‘বিবাহিত ও বুড়োদের’ থেকে বের হতে পারছে না ছাত্রদল!

SHARE

আগামী আন্দোলনে চূড়ান্ত সাফল্য পেতে ‘বিবাহিত ও বুড়োদের সংগঠন’ এমন সমালোচনা থেকে ছাত্রদলকে বের করতে চাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এজন্যই তিনি ছাত্রদলের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকও করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন দেখা দিয়েছে- খালেদা জিয়া কি পারবেন ‘বিবাহিত ও বুড়োদের’ থেকে বের হতে? ছাত্রদলের সঙ্গে বৈঠকের সময় খালেদা জিয়া বলেছেন, অপেক্ষাকৃত তরুণ, অবিবাহিতদের নেতৃত্বে আনা হবে।image_96408_0

২০১২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর রাতে জুয়েল-হাবিব কমিটিতেও চমক দেখাতে চেয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। কিন্তু পারেননি। বিবাহিত, বুড়ো ও যাদের ছাত্রত্ব ছিল না তারাই ছিল ওই কমিটির চমক। এবারে ছাত্রদলের নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের অধিকাংশেই ‘বিবাহিত ও বুড়ো’।

ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন পর্যন্ত ১৯৯০-৯১ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া নেতারা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হওয়ার দৌড়ে আছেন। পাশাপাশি ২০০২-০৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া নেতারাও একই পদের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তবে এখন পর্যন্ত যারা এগিয়ে আছেন, তাদের কেউ নিয়মিত ছাত্র নন। অবশ্য বর্তমান কমিটিতে যারা আছেন, তারাও কেউ নিয়মিত ছাত্র নন। অনেকের বিরুদ্ধে কমিটি নিয়ে টাকা লেনদেন, সংস্কারপন্থী ও শিবির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। আবার কারো পরিবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত।

জানা গেছে, নতুন কমিটিতে নিজেদের অনুসারীদের দায়িত্বে আনতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের বেশ কয়েকটি পক্ষ তৎপর রয়েছে। তারা চাচ্ছেন নতুন কমিটিতে নিজেদের অনুসারীরা দায়িত্বে থাকুক।

এবারে ছাত্রদলের প্রার্থীদের দৌড়ের তালিকায় রয়েছেন- নূরুল ইসলাম নয়ন (ভোলা)। তিনি বিবাহিত, এক সন্তানের জনক। জুয়েল-হাবিব কমিটির কোনো পদে নেই। এর আগে টুকু-আলীম কমিটির কোনো পদে ছিলেন না। হেলাল-বাবু কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিলিমিনারি মাস্টার্সের স্টুডেন্ট। বৃহত্তর বরিশালের সবাই তার পেছনে কাজ করছেন।

সাইফুল ইসলাম ফিরোজ (ঝিনাইদাহ)। তিনি অবিবাহিত, বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি। টুকু-আলীম কমিটির সময় বহিষ্কৃর ছিলেন। হেলাল-বাবু কমিটির সয়ম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেক্রেটারি ছিলেন। তার আগের কমিটিতে কেন্দ্রের প্রচার সম্পাদক ছিলেন। জুয়েল-হাবিব ও আবেদ গ্রেফতারের পর কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ (নোয়াখালী)। তিনি বিবাহিত, দুই সন্তানের জনক। বর্তমান কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি। টুকু-আলীম কমিটির জয়েন সেক্রেটারি ও হেলাল-বাবু কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জয়েন্ট সেক্রেটারি ছিলেন। বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন একজন ছাত্রনেতার আস্থাভাজন হওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের পদ পান। এরপরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হেলথ ইকোনোমিক্সে মাস্টার্সে ভর্তি হন। জানা  গেছে, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন অসীম তার জন্য লবিং করছেন।

আবু সাঈদ। তিনি বিবাহিত, এক সন্তানের জনক। বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি, টুকু-আলীম কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও তার আগের কমিটির আইন সম্পাদক ছিলেন।

আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন (শরিয়তপুর)। তিনি বিবাহিত, তার বিবাহের অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়াও উপস্থিত ছিলেন। বর্তমান কমিটির কোনো পদে নেই। টুকু-আলীম কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। হেলাল-বাবু কমিটির সময়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেক্রেটারি ছিলেন। জানা গেছে, তার পেছনে কাজ করছেন আমান উল্লাহ আমান।

ইসহাক সরকার (ঢাকা)। তিনি বিবাহিত। বর্তমান মহানগর দক্ষিণের সভাপতি, এর আগে দক্ষিণের যুগ্ম-আহ্বায়ক ছিলেন। জানা গেছে, নাছির উদ্দিন পিন্টু জেলে থেকে তার জন্য কাজ করছেন।

আকরামুল হাসান (নরসিংদী)। তিনি অবিবাহিত। বর্তমান কমিটির জয়েন সেক্রেটারি। টুকু-আলীম কমিটির সময় বহিষ্কৃত ছিলেন। হেলাল-বাবু কমিটির সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জয়েন সেক্রেটারি ও তার আগে মুজিব হলের সভাপতি ছিলেন। টাকা নিয়ে কমিটিতে স্থান দেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

রাজিব আহসান (বরিশাল)। তিনি অবিবাহিত। বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। টুকু-আলীম কমিটির প্রচার সম্পাদক ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে তার পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত। তার বাবা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ছিলেন।

মামুনুর রশিদ মামুদ (নোয়াখালী)। তিনি অবিবাহিত। বর্তমান কমিটির জয়েন সেক্রেটারি। টুকু-আলীম কমিটির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তার আগের কমিটির সনিয়র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট  ও তার আগে জিয়া হলের সেক্রেটারি ছিলেন। তার বিরুদ্ধে শিবিরের অভিযো রয়েছে। জানা গেছে, তার জন্য কাজ করছেন বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী।

ওবায়দুল হক নাছির (টাঙ্গাইল)। তিনি বিবাহিত, একটি সন্তানের জনক। জানা গেছে, মেয়ের জন্মদিন পালনের সময় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। বর্তমান কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। টুকু-আলীম কমিটির সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক ছিলেন। এই কমিটির সময় টাকায় নিয়ে কমিটিতে স্থান দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ হলো, গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচির সময়ে টাকা আত্মসাত করেছেন। ছাত্রদল সূত্রে জানা গেছে, তার পেছনে কাজ করছেন সাবেক ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু।

ফেরদৌস আহমেদ মুন্না (চট্রগ্রাম)। তিনি অবিবাহিত। বর্তমান কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। টুকু-আলীম কমিটির কেন্দ্রের সংস্কতি বিষয়ক সম্পাদক ও হেলাল-বাবু কমিটির সময় কেন্দ্রের সদস্য ছিলেন। তার আগে জিয়া হলের সভাপতি ছিলেন। তার বিরুদ্ধে সংস্কারপন্থীর অভিযোগ রয়েছে।

মেয়েদের সবাই বিবাহিত। প্রত্যেকেরই সন্তান আছে। নাসিমা আক্তার কেয়া। বর্তমান কমটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক। বিবাহিত, সন্তানও আছে। স্বামী ব্যাংকার। অভিযোগ রয়েছে তিনি সিনিয়রদের সম্মান দেন না। চলতি বছরের জুলাই মাসে জিয়াউর রহমানের মাজারে সাবেক এমপিকে সবার সামনে কিল-ঘুষি দিয়ে লাঞ্ছিত করেছেন।

বিএনপির একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “বেগম জিয়া চান বিবাহিত, বয়স্কদের বাদ দিয়ে তরুণ নিয়মিত ছাত্রদের দিয়ে সংগঠনের কমিটি করতে। কিন্তু সেটা করা সম্ভব না-ও হতে পারে। কারণ, খালেদা জিয়াকে ধারণা দেয়া হয়েছে যে, এখন পর্যন্ত যারা নিয়মিত ছাত্র, তাদের কেউ সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে নেই।” তাই এখনো যারা অনিয়মিত হিসেবে ছাত্রত্ব ধরে রেখেছেন এবং বিয়ে করেননি, তাদের বিষয়ে খালেদা জিয়া চিন্তাভাবনা করছেন বলে ওই নেতা দাবি করেন।