২০১৪-২০১৫ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট পাস

SHARE

parlament13জাতীয় সংসদে আজ চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জন্য ৯ হাজার ৫০৮ কোটি ৫৭ লাখ ১২ হাজার টাকার সম্পূরক বাজেট পাস হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত ৪ জুন ২০১৫- ১৬ অর্থ বছরের বাজেট পেশের সাথে এই সম্পূরক বাজেটও পেশ করেন।

মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রীর পক্ষে অর্থ পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান উত্থাপিত নির্দিষ্টকরণ (সম্পূরক) বিল-২০১৫ পাসের মধ্য দিয়ে এই সম্পূরক বাজেট পাস হয়।

চলতি অর্থবছরের জন্য মূল বাজেটে মোট বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে মোট বরাদ্দ দাঁড়ায় ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটেও ১ লাখ ৬৯ হাজার ৪৫ কোটি টাকা রাখা হয়েছে।

সম্পূরক বাজেটে পরিকল্পনা বিভাগে ১ হাজার ৮১৯ কোটি ৯৬ লাখ ৪৫ হাজার টাকা, স্থানীয় সরকার বিভাগে ১ হাজার ৫৩৭ কোটি ২৪ লাখ ২৯ হাজার টাকা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় খাতে ১ হাজার ৪২৩ কোটি ৬৯ লাখ ২৩ হাজার টাকা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় খাতে ১ হাজার ৩৭২ কোটি ৯৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় খাতে ১ হাজার ২৭১ কোটি ১৭ লাখ ৫৫ হাজার টাকা, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে খাতে ৬৫৭ কোটি ৮৬ লাখ ৩৪ হাজার টাকা, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় খাতে ৩৯২ কোটি ১৩ লাখ ৯২ হাজার টাকা, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ খাতে ২২৩ কোটি ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে ১৪২ কোটি ৮৩ লাখ ৩১ হাজার টাকা, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ১২০ কোটি ৮০ লাখ ৭৭ হাজার টাকা, খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

এদিকে চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি খাতে বরাদ্দ ছিল ৮০ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা ৭৫ হাজার কোটি টাকা করা হয়।

মঙ্গলবার সংসদে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অনুকূলে ২২টি মঞ্জুরি দাবি উত্থাপন এবং কণ্ঠভোটে তা পাসের মধ্য দিয়ে সম্পূরক বাজেট পাস হয়। এর আগে সম্পূরক বাজেটের ওপর বিরোধী দলের সদস্যরা মোট ১৭০টি ছাঁটাই প্রস্তাব আনেন। এর মধ্যে ৬টি দাবির ওপর আনা ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনা হয়। তবে এ ছাঁটাই প্রস্তাবসহ সব প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।

এর আগে মঙ্গলবার সম্পূরক বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন সরকারি দলের সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ড. আব্দুর রাজ্জাক, জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, ফখরুল ইমাম ও সেলিম উদ্দিন।

এর পর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের পক্ষে অর্থ ও প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান সম্পূরক বাজেটের ওপর সমাপনি বক্তৃতায় বিভিন্ন সমালোচনার জবাবে বলেন, ভর্তুকি সরকার বিনিয়োগ হিসাবে প্রদান করে থাকে। যেমন কৃষিতে ভর্তুকি প্রদান করা হয় দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন করতে। আর এ পদক্ষেপের ফলে দেশ এ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন। এছাড়া কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির দেশ হিসাবে কৃষিতে উচ্চ ফলন নিশ্চিত হওয়ায় অর্থনীতিও শক্তিশালী হয়েছে।

তিনি এবার ধানের দাম কম বিষয়ে বলেন, এবার সারা বিশ্বে খাদ্র উৎপাদন বেশী হয়েছে। আর এ অতিরিক্ত উৎপাদনের ফলে বিশ্ব বাজারে খাদ্য পণ্যের দাম হ্রাস পেয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতির অংশ হিসাবে বাংলাদেশেও বিশ্ব খাদ্য মূল্যের প্রভাব পড়েছে। তবে সরকার যথাসময়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ায় বর্তমানে ধানের বাজার মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বিনিয়োগের ব্যাপারে বলেন, সরকার দেশে দেশী বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে অনেক কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে। এর ফলাফলও পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, সুশাসন নিশ্চিত ও দুর্নীতি রোধেও সরকার বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে। এর ফলে দুর্নীতি ধীরে ধীরে কমে আসবে। আর সুশাসন নিশ্চিত করতে জনপ্রশাসনকে ঢেলে সাজানোর ব্যবস্থার সাথে সাথে কর্মকর্তা- কর্মচারিদের বেতন-ভাতা বাড়ানো হচ্ছে। পাশাপাশি দক্ষতা বৃদ্ধি করতে বিভিন্ন প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অচিরে এর সুফল পাওয়া যাবে।

এর আগে সম্পুরক বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বাজেট পেশ এবং সম্পূরক বাজেট উপস্থাপনের আগে তা অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে যাতে যায় এ ব্যাপারে কার্যপ্রণালী বিধি সংশোধনের প্রস্তাব করেন।

তিনি বলেন, সম্পূরক আর্থিক বিবৃতিতে যেসব মন্ত্রণালয় বা বিভাগ বরাদ্দকৃত অর্থ খরচ করতে পারেনি তাদের নাম উল্লেখ করে কেন এসব মন্ত্রণালয় বা বিভাগ খরচ করতে পারলো না তা লিপিবদ্ধ করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘বাজেটের টাকা খরচের ব্যাপারে আমি বিরোধিতা করছি না। কিন্তু কোন মন্ত্রণালয় কত টাকা কোথায় খরচ করলো, এগুলো আর্থিক বিবরণীতে থাকা উচিত ছিলো। টাকাগুলো কোথায় গেলো? ৫৯টি মন্ত্রণালয়ের কয়েকটি মন্ত্রণালয় কোনো কাজই করতে পারেনি। কিন্তু কেন পারেনি? ওইসব মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রীদের নাম থাকতে হবে।’

রমজানে যাতে দ্রব্যমূল্য না বাড়ে সেজন্য দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বাণিজ্যমন্ত্রীকে আহবান জানান।

সরকারি দলের সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিএনপি-জামায়াতের আমলে প্রতিবেশী দেশ ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে সেদেশের সাথে বৈরী সম্পর্ক তৈরী করেছিল। অথচ বর্তমান সরকার দেশের সার্বিক উন্নয়নের পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সুসম্পর্ক স্থাপনসহ কূটনৈতিক ক্ষেত্রেও ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে।

শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষিসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, ভবিষ্যতেও এগিয়ে যাবে।

জাতীয় পার্টির সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, বাজেট উপস্থাপনের মাধ্যমে অর্থমন্ত্রী যে স্বপ্ন দেখিয়েছেন তা বাস্তবায়ন করতে হলে রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ও সরকারি কর্মকর্তাদের অভিজ্ঞ করে তোলার কোন বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, বাজেটের সুফল পেতে হলে সকল ক্ষেত্রে দক্ষ জনবল, সুশাসন ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করে সমাজের সর্বত্র শৃংখলা আনতে হবে। জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে দুষ্টু লোকদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া যাবে না।

শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের গ্যাস, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য সুবিধা দিতে হবে।