বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের জোনিং ম্যাপ অনুসারে বাংলাদেশের ৪৩ ভাগ এলাকা খুবই ভূমিকম্পপ্রবণ, ৪৩ ভাগ এলাকা মাঝারি ভূমিকম্পপ্রবণ ও ১৬ ভাগ এলাকা খুবই কম ভূমিকম্পপ্রবণ। জেলাভিত্তিক হিসাব করলে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে পঞ্চগড়, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ ও বান্দরবান। পাশাপাশি ঠাকুরগাঁও, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, রাঙ্গামাটি খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজার জেলার কিছু অংশ এই জোনে রয়েছে। কিছুটা কম ঝুঁকিপূর্ণ জোনে রয়েছে রাজশাহী, নাটোর, মাগুরা, মেহেরপুর কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী ও ঢাকা। আর বরিশাল ও পটুয়াখালীর পানিকবলিত এলাকাগুলো রয়েছে জোন-৩-এ, অর্থাৎ এসব এলাকায় ভূমিকম্প ঝুঁকি তেমন নেই।
এরই মধ্যে ঢাকার মানুষজন অনেকটা সুপ্ত আগ্নেয়গিরির ওপর বাস করছে। মাকড়সার জালের মতো গ্যাসের লাইনের বিস্তার ঢাকা শহরের মাটির নিচে। কোনো দিন শক্তিশালী ভূমিকম্প হলেই গ্যাস লাইনগুলো ফেটে যাবে। ভূমিকম্পে বিদ্যুতের খুঁটিও ভেঙে পড়তে পারে, যেমনটি হয়েছে নেপালে। বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে স্ফুলিঙ্গ থেকে অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে। সেই অবস্থায় ওপরে আগুন, নিচে দাহ্য গ্যাস- দুইয়ে মিলে ঢাকা একটি অগ্নিকুণ্ডের রূপ নিতে পারে।
মানা হচ্ছে না রাজউকের বিল্ডিং কোড
নিয়মবহির্ভূত ভবন তৈরির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ঘোষণা কার্যত কাগজে-কলমেই রয়ে গেছে। অবৈধ ভবনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এবং নির্মিতব্য ভবনগুলো তদারকির জন্য পাঁচটি মনিটরিং কমিটি গঠন করা হলেও বাস্তবে এগুলোর তেমন কোনো কার্যক্রম নেই বলে জানিয়েছেন কমিটির একাধিক সদস্য। তাদের অভিযোগ, রাজউকের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কারণেই মূলত মনিটরিং কমিটিগুলো অকার্যকর হয়ে আছে। তাদের কারণে কমিটির নিয়মিত বৈঠক হয় না এবং সরেজমিন পরিদর্শন কার্যক্রমও তেমন একটা নেই। এসব কারণেই রাজধানীতে বিল্ডিং কোড না মেনেই প্রতিনিয়ত গড়ে উঠছে অবৈধ ভবন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কমিটিতে রাজউকের কর্মকর্তা ছাড়াও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ, ইন্সটিটিউট অব আর্কিটেক্টস বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্স, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, রিহ্যাব, বিএলডিএ ও পরিবেশবাদী সংগঠনের একজন করে প্রতিনিধি রয়েছেন। কমিটির সভাপতি হিসেবে রয়েছেন যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা। মনিটরিং কমিটির কাজ নির্মাণাধীন বাড়িগুলো সশরীরে পরিদর্শন করে কেউ অপরাধ করলে বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। কিন্তু গত দুই বছরে কমিটির তেমন কোনো কার্যক্রম নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। নিয়মিত বৈঠকও হয় না। অভিযোগ রয়েছে, দুর্নীতিবাজ কিছু কর্মকর্তার কারণে কমিটিগুলো নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। এ সুযোগে অবৈধ ভবন মালিকদের কাছ থেকে তারা সুবিধা নিচ্ছেন। ২০১০ সালে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের হিসেবে রাজধানীতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার।
পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই ভবন নির্মাণ
