সাম্প্রতিক যুদ্ধে ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রে ইসরায়েলের অন্তত পাঁচটি সামরিক ঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ। স্যাটেলাইট রাডারচিত্রের তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য প্রকাশ করেছে তারা। তবে এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি ইসরায়েল।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাডারচিত্র বিশ্লেষণ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক।
তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, ইরানের ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের উত্তর, দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলের পাঁচটি সামরিক স্থাপনায় সরাসরি আঘাত হানে। এর মধ্যে রয়েছে একটি বড় বিমানঘাঁটি, একটি গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ কেন্দ্র ও একটি লজিস্টিক ঘাঁটি।
টেলিগ্রাফ জানায়, এ ধরনের হামলার কথা আগে কখনো প্রকাশ্যে আসেনি। ইসরায়েল সরকারও বিষয়টি স্বীকার করেনি।
দেশটির সামরিক সেন্সরশিপের কারণে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশে বিরত রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যুদ্ধের প্রথম আট দিন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সক্রিয় থাকলেও ধীরে ধীরে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার হার বাড়তে থাকে। এর কারণ হিসেবে গবেষকেরা ইসরায়েলের ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্রের সীমিত ব্যবহার এবং ইরানের আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগের কথা বলছেন।
ইসরায়েলের আরো ৩৬টি স্থানে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার প্রমাণ মিলেছে।
এসব আঘাত আবাসিক ভবন ও শিল্পকাঠামোতেও উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করেছে বলে জানায় টেলিগ্রাফ।
ইরানের ছোড়া শত শত ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে বেশির ভাগ প্রতিহত করতে সক্ষম হলেও কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেদ করে। এরপরও প্রাণহানি তুলনামূলকভাবে কম হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২৮ জন ইসরায়েলি নাগরিক নিহত হয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, উন্নত সতর্কতাব্যবস্থা ও সাধারণ মানুষের শেল্টার ব্যবহারের কারণেই প্রাণহানি কম হয়েছে।
যুদ্ধে ইসরায়েলকে সহায়তা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি তাদের দুটি থাড প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করেছে এবং লোহিত সাগরে অবস্থানরত মার্কিন যুদ্ধজাহাজ থেকেও ক্ষেপণাস্ত্রবিধ্বংসী ইন্টারসেপ্টর ছোড়া হয়েছে।
যুদ্ধ চলাকালে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অন্তত ৩৬টি থাড ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, যার প্রতিটির দাম প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ ডলার।
টেলিগ্রাফ জানায়, তারা ইসরায়েলের সেনাবাহিনী আইডিএফের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। আইডিএফের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘ঘাঁটিতে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে কিছু বলা হবে না। তবে হামলার সময় ইউনিটগুলো তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে সক্ষম ছিল।’
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ইসরায়েল সরকার যে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তুলে ধরছে, বাস্তবতা তার চেয়ে অনেক বেশি গুরুতর হতে পারে। অন্যদিকে, যুদ্ধের ১২ দিন পেরিয়ে গেলেও ইসরায়েল ও ইরান—দুই দেশই নিজেদের বিজয়ী দাবি করে চলেছে।