কোপা আমেরিকা ফুটবলের কোয়ার্টার ফাইনালে কলম্বিয়ার বিপক্ষে টাইব্রেকারে নাটকীয়ভাবে জিতে সেমিফাইনালে উঠেছে আর্জেন্টিনা। চিলির ভিনা দেল মারে বাংলাদেশ সময় আজ শনিবার ভোরে তৃতীয় কোয়ার্টার ফাইনালের এই খেলা অনুষ্ঠিত হয়।
নির্ধারিত সময়ের খেলা গোলশূন্য থাকার পর টাইব্রেকারে লিওনেল মেসির দল জিতেছে ৫-৪ গোলে।
টাইব্রেকারে কলম্বিয়ার প্রথম তিন শটে হামেস রদ্রিগেস, রাদামেল ফালকাও ও হুয়ান কুয়াদরাদো লক্ষ্যভেদ করেন। আর্জেন্টিনার অধিনায়ক মেসি, এসেকিয়েল গারায়, এভার বানেগাও প্রথম তিন শটে বল জালে পাঠান।
কলম্বিয়ার চতুর্থ শটে ক্রসবারের অনেক ওপর দিয়ে বল মেরে দেন লুইস মুরিয়েল। তবে পরের শটে এসেকিয়েল লাভেস্সি লক্ষ্যভেদ করলে ৪-৩ ব্যবধানে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা।
পঞ্চম শটে এদউইন কারদোনা কোনোমতে গোল পাওয়ায় আশা টিকে ছিল কলম্বিয়ার। পরের শটে লুকাস বিলিয়া গোল পেলেই জিতে যেত আর্জেন্টিনা। কিন্তু তিনি ডান পোস্টের বাইরে দিয়ে শট নেওয়ায় ৪-৪ গোলে সমতায় থাকা টাইব্রেকার গড়ায় সাডেন ডেথে।
নাটকের এখানেই শেষ নয়! সাডেন ডেথে কলম্বিয়ার হুয়ান সুনিগার শট ঠেকিয়ে দেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক সের্হিও রোমেরো। আবার সুযোগ আসে আর্জেন্টিনার সামনে; কিন্তু মার্কোস রোহোর শট গিয়ে লাগে ক্রসবারে!
কলম্বিয়ার জেইসন মুরিয়ো পরের শট মেরে দেন ক্রসবারের ওপর দিয়ে। পেনাল্টি শুটআউটে জেতার তৃতীয় সুযোগটি আর নষ্ট করেনি টুর্নামেন্টের ১৪ বারের চ্যাম্পিয়নরা। কার্লোস তেভেস লক্ষ্যভেদ করলে উল্লাসে ফেটে পড়ে আর্জেন্টিনার খেলোয়াড় আর সমর্থকরা।
এর আগে নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলায় কলম্বিয়ার গোলরক্ষক দাভিদ অসপিনার দৃঢ়তায় গোল-বঞ্চিত থাকতে হয় জেরার্দো মার্তিনোর দলকে।
চিলির ভিনা দেল মারে পরিপূর্ণ স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরুতেই নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় আর্জেন্টিনা। ম্যাচের দশম মিনিটে বল নিয়ে বিপজ্জনক গতিতে আক্রমণে গিয়েছিলেন মেসি। বাঁয়ে ডি-বক্সে আনহেল দি মারিয়ার দিকে বল বাড়িয়ে আরও এগিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তবে দি মারিয়া আর তা ফেরত পাঠাতে পারেননি।
১৯তম মিনিটে ডি মারিয়ার কর্নার থেকে অবশ্য বল এসে পড়েছিল ডি-বক্সে থাকা মেসির পায়ে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে শট না নিতে পারায় গোলের দেখা পাননি বার্সেলোনার এই তারকা। পাঁচ মিনিট পর মেসির বাড়ানো বল থেকে দি-মারিয়ার ক্রসে সের্হিও আগুয়েরো মাথা ছোঁয়ালেও বল যায় ক্রসবার উচিয়ে।
২৫তম মিনিটে আর্জেন্টিনার গোলের সবচেয়ে ভালো সম্ভাবনা দারুণ দক্ষতায় ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক দাভিদ অসপিনা। ডান দিক থকে হাভিয়ের পাস্তোরের নিচু ক্রসে খুব কাছ থেকে নেওয়া আগুয়েরোর শট পা দিয়ে ঠেকিয়ে দেওয়ার পর ফিরতি বলে মেসির হেডও দুর্দান্ত ভঙ্গিমায় হাত দিয়ে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন তিনি।
বিরতির কিছু আগে লুকাস বিলিয়ার শটও কলম্বিয়ার গোলে থাকেনি। প্রথমার্ধে গোলের কোনো ভালো সুযোগই তৈরি করতে পারেনি রক্ষণাত্মক খেলা কলম্বিয়া। বিরতির পরও গোল করার চেয়ে গোলপোস্ট সামলানোর দিকেই বেশি মনোযোগ দেয় তারা।
ম্যাচের ৫২তম মিনিটে মেসি বুদ্ধিদীপ্ত লম্বা পাস বাড়িয়েছিলেন দি মারিয়াকে। বিপদ বুঝতে পেরে গোল ছেড়ে বেরিয়ে এসে তা বিপদমুক্ত করেন অসপিনা। ৬৭তম মিনিটে কর্নার থেকে কলম্বিয়ার জ্যাকসন মার্তিনেসের হেড রুখতে কোনো সমস্যা হয়নি গোলরক্ষক রোমেরোর। ৭৮তম মিনিটে আর্জেন্টিনার এভার বানেগার দূরপাল্লার শট লাগে ক্রসবারের কোণায়।
দুই মিনিট পর আবার কলম্বিয়াকে রক্ষা করেন গোলরক্ষক অসপিনা। কর্নার থেকে বল পেয়ে নিকোলাস ওতামেন্দির আচমকা শট দারুণ দক্ষতায় ঠেকান তিনি, বল ডান পোস্টের ভেতরের দিকে লেগে ফিরে আসে।
৮৮তম মিনিটে বদলি হিসেবে নামা এসেকিয়েল লাভেস্সির লম্বা পাস বিপদমুক্ত করতে দিয়ে নিজেদের জালেই প্রায় ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন ক্রিস্তিয়ান সাপাতা; তবে শেষ পর্যন্ত আর বিপদ হয়নি।
যোগ করা সময়ে কর্নার থেকে মেসি লক্ষ্যভ্রষ্ট হেড নিলে হতাশা নিয়েই নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষ করে আর্জেন্টিনা।
টুর্নামেন্টের নক আউট পর্যায়ে একমাত্র ফাইনাল ছাড়া অন্য কোনো ম্যাচে অতিরিক্ত সময় না থাকায় খেলা সরাসরি গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে আর কলম্বিয়াকে রক্ষা করতে পারেননি অসপিনা। বরং সারা ম্যাচে প্রায় অলস সময় কাটানো রোমেরো টাইব্রেকারে একটি শট ঠেকিয়ে আর্জেন্টিনাকে শেষ চারে ওঠানোয় দারুন ভূমিকা রাখেন।
সেমি-ফাইনালে ১৯৯৩ সালে শেষবার কোপা আমেরিকার শিরোপা জেতা আর্জেন্টিনা খেলবে ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ের বিজয়ী দলের বিপক্ষে।