রাজউকের সংশ্লিষ্টরা জানান, বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে আইনে পরিবেশ ছাড়পত্র নেয়া বাধ্যতামূলক করা হলেও কেউই তা মানছেন না। ফলে পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই কিংবা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই গড়ে তোলা হচ্ছে বহুতল ভবনগুলো। পরিবেশ অধিদফতর জানায়, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ (সংশোধিত-২০১০) অনুযায়ী বহুতল আবাসিক-বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণে পরিবেশ ছাড়পত্র গ্রহণ বাধ্যতামূলক। আবার ইমারত বিধিমালায় বলা হয়েছে, সর্বোচ্চ সাততলা ভবন নির্মাণের সময় ফায়ার সার্ভিস, পরিবেশ অধিদফতর, গ্যাস, ওয়াসা ও বিদ্যুৎ বিভাগের ছাড়পত্র নেয়া বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি হাইরাইজ ভবনে ফায়ার ডিটেক্টর, স্মোক ডিটেক্টর, উচ্চগতির পানি স্প্রে সিস্টেম ও কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন সিস্টেম থাকাও বাধ্যতামূলক। বাংলাদেশ ইমারত নির্মাণ বিধিমালা-১৯৯৬-এর ১২ নম্বর ধারার (১) উপধারা অনুযায়ী আটতলা উচ্চতার বিল্ডিং নির্মাণের ক্ষেত্রে ইমারতের সামনে কমপক্ষে ২৫ ফুট এবং ছয়তলা উচ্চতার বিল্ডিং নির্মাণের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ১৫ ফুট প্রশস্ত রাস্তা থাকা বাধ্যতামূলক। এ বিধিমালার ৮ নম্বর বিধির ৫ উপবিধি অনুযায়ী উল্লিখিত ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে নিকটবর্তী সড়কের মাঝ খান থেকে কমপক্ষে চার দশমিক পাঁচ মিটার অথবা সড়ক-সংলগ্ন ইটের সীমানা থেকে এক দশমিক পাঁচ মিটার দূরে ইমারত নির্মাণ করতে হবে। এছাড়া সর্বোচ্চ সাততলা ভবন নির্মাণের সময় পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু আইনে পরিবেশ ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক হলেও নগরীর বেশিরভাগ ভবন নির্মাণে এসবের তোয়াক্কা করা হয়নি বা হচ্ছে না।
নকশা ছাড়াই ভবন নির্মাণ
নির্মাণ খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, ভূমিকম্পের ক্ষতির হাত থেকে অবকাঠামো রক্ষা করতে নকশার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তবে অজ্ঞতা অসচেতনতার জন্য বিষয়টি অবহেলা করা হয়। অবকাঠামোর স্ট্রাকচারাল ডিজাইনিংয়ে ১৯৭৯ সালের আগে ভূমিকম্প বিষয়টি পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত ছিল না। এ কারণে আগে যেসব অবকাঠামোর নকশা করা হয়েছে, সেখানে ভূমিকম্প প্রতিরোধের বিষয়ে কোনো চিন্তাভাবনা করা হয়নি। অবকাঠামো তৈরির ক্ষেত্রে মানসম্পন্ন রড ব্যবহারও একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। ভালো রড মোচড় খেলেও ভাঙবে না। তারা জানান, রাজধানীর অনেক ভবনে কংক্রিটের কাঠামো ছাড়াই কেবল ইটের গাঁথুনি দেয়া হচ্ছে। এগুলো সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। ভূমিকম্পের প্রথম ধাক্কায় এগুলো পড়ে যাবে। এছাড়া অনেক ভবনের নিচতলা ফাঁকা রাখেন। গাড়ি ঢোকার জন্য বা অন্যান্য কারণে নিচতলার একটা বড় অংশে দেয়াল দেন না। এ ধরনের অবকাঠামোও ঝুঁকিপূর্ণ। তাদের হিসাবে, অবকাঠামো নির্মাণে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা মেনে চললে সহজেই ভূমিকম্প প্রতিরোধী অবকাঠামো নির্মাণ করা সম্ভব।
ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের তথ্যমতে, রাজধানীর ৬৫ শতাংশ এলাকাতেই একসময় বিভিন্ন ধরনের জলাশয় ছিল। বালি ও আবর্জনা ফেলে তা ভরাট করে ফেলায় এসব এলাকার মাটির গঠন অত্যন্ত দুর্বল। নির্মাণ বিশেষজ্ঞদের মতে, যথাযথ নিয়ম মেনেই এসব জায়গায় ভবন নির্মাণ করা উচিত। তা না হলে নির্মিত অবকাঠামো যে কোনো সময় বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
সাড়ে ৫ হাজার ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের দায় কার
রাজধানীতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা কত তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই সরকারের কাছে। ঢাকায় সেবা প্রদানকারী প্রধান দুই সংস্থা ঢাকা সিটি করপোরেশন ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কাছে যে তথ্য রয়েছে তার মধ্যে কোন মিল নেই।
২০০৪ সালে পুরান ঢাকার শাঁখারী বাজারে ভবন ধসে ১৭ জনের মৃত্যু হলে ঢাকা সিটি করপোরেশন কারিগরি জরিপের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন শনাক্ত ও তালিকা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়। প্রথমে ১১৩টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের পাইলট প্রকল্প হিসেবে এ কারিগরি জরিপ শুরু করা হয়। পরে ২০০৫ সাল থেকে সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করার কাজ শুরু করে সংস্থাটি। তবে পর্যাপ্ত কারিগরি সহায়তা ও অর্থের সংকুলান না হওয়ায় মাত্র সাড়ে পাঁচ হাজার ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয় সিটি কর্পোরেশন। পরবর্তীকালে এ সব ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) চিঠিও দেয়া হয়।
ঢাকার উন্নয়ন, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা প্রধান সংস্থা রাজউক রাজধানীতে মোট ৪ হাজার ৯৭টি নকশাবহির্ভূত ভবন শনাক্ত করে একটি তালিকা প্রকাশ করে। এর মধ্যে মাত্র ৬০টি ভবনের অবৈধ অংশ উচ্ছেদ করেছে সংস্থাটি। একই সঙ্গে রাজউক রাজধানীতে মোট ৩১২টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে এসব বাড়ির ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের কাছে তালিকা পাঠালেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি দুই সিটি কর্পোরেশনের কোনোটিও।
ধসে পড়বে ঢাকার ৩০ শতাংশ ঘরবাড়ি
ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতীতে যেসব ভূমিকম্প হয়েছে সেগুলো প্রায় ৮ মাত্রার বা তার বেশি ছিল। বর্তমানে যদি রিখটার স্কেলে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয় তবে ঢাকার প্রায় ৩০ শতাংশ ঘরবাড়ি ভেঙে যাবে বা ধসে পড়বে। পুরান ঢাকার অবস্থা হবে ভয়াবহ। এখন তাদের লক্ষ্য হল নতুন করে যেসব বাড়ি হচ্ছে সেগুলো ভূমিকম্প সহনীয় হয় এমনভাবে তৈরি করা। যদিও ভূমিকম্প থেকে পুরোপুরি রক্ষার কোনো উপায় নেই; তবে নিয়মনীতি মেনে ভবন তৈরি করা হলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব।
ভূমিকম্পে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হল ঢাকা নগরী। এ নগরীতে ভবন রয়েছে প্রায় ৫-৬ লাখের মতো, যেগুলোর বেশিরভাগই বিল্ডিং কোড অনুসরণ না করে নির্মাণ করা। এ মুহূর্তে যদি ৭.৫ রিখটার স্কেল মাত্রার ভূমিকম্প ঢাকায় হয় তবে প্রায় ৯০ হাজার প্রাণহানি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়াও বিল্ডিং ধসে ঢাকায় যে পরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে তা প্রায় ৬১৬ কোটি ডলার যা আমাদের বার্ষিক বাজেটের প্রায় অর্ধেক। আর ধ্বংসস্তূপ সৃষ্টি হবে প্রায় কয়েক হাজার টন। এগুলো সরানোর ব্যবস্থাও মাথায় রাখতে হবে।
ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে সাইনবোর্ড টানানোর নির্দেশ
রাজধানীতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বিশেষ রং দিয়ে চিহ্নিত ও ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবন’ লেখা সাইনবোর্ড টানিয়ে দিতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এবং ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় ভূমিকম্প প্রস্তুতি ও সচেতনতা কমিটি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে ভূমিকম্পে ঢাকা শহরে আটটি ভবনের হেলে পড়ার কারণ, ক্ষয়ক্ষতি ও দায়দায়িত্ব নিরূপণ করে ২০ মের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছে কমিটি। রাজধানীতে বিল্ডিং কোড না মেনে হাজার হাজার ভবন নির্মিত হয়েছে বলে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। গত বছরের ১৫ জুন জাতীয় সংসদে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন জানিয়েছিলেন, রাজউক রাজধানীতে ৩২১টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সভায় সরকারি পুরনো মেডিকেল কলেজগুলো জরুরি ভিত্তিতে রেট্রোফিটিং (পুনঃসংস্কার) করার জন্য গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেয়া হয়। এ ছাড়া নিজ নিজ উদ্যোগে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভবন, মসজিদ ও মার্কেট ইত্যাদি স্থাপনার একটি নিরীক্ষা করতে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রায় ৬০-৭০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক তৈরি করা আছে। পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের কয়েক হাজার কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেয়া আছে। ধ্বংসস্তূপ থেকে কীভাবে উদ্ধার করা যেতে পারে তা’ তাদের জানা থাকলেও সে সব কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যে পরিমাণ মেকানিজম প্রয়োজন তা আমাদের নেই। তাই বড় ধরনের কোনো ভূমিকম্প হয়ে গেলে আমাদের জন্য একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে।
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
ভূমিকম্প সহনীয় ভবন নির্মাণের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর : নেপালে প্রলয়ংকরি ভূমিকম্প আঘাত হানার প্রেক্ষাপটে দেশে ভূমিকম্প-সহনীয় ভবন নির্মাণ ও বিল্ডিং কোড সম্পর্কে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে প্রকৌশলীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খবর বাসস ও ইউএনবির।
১ মে প্রধানমন্ত্রী রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে টেকসই উন্নয়নের জন্য ‘টেকনিক্যাল অ্যান্ড ভকেশনাল এডুকেশন অ্যান্ড ট্রেনিং (টিভিইটি)’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনকালে এ আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী প্রকৌশলীদের উদ্দেশে বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি ভূমিকম্প প্রবণ দেশ হিসেবে আমি আপনাদের ভূমিকম্প-সহনীয় ভবন নির্মাণ ও কঠোরভাবে বিল্ডিং কোড মেনে চলার ব্যাপারে যথোপযুক্ত তদারকির আহ্বান জানাই।’ তিনি বলেন, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো খুবই প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ। সম্প্রতি নেপালে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ব্যাপক জানমালের ক্ষতি হয়েছে। এ ভূমিকম্পে বাংলাদেশও কেঁপে উঠেছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সঠিক মান নিয়ন্ত্রণে কোনোভাবেই আপস করা যাবে না। উন্নয়নকাজ যথাযথভাবে বাস্তবায়িত না হলে তা কেবল জাতীয় ক্ষতিই নয়, সেই সঙ্গে মানবিক বিপর্যয়ও ডেকে আনতে পারে।
দেশে ভূমিকম্প হওয়ার আশংকা কম জানিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেছেন, আল্লাহর রহমতে বাংলাদেশে ভূমিকম্প হবে না। আর হলেও সরকারের ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধার ও অন্যান্য প্রস্ততি রয়েছে। মন্ত্রী বলেন, ভূমিকম্প প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এতে কারও কোনো হাত নেই। ক্ষতি যাতে না হয় বা কম হয়, সে ব্যাপারে প্রস্তুতি নিতে হবে।
