হিজড়াদের দেখিয়ে পয়সা কামিয়ে গেছে এনজিওরা

SHARE

hijraভারতে যে হিজড়ারা আছেন বা যারা লিঙ্গ পরিবর্তন করিয়েছেন, সেই ‘ট্রান্সজেন্ডার’দের দেশের সুপ্রিম কোর্ট তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল গত বছরের এপ্রিল মাসে।

সেই ঐতিহাসিক রায়ের পর এক বছরেরও বেশি সময় কেটে গেছে, আর সেই রায়ের নির্দেশ অনুযায়ী স্কুল-কলেজে ভর্তির ফর্ম থেকে শুরু করে চাকরির কোটা ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে তৃতীয় লিঙ্গভুক্তদের জন্য আলাদা সংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে ধীরে ধীরে।

সুপ্রিম কোর্টের দেয়া সেই স্বীকৃতিকে উদ্যাপন করতে প্রায় ৫০০ ট্রান্সজেন্ডার আজ দিল্লিতে এক সমাবেশে জড়ো হয়েছিলেন – যেখানে তারা অবশ্য বলছেন তাদের লড়াই এখনও অনেকটাই বাকি।

২০১৪র ১৫ই এপ্রিল ভারতে ট্রান্সজেন্ডারদের কাছে একটি ঐতিহাসিক দিন, কারণ সে দিনই তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে তাদের নাগরিক অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছিল দেশের শীর্ষ আদালত।

তৃতীয় লিঙ্গ মানে শুধু ফর্মে পুরুষ বা মহিলার পাশাপাশি তৃতীয় আর একটি অপশন-মাত্র নয়, শিক্ষা-চাকরি-আবাসন ইত্যাদি সব ক্ষেত্রেই তাদের বিশেষ সুযোগের ব্যবস্থা করতেও রাষ্ট্রকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। দিল্লিতে ট্রান্সজেন্ডার অ্যাক্টিভিস্ট গৌতম ভান বিবিসিকে আজ বলছিলেন সেই প্রক্রিয়া সবেমাত্র শুরু হয়েছে।

তার কথায়, “চটজলদি সব বদলে যাবে, এটা আশা করাটা বোধহয় বাড়াবাড়ি। তবে আশার কথা হলো, ট্রান্সজেন্ডার আন্দোলনের মোমেন্টোম রাষ্ট্রকেও নাড়া দিতে শুরু করেছে – জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টেও তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি থাকছে।”

“এমন কী সম্প্রতি সরকার যে ‘সবার জন্য আবাসন’ ক্যাম্পেইন শুরু করেছে তাতেও ট্রান্সজেন্ডারদের এমন একটি বিশেষ সম্প্রদায় হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে যাদের পক্ষে মাথার ওপর ছাদ জোটানোটা কঠিন-” বলছিলেন তিনি।

হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডারদের সামাজিক স্বীকৃতি কতটা বেড়েছে তা বলা কঠিন – তবে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি মিললে ধীরে ধীরে সামাজিকভাবেও তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে, দিল্লির জমায়েতে এটাই ছিল গরিষ্ঠ অংশের মতো।

সম্প্রতি দেশের প্রথম ট্রান্সজেন্ডার প্রিন্সিপাল হিসেবে একটি পশ্চিমবঙ্গের একটি সরকারি কলেজের দায়িত্ব নিয়েছেন মানবী বন্দ্যোপাধ্যায় – তার রাজ্যে যে কাজকর্ম হচ্ছে তাতে তিনি অবশ্য আশাবাদী।

তিনি বলছিলেন, “পশ্চিমবঙ্গ সরকার সারা দেশের মধ্যে প্রথম ট্রান্সজেন্ডার উন্নয়ন বোর্ড গঠন করেছে এবং তাদের শিক্ষা বা অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা উত্যাদি যা যা সুপ্রিম কোর্ট বলেছে সেই লক্ষ্যে কাজও শুরু করেছে।”

আসলে ট্রান্সজেন্ডাররা এতদিন যে বঞ্চনার শিকার হয়েছেন, তাতে কলেজের দোরগোড়া অবধি পৌঁছনোটাও তাদের কাছে বিরাট এক অর্জন বলে মনে করেন মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়!

তার মতে, “এতদিন বিভিন্ন এনজিও হিজড়াদের সামনে রেখে শুধু পয়সা কামিয়ে গেছে – ঠিক যেভাবে বাঁদরওলারা বাঁদর নাচিয়ে পয়সা কামায়। সেই অবস্থা ধীরে ধীরে পাল্টাচ্ছে, এটাই আশার কথা।”

তবে আদালতের স্বীকৃতির পর এখন পরের লড়াইটা হলো ট্রান্সজেন্ডারদের আসল অধিকার আদায়ের, মনে করেন গৌতম ভান।
তার কথায়, “কাগজে-কলেমে এখন তাদের অধিকারটা আছে – কিন্তু দৈনন্দিন জীবনে স্কুলে ভর্তিই বলুন, চাকরির কোটাই বলুন বা পেনশন, সেই সব জায়গায় ট্রান্সজেন্ডাররা তাদের প্রাপ্য অধিকারটুকু নিশ্চিত করতে পারছেন কি না সেটাই কিন্তু তাদের পরবর্তী লড়াই। এখন লড়াইটা সেখানেই চলছে, আর সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ!” –বিবিসি