আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) সংসদ সদস্যরা দলীয় প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন না। তবে সরকার দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে অংশ নিচ্ছেন -এমন অভিযোগ দলটির পৌরসভা নির্বাচনের প্রার্থী এবং তৃণমূল নেতাকর্মীদের। এছাড়া সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বধীন জাতীয় পার্টি দলীয় প্রতীক ‘লাঙ্গল’ নিয়ে ২৩৪ পৌর আসনের মধ্যে মাত্র ৭৬টিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে মাঠে তাদের তেমন দেখা মিলছে না। জাপার সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
নেতাকর্মীদের অভিযোগ, পৌর নির্বাচনে নামকাওয়াস্তে একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রধান সমন্বয়ক মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা কোনোদিন মিটিংও করেননি। পার্টির ৪২ জন প্রেসিডিয়ামের একজনও কোনো প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেননি।
দলটির প্রভাবশালী এক প্রেসিডিয়াম এবং সমন্বয় কমিটির সদস্য বলেন, শুনেছি কমিটিতে আমার নামও আছে। দলটির মহাসচিবকে অভিযোগ করে তিনি আরো বলেন, একেক বার একেক জনকে কমিটির দায়িত্ব দিচ্ছেন তিনি। এ বিষয়ে স্যার (এরশাদ) কোনো খেয়ালই করছেন না।
দলটির এক সাংগঠনিক সদস্য এ সমন্বয় কমিটির সদস্যের সামনেই তিনি বলেন, বুঝেন আমাদের দলের অবস্থা! কমিটির সদস্যই জানেন না তিনি কমিটির সদস্য।
সবকয়টা পৌরসভায় প্রার্থী দিতে না পারার প্রসঙ্গে দলটির এক কেন্দ্রীয় নেতা এবং দক্ষিণাঞ্চলের এক জেলা সভাপতি বলেন, কীভাবে প্রার্থী দেব। সাংগঠনিক সমস্যার কথা পার্টির চেয়ারম্যানকে বলা যায় না। বললেই তাকে কয়েকজন নেতা ঘিরে ধরেন।
প্রধান সমন্বয়ক মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা বলেন, দেশের কথা ও দলের কথা ভেবে সব পৌরসভায় প্রার্থী দেইনি। অনেক জায়গায় জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের প্রচারণায় বাধা দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। সম্প্রতি বাঘেরহাটের মোরেলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র প্রার্থী ও দলের মৎস্যজীবী পার্টির সভাপতি সোমনাথ দে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দ্বারা লাঞ্ছিত হয়েছেন।
এদিকে সরকার দলীয় প্রার্থী পক্ষে জাপার নেতাকর্মীরা প্রচারণা চালাচ্ছেন -এমন অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে লক্ষীপুরে (রায়পুর) জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য নোমান মিয়া বলেন, আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। স্বার্থান্বেষী মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
একই রকম অভিযোগ সম্পর্কে জানতে স্বেচ্চাসেবক পার্টির সভাপতি এবং নারায়ণগঞ্জ থেকে নির্বাচিত জাপার সংসদ সদস্য লেয়াকত হোসেন খোকাকে পাওয়া যায়নি। তাকে মোবাইল ফোনে না পেয়ে কেন্দ্রীয় অফিসের এক কর্মকতার কাছে জানতে চাইলে বলেন, ওনাকে (খোকা) তো স্যারও (এরশাদ) পায় না। আপনি পাবেন কিভাবে?
জানা যায়, অবকাশযাপনে দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বর্তমানে কক্সবাজারে অবস্থান করছেন। দলের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ পৌর নির্বাচনে কোনো ভূমিকাও রাখছেন না। পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু তার বাবার অসুস্থতার জন্য দেশের বাইরে আছেন।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ছোট ভাই এবং দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিএম কাদের বলেন, “আইনগতভাবে জাতীয় পার্টি বিরোধী দল নয়। তাই যারা সরকারকে অপছন্দ করে তারা ধানের শীষে ভোট দেবেন।”
দলের অস্পষ্ট রাজনীতির কারণে জাতীয় পার্টির প্রতি মানুষের আর আকর্ষণ নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
দলের নেতা-কর্মীদের মন্তব্য, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মতো পৌর নির্বাচনেও ভরাডুবিতে পড়তে যাচ্ছে দলটি। যদিও কেন্দ্রীয় নেতাদের আশা, সবাই মিলে চেষ্টা করলে বেশ কয়েকটা পৌরসভায় ভালো ফল করা যেত।
নেতা-কর্মীরা বলছেন, পৌর নির্বাচন হবে নৌকা-ধানের শীষ মধ্যে। লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে জাতীয় পার্টি মাঠে সুবিধা করতে পারবে না। এছাড়া জাতীয় পার্টি আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী পার্টির চেয়ারম্যান বিভিন্ন সভায় এমন দাবি করলেও সংগঠনের অবস্থা এর বিপরীত বলে জানান তারা।