শেরে বাংলার গ্যালারির দিকে তাকিয়ে সেই কথাটাই মনে হলো৷ গায়ে হলুদ-কালো ডোরাকাটা৷ শরীর ঘাম আর চোখের জলে মাখামাখি৷ হাতে ধরা সবুজ লালা জাতীয় পতাকা বিরামহীন ভাবে উড়িয়ে চলেছেন দুই বাঘ- শোয়েব আর মিলন৷
কারা এই শোয়েব আর মিলন?
এখানে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেটের দুই বাঘ হলো মিলন আর শোয়েব৷’ সোজা করে বললে তারাই এ পার বাংলার সেরা দুই ক্রিকেট সমর্থক৷
ভারতের যেমন সুধীর-গৌতম, পাকিস্তানের যেমন চাচা বা শ্রীলঙ্কার পার্সি অভয়শেখরা, বাংলাদেশের তেমনই মিলন-শোয়েব৷
পেশায় মোটর মেকানিক শোয়েব৷ বৃহস্পতিবার প্রথম ম্যাচে স্টেডিয়ামে যাওয়ার আগে বাড়িতে বাঘ সাজতে সাজতেই বললেন, ‘ভারতের সুধীর গৌতমের শচিন-ভক্তি দেখেই প্রেরণা পেয়েছিলাম৷’
মিলন আবার একটা সেলুন চালান৷ প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ের পর অবশ্য কথা বলার মতো অবস্থা ছিল না৷ আনন্দে কাঁপছিলেন৷ তার মধ্যেই বলে দিলেন, ‘দেশের হয়ে পতাকা ওড়াই, কোনো কষ্টই মনে হয় না৷ আর যখন দেশ এভাবে জেতে, কখন মনে হয় সারা জীবন এভাবেই দেশের পতাকা হাতে থাকতে পারি৷’
মিলনের গল্পটা একটু অন্যরকম৷ জুনিয়র পর্যায় পর্যন্ত খেলতেন৷ আর এগোতে পারেননি৷ কিন্তু সাধ আর সাধ্যের ফারাকটা থেকেই গিয়েছে৷ তবু দমানো যায়নি৷ বাইশগজে না পেরে গ্যালারি মাতাতে নেমে পড়েছেন৷ শোয়েব আবার মোটর মেকানিক বলে টিমে আলাদা কদর৷ তামিম, মাশরাফিদের গাড়ির সমস্যা হলে তার ডাক পরে৷
ম্যাচের আগে ঘণ্টা দু’য়েক করে বাঘ সাজার মেক আপ, আবার পরে রং তুলতে ঘণ্টা খানেক৷ এ ভাবেই শুধু ঢাকা নয়, তারা ঘুরে বেড়াচ্ছেন সারা বিশ্বে৷ অস্ট্রেলিয়া-নিউ জিল্যান্ডের বিশ্বকাপ থেকে শ্রীলঙ্কা বা জিম্বাবুয়ে, সব জায়গাতেই দেখা মিলছে কোনো না কোনো টাইগারের৷
শুধু মিলন-শোয়েবই নয়, বাংলাদেশ ক্রিকেট এখন সমর্থনেরও নতুন ভাষা লিখছে৷ জন্ম দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট সাপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন৷ ইংল্যান্ডের বার্মি আমি, ভারতের ভারত আর্মির মতো সমর্থকদের সংগঠন দেখেই তৈরি বাংলাদেশের ‘বিসিএসএ’৷
বিসিকেএ-র কর্ণধার জুনেইদ পাইকার বলছিলেন বছর তিনেক আগে তাঁদের সংগঠন তৈরির ইতিহাসের কথা, ‘বিশ্বের প্রায় সব ক্রিকেট টিমেরই সমর্থকদের একটা সংগঠন আছে৷ আর আমাদের বাংলাদেশের সমর্থকদের আবেগের কোনো খামতি নেই৷ তাই ভাবলাম, এই আবেগকে আলাদা আলাদা না রেখে এক সুতোয় বাঁধলে কেমন হয়৷’
সেই ভাবনা থেকে জন্ম নিয়ে দিব্যি চলছে বিকেএসএ৷ গায়ে দেশের জার্সি৷ কখনও গানছেন, কখনও ড্রাম বাজাচ্ছেন৷ শুধু মাঠে সমর্থনই নয়, সারা বছর ক্রিকেট নিয়ে প্রদর্শনী, কুইজ শো-র মতো নানা রকম অনুষ্ঠানও করে চলেছে এই সংগঠন৷
শোয়েব, মিলনের মতো ভক্তদের স্পনসরও জোগাড় করেন৷ ভিসা করে দেন৷ কখনও সখনও পুরোটা পারেন না৷ শোয়েবের যেমন এ বার বিশ্বকাপ যাওয়া হয়নি ভিসা সমস্যায়৷ মিলন অবশ্য গিয়েছিলেন৷ নিজের পকেট থেকে খরচ হয়েছিল প্রায় দু’লক্ষ৷ জমানো পুঁজি ভেঙে৷
কোনো কিছুই অবশ্য দমাতে মাঠের বাইরের টাইগার জুটিকে৷ আজ রোববারও তারা শেরে বাংলায় থাকবেন৷
রূপক বসু: ভারতীয় সাংবাদিক