রাজউকের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী জি. এম. জয়নাল আবেদীন ভুইয়া বলেন, অবৈধ ভবনের বিরুদ্ধে অভিযান একটি চলমান প্রক্রিয়া। রাজউকের মনিটরিং কমিটি সরেজমিন পরিদর্শন করে বিল্ডিং কোড না মেনে যারা ভবন নির্মাণ করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। এছাড়া চিহ্নিত অবৈধ ভবনগুলোর বিরুদ্ধেও দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতোমধ্যে ৩ হাজার ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা সিটি কর্পোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই দুই মেয়রে সঙ্গে বসে বিষয়টি আলোচনা করবো।
রাজউকের সদস্য (পরিকল্পনা) শেখ আবদুল মান্নান বলেন, সব কাগজপত্র ঠিকঠাক আছে কিনা লোকবল সংকটের কারণে সবসময় তা তদারক করা সম্ভব হয় না। এ সুযোগে একশ্রেণীর নির্মাতা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়াই ইচ্ছামতো ভবন নির্মাণ করছেন। তবে আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে যেসব ভবন নির্মিত হয়েছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্তসাপেক্ষে ওইসব ভবন মালিক ও নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন শনাক্ত করার দায়িত্ব রাজউকের নয়, সিটি কর্পোরেশনের। রাজউকের দায়িত্ব অননুমোদিত ভবন শনাক্ত করা এবং অননুমোদিত অংশ উচ্ছেদ করা।
বিশেষজ্ঞের অভিমত
অধিকাংশ কারখানাই ঝুঁকিপূর্ণ
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী যুগান্তরকে বলেন, আমাদের দেশে প্রধান সমস্যা হল যেসব বিল্ডিং আছে তার বেশিরভাগই বিল্ডিং কোড অনুসরণ না করেই নির্মিত হয়েছে। সম্প্রতি দেশের গার্মেন্টস সেক্টরের ওপর গবেষণা করা হয়েছে। রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর আমরা ৩ হাজার কারখানার ওপর জরিপ চালিয়েছি। ১৯৯৫ সাল থেকে তৈরি হওয়া এসব কারখানার অধিকাংশই ঝুঁকিপূর্ণ। ঢাকার অদূরে মধুপুরে যদি ভূমিকম্পের একটা ভল্ট হয় তবে ঢাকায় ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে। এতে ঢাকার ৪ লাখ বিল্ডিংয়ের মধ্যে ১ লাখ বিল্ডিংয়ের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে। হতাহত হবে প্রায় ৩ লাখ মানুষ, অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি হবে তিন বিলিয়ন ইউএস ডলার। তবে আমাদের এই মুহূর্তে সবার আগে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করে সাবধান থাকতে হবে। আর নতুন বিল্ডিং তৈরির ক্ষেত্রে অবশ্যই বিল্ডিং কোড মানার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এক্ষেত্রে রাজউককে একটা শক্তিশালী ভূমিকা নিতে হবে।
বিল্ডিং তৈরির ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘বিম আর কলামের সংযোগস্থলে এক্সট্রা রড যোগ করতে হবে। রিইনফোর্সড কংক্রিটের শুরুতে লোহার যে রড তৈরি করা হয় সেটির টাইরডকে ১৩৫ ডিগ্রি কোণে বাঁকিয়ে ঢুকিয়ে দিতে হবে। আমাদের দেশে বেশিরভাগ বাড়িতে টাইরডকে ৯০ ডিগ্রি কোণে বাঁকিয়ে দেয়া হয়। আর একটা ব্যাপার হল, একতলায় আমরা অনেক সময় কার পার্কিং বা অন্য কোনো কারণে ফাঁকা রাখি। এক্ষেত্রে ভূমিকম্প ঝুঁকি এড়াতে ওপরতলার ওয়ালসহ কলামের দৃঢ়তার সমান নিচতলার কলামের দৃঢ়তা হতে হবে। এছাড়া ভবনের বিমের কলামের বেল্ডিংয়ের রডকে কোড অনুসারে ডিটেইলিং করার ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেয়া যাবে না। এক্ষেত্রে ভবন নির্মাণের ব্যয় ১০ শতাংশ বেড়ে যাবে।
ভালো করে পাইলিং করতে হবে
