বেশি দামের লোভে চীন থেকে আমদানি করা রসুন ভারতে পাচার করছে একটি চক্র। যশোর ও সাতক্ষীরার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে এই রসুন পাচার হচ্ছে। সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা পাচার চক্রের ১৭ জনকে শনাক্ত করেছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে জমা দেওয়া এক প্রতিবেদনে ওই সংস্থা এ কথা জানায়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের সঙ্গে যশোর জেলার যে ৯৮ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা রয়েছে তার ৭০ কিলোমিটারে কাঁটাতারের বেড়া। বাকি ২৮ কিলোমিটারে কাঁটাতার নেই। কিছু চোরাকারবারি শার্শা উপজেলার অগ্রভুলেট, পাঁচভুলেট, গোগা, কালিয়ানী সীমান্ত দিয়ে ভারতে রসুন পাচার করছে।
এতে আরও বলা হয়, রসুনের বার্ষিক ৫ লাখ টন চাহিদার মধ্যে ৪ লাখ ৩০ হাজার টন উৎপাদিত হচ্ছে দেশে। বাকি ৭০ হাজার টনের চাহিদা মেটাতে হয় আমদানি করে। দেশে চায়না রসুনের বিশেষ চাহিদা রয়েছে। ভারতেও রয়েছে চায়না রসুনের চাহিদা। সেখানে রসুনের কেজি বাংলাদেশের চেয়ে প্রায় ২০ টাকা বেশি। তাই সীমান্ত এলাকা দিয়ে চায়না রসুন ভারতে পাচার হচ্ছে। পাচার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। প্রসঙ্গত, গতকাল ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি চায়না রসুন বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা। রোজা শুরু হওয়ার আগে দর ছিল ৮০ থেকে ৮৫ টাকা।
পাচারে জড়িত ১৭ জন: গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সাতক্ষীরার পাচারকারীদের মধ্যে পলাশপোলের বাসিন্দা আল-ফেরদৌস (আলফা) চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে চীনা রসুন আমদানি করে তা ভারতে পাচার করেন। অন্যরা সাতক্ষীরার সুলতানপুর বড় বাজারের ব্যবসায়ী। তারা হলেন মিম ফিশের মালিক আমিনুর রহমান, রোকেয়া ভাণ্ডারের রওশন আলী, সাবিক স্টোরের কামরুজ্জামান মুকুল ও আক্তার হোসেন, খোকন এন্টারপ্রাইজের গোলাম মোস্তফা ওরফে খোকন, মামা-ভাগ্নে ভাণ্ডারের জহুরুল ইসলাম, খান ইন্টারন্যাশনালের শহিদুল ইসলাম ও সরদার ভাণ্ডারের রাজু আহমেদ।
সাকিব স্টোরের মালিক কামরুজ্জামান মুকুল সাতক্ষীরা জেলা চেম্বারের সদস্য ও সুলতানপুর বড় বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক। স্থানীয়ভাবে কাস্টম মুকুল হিসেবে পরিচিত এ ব্যবসায়ী বলেন, তিনি পাইকারি দরে সুলতানপুর বাজারে রসুন বিক্রি করেন। চোরাকারবারের সঙ্গে তার জড়িত থাকার অভিযোগ একেবারেই ঠিক নয়। তবে তার কাছ থেকে কেউ রসুন কিনে বাইরে পাচার করে থাকতে পারে।
জানতে চাইলে আল-ফেরদৌস (আলফা) সমকালকে বলেন, বাংলাদেশের তুলনায় ভারতের বাজারে চায়না রসুনের দামের বেশ ব্যবধান থাকায় এখান থেকে পাচার হওয়ার বিষয়টি সঠিক। তবে তিনি এ কাজে জড়িত নন। তিনি জানান, পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা তার ব্যবসা।
যশোরের পাচারকারীদের মধ্যে সিরাজুল ইসলামের ছেলে মুকুলের বাড়ি বেনাপোল। অন্য সাতজন যশোরের শার্শা উপজেলার বাসিন্দা। তারা হলেন পচা ঘোষের ছেলে অশোক, রবিউল সরদারের ছেলে নুহু সরদার, আছের উদ্দিনের ছেলে হযরত, রবিউল ইসলামের ছেলে নেছার উদ্দিন, কাদের নাপিতের ছেলে হাফিজুর, মহব্বতের ছেলে আয়ের আলী ও নবিস উদ্দিনের ছেলে তোফাজ্জেল।
রসুন পাচারের বিষয়ে সরল স্বীকারোক্তি দেন নুহু সরদার। তিনি বলেন, বেশি দামের জন্য ভারতে রসুন পাঠানোর বিষয়টি সঠিক। তবে এখন বর্ডার ভালো না যাওয়ায় বেশ কিছু দিন বন্ধ আছে। শুধু রসুন নয়, বর্ডার এলাকায় বাড়ি হওয়ায় তিনি ভারত থেকে গরু এনেও এখানকার বাজারে বিক্রি করেন। তবে বর্ডারে এখন কড়াকড়ি হওয়ায় সপ্তাহে সর্বোচ্চ ৫০টি গরু আনতে পারছেন।