থাকেন। ব্যতিক্রম হলো তিনি হিজাবী।

খোলামেলা পোশাকে সুন্দরী প্রতিযোগীদের ভেতর আপাদমস্তক ঢাকা ছিলেন হালিমা। এর অর্থ এই নয়, হিজাব পরে অংশ নেওয়ার জন্যই তিনি মিস মিনেসোটা জিতেছিলেন। বরং সমস্ত ক্যাটাগরিতে অন্যদের হারিয়েই জয় পেয়েছিলেন। এমন সুন্দরীকে দেখে চোখ বড় বড় হয়ে গিয়েছিল অনেকের।

কিন্তু আবারো ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন সোমালি-আমেরিকান এই মডেল। প্রথমবারের মতো মার্কিন ম্যাগাজিন স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেড সুইমস্যুট-এর ফটোশুটে অন্যভাবে পোজ দিয়েছেন তিনি। পরেছেন হিজাব আর বুরকিনি। এমন পোশাকে নারী মডেল গত ৬৫ বছরের ইতিহাসে রেকর্ড।

আফ্রিকার কেনিয়ায় জন্ম হালিমার। সাত বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন। যুক্তরাষ্ট্রে আসার আগে কেনিয়ার একটি শরণার্থী শিবিরে শৈশব কেটেছে পরিবারের সঙ্গে। কেননা, ওই শরণার্থী শিবিরেই তাঁর জন্ম। যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন তাঁরা।

২০১৭ সালটি হালিমার জন্য সৌভাগ্যের বলা যায়। ওই বছর আন্তর্জাতিক মডেল ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান আইএমজি মডেলস-এ যোগ দেন হালিমা। বিশ্বের সুপার মডেলরা সেখানে চুক্তিবদ্ধ। ব়্যাপার কেনি ওয়েস্ট-এর ফ্যাশন লেবেল ‘ইজি’ অথবা আলবের্তো ফেরেত্তির হয়েও তিনি রানওয়েতে নেমেছেন। এ সময় বিশ্বের প্রথম হিজাব পরিহিত মডেল হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে পরিচিত হয়ে ওঠেন তিনি।

এই সময় মার্কিন নারী ম্যাগাজিন ‘অ্যালিউর’-এর প্রচ্ছদে স্থান পান হালিমা। এক বছর পর তাঁকে দেখা যায় ব্রিটিশ ম্যাগাজিন ‘ভোগ’-এর প্রচ্ছদে।

সম্প্রতি ম্যাগাজিনটির ফটোশুটে নিজের দেশ কেনিয়ায় আসেন হালিমা। ২১ বছর বয়সী এই মডেল আবারো ইতিহাস গড়েছেন। দেশটির ওয়াতামু সৈকতে গ্লামশুটে পরেছেন হিজাব আর বুরকিনি।

ছবিতে দেখা যাচ্ছে, সমুদ্র সৈকতে আকর্ষণীয় ভঙ্গিমায় কাত হয়ে শুয়ে আছেন হালিমা। ডান হাতের কনুইয়ে ভর করে ওপরে উঠে আছে মাথা। শরীরে প্রায় অর্ধেকাংশ পানির নিচে। মুখে মোহনীয় হাসি।

ফটোশুটের পর স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেড সুইমস্যুট-কে সাক্ষাৎকার দেন হালিমা। তাঁর সংগ্রামমুখর জীবনের শুরু আর উত্থানের গল্প স্থান পায় এতে।

হালিমা বলেন, ‘মনে পড়ছে, ছয় বছর বয়সে আমি এই দেশেই ছিলাম, শরণার্থী ক্যাম্পে। সেখান থেকে স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় যাওয়া, ফটোশুটে অংশ নিতে এখন আবার এই দেশে ফেরা, এমনকি এই যে সাক্ষাৎকার দিচ্ছি যে সৈকতে বসে- এসবের সবকিছুই সুন্দর। আর আমি মনে করি না এই গল্প কাউকে ওপর তুলতে পারে।’

এসআই সুইমস্যুট’ সম্পাদক এম জে দে বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি সৌন্দর্যের কোনো সীমারেখা নেই। আমি হালিমাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমি তাঁকে প্রেরণা হিসেবে বিবেচনা করি। একজন অ্যাম্বাসেডর হিসেবে তিনি ইউনিসেফের সঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতে তিনি একটি প্লাটফর্ম পাবেন।’

এম জে দে আরো বলেন, ‘আমার মতে, তিনি এই সময়ের সেরা সুন্দরীদের অন্যতম। কেবল বাইরে নয়, ভেতরেও। বুদ্ধিমত্তা, উৎসাহ আর সততা তাঁকে এই স্থানে নিয়ে এসেছে।

সূত্র : গ্ল্যামার ম্যাগাজিন