ঈদকে সামনে রেখে সোমবার সব স্টেক-হোল্ডারদের নিয়ে একটি সভা করবে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। এ দিন ঈদে ঘরমুখো মানুষের জন্য নেওয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে অবহিত করা হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এবার ঈদে মহাসড়কগুলিতে কোনো ভোগান্তি হবে না বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, আসন্ন ঈদে ঘরমুখো মানুষের নিরাপদে বাড়ি ফেরা, ঢাকা মহানগরীর প্রবেশ এবং বহির্গমন পয়েন্টগুলো যানজট মুক্ত রাখা, মহাসড়কে যানজট মোকাবেলা, সড়ক নিরাপত্তাসহ অন্যান্য বিষয়ে আমরা সক্রিয় রয়েছি।
তিনি বলেন, দেশব্যাপী সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলীদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এখন দেশব্যাপী মহাসড়কগুলো যান চলাচলের উপযোগ রয়েছে।
রোববার জাতীয় সংসদে ৩০০ বিধিতে দেওয়া বিবৃতিতে তিনি এ সব কথা বলেন।
ওয়াবদুল কাদের বলেন, পদ্মা সেতুতে যুক্ত হবে চার লেন। ইতোমধ্যে, পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।
তিনি বলেন, পদ্মাসেতুর কালো মেঘ কেটে এখন আলো ঝলমল করছে। পদ্মার দু’পাড়ে পদ্মায় এখন সৃষ্টির উৎসব। চলছে, নির্মাণের বিশাল কর্মযজ্ঞ। আগামী অক্টোবরে শুরু হতে যাচ্ছে মূল পাইলিংয়ের কাজ।
পদ্মাসেতু নির্মাণ অগ্রগতি বিষয়ে যোগাযোগমন্ত্রী বলেন, ২ হাজার ৪ টন ক্যাপাসিটির হ্যামার এখন পদ্মাপাড়ে চলে এসেছে। অক্টোবর হতে শুরু হতে যাচ্ছে মূল পাইলিংয়ের কাজ। এরই মধ্যে শুরু হয়ে যাবে নদী শাসনের মূল কাজ। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে পদ্মাসেতুতে চারলেন মহাসড়ক যুক্ত হবে।
তিনি বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চারলেন প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ মহাসড়কের ১৯২ কিলোমিটারের মধ্যে ১৪০ কিলোমিটারের কাজ শেষ হয়েছে। ঢাকা-জয়দেবপুর চারলেনের কাজও শেষ পর্যায়ে। আগামী ঈদে এসব মহাসড়কে কোনো দুভোগ, ভোগান্তি থাকবে না।
মেট্রোরেল সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, নতুন প্রজন্মের যোগাযোগের নেটওয়ার্ক মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজও এগিয়ে চলছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ধাপে ধাপে ৮টি টেন্ডার আহ্বান করা হবে। এরপর আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে মেট্রোরেলের কাজ শুরু হবে।
রাজধানীর যানজট প্রসঙ্গ তুলে ওবায়দুল কাদের বলেন, যানজট নগর জীবনের সবচেয়ে বড় বিড়ম্বনার নাম। এটা আমার একার পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এতে অনেকগুলো মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় দরকার। সবার সমন্বিত পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে আমরা আশা করি স্বস্তি দিতে পারবো।
সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনার কথা তুলে তিনি বলেন, সড়ক-মহাসড়কে এখনো ঝরছে তাজা প্রাণ। ইতোমধ্যে, ১৪৪টি দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থান চিহ্নিত করে সড়ক প্রসস্তকরণের কাজ এগিয়ে চলছে।
তিনি বলেন, গত ১৫ জুন ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে চার দেশের যোগাযোগমন্ত্রী ও সচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের সড়ক পরিবহনমন্ত্রীদের সভা ভুটানে অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ উন্নয়ন প্রসঙ্গে পরিবহনমন্ত্রী বলেন, মধ্যমআয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার যে লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি, তা সফল করতে চাই। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন অনেক বেশি সুদৃঢ়। আঞ্চলিক ও উপআঞ্চলিক উদ্যোগগুলোর প্রতি আমাদের সরকারের রয়েছে সুদৃঢ় আস্থা ও সমর্থন।
মন্ত্রী বলেন, সার্ক ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় একটি অভিন্ন সড়ক নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার সর্বপ্রথম ভাবনাটি ভেবেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রীর ভাবনা আজ পল্লবিত হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চার প্রতিবেশী সন্দেহ-সংশয়ের দেওয়াল ভেঙে নির্মাণ করতে যাচ্ছে, সম্পর্কের এক সোনালী সেতুবন্ধ।
সড়ক পরিবহনমন্ত্রীর দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় ঢাকা-কাঠমাণ্ডু সরাসরি বাস সার্ভিস চালু এবং নেপাল কর্তৃক মংলা সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের বিষয়টি গুরুত্ব পায়। গত ১৬ জুন ভুটানের রাজার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয়। এ সময় ভুটানের রাজা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান এবং বলেন, ‘তিনি আমার মাদার ফিগার’। তিনি প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে বাংলাদেশে তার একমাত্র বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করেন।
এ সময় আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ঢাকা-থিম্পু সরাসরি বাস সার্ভিস চালু, ঢাকা-শিলং-গৌহাটি বিদ্যমান বাস সার্ভিস সম্প্রসারণ করে ভুটানের সামধ্রুপ ঝংকার পর্যন্ত চালু এবং ভুটান কর্তৃক সৈয়দপুর বিমান বন্দর ও মংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের জন্য প্রস্তাব করা হয়।
এ ছাড়া ভুটানের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ হতে খাদ্য, গার্মেন্টস, নির্মাণ সামগ্রীসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি ও বাংলাদেশে ফলমূল ও বিদ্যুৎ রফতানির প্রস্তাব দেওয়া হয়।
চুক্তিটি সইয়ের মধ্য দিয়ে চার দেশের নির্ধারিত রুটে ব্যক্তিগত গাড়ি, পণ্য এবং যাত্রীবাহী পরিবহন চলাচল করতে পারবে। এতে চারদেশের মানুষের মধ্যে পিপল-টু-পিপল কন্ট্রাক্ট প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটবে, যা দেশগুলোর অর্থনীতিতে সঞ্চার করবে গতিময়তা।