তীব্র বাদানুবাদের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতারা ৬০ হাজার অভিবাসীকে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় দিতে রাজি হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার সকালে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে দীর্ঘ বৈঠকের পর তারা এই আপসরফায় পেঁৗছান। তবে কোনো দেশের ওপরই নির্দিষ্ট কোটা মেনে চলার বাধ্যবাধকতা এই চুক্তিতে নেই। এ কারণে এ চুক্তির তীব্র সমালোচনা করেছে ইতালি। উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় দেওয়া নিয়ে গতকাল বৈঠকে বসেন ইইউ নেতারা।
বর্তমানে ইতালি ও গ্রিসে থাকা ৪০ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশীকে দুই বছরের মধ্যে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় দেওয়া হবে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ জানান, ‘আরও ২০ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী, যারা সিরিয়া ও ইরাক থেকে এসে বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে অবস্থান করছেন, তাদের ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নতুন করে আশ্রয় দেওয়া হবে।’ কোন দেশ কতজন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে গ্রহণ করবে তার চূড়ান্ত হবে জুলাই মাসের শেষে।
ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক জানান, আসলে অভিবাসন সমস্যা মোকাবেলায় লড়াই করে চলা ‘সামনের সারির দেশগুলোর সঙ্গে সংহতি’ প্রকাশের লক্ষ্যেই এই চুক্তিতে পেঁৗছেছে ইউরোপীয় দেশগুলো।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী মাত্তেও রেনজি এ পরিকল্পনাকে ‘চলনসই’ বলে মন্তব্য করলেও বাধ্যতামূলক কোটা পদ্ধতি না থাকায় তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলো অভিবাসন সমস্যা মোকাবেলায় দায়িত্ব নিতে চাচ্ছেন না বলে সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘আজকের চুক্তি সরলভাবেই একটা কথা জানিয়ে দিয়েছে। ইতালিতে যারা পা রাখবে এবং যে দেশে তারা পেঁৗছাতে পেরেছে, আশ্রয়ের প্রয়োজনে তাদের সে দেশেই রাখতে হবে।’
এ ধরনের নীতি একেবারেই ত্রুটিপূর্ণ। তিনি মনে করেন, অভিবাসন সমস্যাকে ইউরোপীয় সীমান্তের সমস্যা মনে না করা বড় এক রাজনৈতিক ভুল। শুধু একটি দেশের পক্ষে এ সমস্যা মোকাবেলা সম্ভব নয়, এটা ইউরোপীয় দেশগুলোকে স্পষ্টভাবেই বুঝতে হবে।
ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট জঁ-ক্লদ জাঙ্কার বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে বেশ দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ‘স্বেচ্ছা ভিত্তিতে নাকি আবশ্যক কোটা ভিত্তিতে তা কোনো বিষয়ই নয়, আসলে ৬০ হাজার শরণার্থীকে এ চুক্তি সহযোগিতা করতে পারছে কি-না সেটাই বড়। ‘
তবে কোটা পদ্ধতি বাধ্যতামূলক করার বিরুদ্ধে সোচ্চার পোল্যান্ড, চেক প্রজাতন্ত্র, স্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি এবং বেশ কয়েকটি দেশ। তাদের দাবি, অভিবাসীদের গ্রহণ করার মতো অর্থনৈতিক ক্ষমতা এখনও এসব সাবেক কমিউনিস্ট ব্লকভুক্ত দেশগুলোর নেই। বুলগেরিয়া ও হাঙ্গেরির স্থল সীমান্ত দিয়ে হাজার হাজার অভিবাসী ইউরোপে প্রবেশ করে। তাই তারা এই অভিবাসী গ্রহণের হাত থেকে রেহাই পেয়েছে। তবে ব্রিটেন এই পরিকল্পনা গ্রহণ করেনি।