ফাইনালের আশা করছেন কি না—এমন প্রশ্নে মাশরাফি বিন মুর্তজার উত্তর খুবই সংক্ষিপ্ত। ‘নো কমেন্ট’। কিন্তু এরপর যে হাসিটা দিলেন, তাতে মনের ভেতরের ইচ্ছাটা পড়ে নিতে অসুবিধা হলো না। হ্যাঁ, ২০১২-এর পর বাংলাদেশ দলের চোখ এখন আবারও এশিয়া কাপের ফাইনালে।
মিরপুরে কাল শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে দুটি জিনিস পেল বাংলাদেশ দল। একটা তো ফাইনালের দরজা। আরেকটি আত্মবিশ্বাস। ভারতের কাছে হারের পর আরব আমিরাতের বিপক্ষে জয়েও বড় দলের প্রতাপ দেখাতে না পারায় বাংলাদেশের সামর্থ্য কিছুটা হলেও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল এই এশিয়া কাপে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি জয় মনের ভেতর জমে থাকা সব অস্বস্তি ধুয়ে দিয়ে আঁকল ফাইনালের স্বপ্ন।
ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে যাওয়ার পথে অধিনায়ক মাশরাফি সাব্বিরকে ডাকলেন ‘হাই পজিটিভ’ বলে। সাব্বির সব কথায় ‘পজিটিভ’ শব্দটা আনাতেই বোধ হয় ওই রসিকতা। তবে মাশরাফি রসিকতা করলেও সাব্বিরকে ‘মি. পজিটিভ’ ডাকাটা বোধ হয় ভুল নয়। ইতিবাচক মানসিকতা না থাকলে ২৬ রানে ৩ উইকেট পড়ার পর কি আর উইকেটে গিয়ে ও রকম ব্যাটিং করা সম্ভব!
সাব্বির ছিলেন বলেই মাশরাফিদের আশাটাও টিকে ছিল। অধিনায়ক স্পষ্ট করেই জানালেন কি ছিল তাঁর কাছে দলের চাওয়া, ‘সাব্বির সব সময় পরিষ্কার মাথায় খেলুক, সেটাই চাই। তিন নম্বরে যা করা দরকার সে প্রত্যেক ম্যাচেই তা করতে চায়। হয়তো সব সময় সফল হয় না। তিন উইকেট পড়লেও আমরা চেয়েছি ও খোলা মন নিয়ে খেলুক। খারাপ বল খারাপ বলই। সেটাকে ও কাজে লাগিয়েছে। ওই সময় ওই শটগুলো খেলে চাপ না সরালে হয়তো আমরা এই রানও করতে পারতাম না।’
অধিনায়ক ধন্যবাদ দিয়েছেন সাকিব আল হাসান আর মাহমুদউল্লাহকেও। সাকিবের কথাটা আলাদা করেই বলতে হয় কারণ, এই ম্যাচে ফিরে পাওয়া গেছে তাঁর অলরাউন্ডার সত্তা। তবে আর সবার জন্য এটা বড় খবর হলেও মাশরাফির জন্য নয়। সাকিব যে ফিরবেন, সেটা সম্ভবত জানাই ছিল অধিনায়কের, ‘সাকিবকে সব সময় মানুষই ভাবি আমি। এলিয়েন কখনো ভাবিনি। দলের জন্য যা করার, ও করে যাচ্ছে। খারাপ সময় আসতেই পারে। তবে ও সব সময়ই আমাদের দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়।’ অধিনায়ক নিশ্চিত, সাকিবের মতো মুশফিকুর রহিমও সময়মতো জ্বলে উঠবেন।
আগের দুই ম্যাচের তুলনায় কালকের উইকেটে ব্যাট করা কিছুটা সহজ ছিল। মাশরাফি তো মনে করেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং কালকের ম্যাচে রানটা দেড় শ পার হওয়া উচিত ছিল, ‘প্রথম দিনের উইকেটে একটু বেশি ঘাস থাকায় ব্যাটিং কঠিন ছিল। তবে আজ (গতকাল) এবং আগের ম্যাচেও রানটা ১৫০-১৬০ হতে পারত।’ তা ছাড়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে হবে ভারতে। মাশরাফি মনে করিয়ে দিলেন, ‘বিশ্বকাপ যেহেতু ভিন্ন কন্ডিশনে খেলতে হবে, সব ধরনের উইকেটেই খেলার অভ্যাস করাটা জরুরি।’
পরপর দুই ম্যাচ জিতে ফাইনালের স্বপ্ন এখন ভালোভাবেই দেখতে শুরু করেছে বাংলাদেশ দল। পরশু পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতলে পূরণ হয়ে যাবে সে স্বপ্ন। হারলেও অঙ্কের হিসাবে টিকে থাকবে সম্ভাবনা। তবে মাশরাফিরা এখন আর হার-টারের কথা ভাবছেন না। গত দুই ম্যাচ তো বটেই, হেরে যাওয়া ভারত ম্যাচ থেকেও নিচ্ছেন জয়ের ধারা ধরে রাখার প্রেরণা, ‘দলের সবার মানসিকতাই এখন ইতিবাচক। বিশ্বকাপের আগে আর একটা ম্যাচই আছে। সেটাও ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে খেলব।’
ভালো ওয়ানডে দলের স্বীকৃতি গত বছরই পেয়ে গেছে বাংলাদেশ দল। এবারের এশিয়া কাপ আর বিশ্বকাপ সুযোগ করে দিয়েছে টি-টোয়েন্টিতেও ভয়-জাগানিয়া দল হয়ে ওঠার। মাশরাফি জানেন এটা রাতারাতি সম্ভব নয়। তবে অসম্ভবও যে নয়, সেই বিশ্বাসটাও এখন জন্মে গেছে মনের জমিনে।