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের আরেক অধ্যাপক ড. তাহসিন রেজা হোসেন বলেন, ‘নবনির্মিত ভবন যদি প্রস্থের চেয়ে দৈর্ঘ্যে বেশি হয়ে থাকে তবে এর বিভিন্ন অংশ আলাদা করা যেতে পারে, যেমন- লিফটকে মূল ভবন থেকে একটু আলাদা রাখা যেতে পারে। ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে এসব নিয়ম মানাই হল বিল্ডিং কোড। তিনি বলেন, মাটিভেদেও ভূমিকম্পের মাত্রার কম-বেশি হতে পারে। বিভিন্ন রকম পুকুর, ডোবা, নদী ভরাট করার পর সেই স্থানগুলো ভালো করে পাইলিং করতে হবে; কেননা নরম মাটিতে ভূমিকম্পের মাত্রা অনেকগুণ বেড়ে যায়। উল্লেখ্য, ৬ মাত্রার ভূমিকম্পের চেয়ে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প প্রায় ১০২৪ গুণ তীব্র এবং ধ্বংসাত্মক। তাই ভূমিকম্পে ভীত বা আতংকিত না হয়ে বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ করলে ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।
ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করা উচিত
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব যুগান্তরকে বলেন, রানা প্লাজা ধসের পর বুয়েট রাজধানীর ধানমণ্ডি ও মোহাম্মদপুর এলাকায় একটি টেকনিক্যাল সার্ভে চালিয়েছে। ওই সার্ভের সঙ্গে আমি যুক্ত ছিলাম। সার্ভেতে দেখা যায়, ধানমণ্ডি এলাকাল ৬৭ ভাগ ভবনই ৭ মাত্রার ভূমিকম্প সহনশীল নয় আর মোহাম্মদপুর এলাকায় তা ৭০ ভাগে উন্নীত হয়েছে। ইকবাল হাবিব বলেন, এখন যদি পুরান ঢাকা ও বাসাবো, খিলগাঁও, শাজাহানপুর এলাকায় এই সার্ভে করা যায় তাহলে আমাদের আশংকা প্রায় ৮০ ভাগ ভবনই ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে। রাজধানীতে অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করা উচিত। যেসব কর্মকর্তার আমলে এসব ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল তাদের এবং ভবন মালিককে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। নতুন বিল্ডিং তৈরির ক্ষেত্রে অবশ্যই বিল্ডিংকোড অনুসরণ করতে হবে।
দুর্যোগ মোকাবিলায় ‘সার্ক
কো-অপারেশন’ গঠন করা জরুরি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজ বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরীন যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় অবস্থিত। ভূমিকম্পের সম্ভাবনার ওপর বিচার করে পুরো বাংলাদেশকে তিনটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকা রয়েছে মধ্যম সারির ঝুঁকিতে। তবে অন্য এলাকায় ভয়ংকর কোনো ভূমিকম্পে যে ক্ষয়ক্ষতি হবে, অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং জনসংখ্যার ঘনত্বের কারণে ঢাকায় এর পাঁচ গুণ বেশি ক্ষয়ক্ষতি হবে। ঢাকায় কোনো ভূমিকম্প হলে নিঃসন্দেহে লাখ লাখ মানুষ মারা যাবে। চট্টগ্রামেও অনেকটা একই অবস্থা। এই গলি-ঘুপচির শহরে কোনোভাবেই রেসকিউ কার্যক্রম চালানো সম্ভব নয়। ফলে ধীরে ধীরে মৃত মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকবে। অথচ এর কিছুই ঘটত না যদি আমরা বিল্ডিং কোড মেনে দালান-কোঠা তৈরি করতাম। ভূমিকম্পের আগাম খবর কখনোই জানানো সম্ভব নয়। কোনো রকম বিল্ডিং কোড না মেনে ঢাকায় যেসব বিল্ডিং তৈরি হয়েছে তা আর কোনোদিনই মেরামত করা সম্ভব নয়। তবে ‘রেট্রোফিটিং’ নামে জাপানে আমি একটি পদ্ধতি দেখেছি। যেসব বাড়ি ভূমিকম্প প্রতিরোধক নয়, আবার ভেঙে ফেলাও সম্ভব নয়, সেগুলোর চারপাশে লোহার বিম দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। ব্যয়বহুল এ পদ্ধতি বাংলাদেশে প্রয়োগ করা সম্ভব নয়।
মাহবুবা নাসরিন বলেন, আমি যতদূর জানি, দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকার ৬২ হাজার ভলান্টিয়ার তৈরি করার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। স্কুলে স্কুলে এটি ছড়িয়ে দেয়া উচিত বলে আমি মনে করি। এটা সার্কের মাধ্যমেও হতে পারে। সার্কের দেশগুলো একই অঞ্চলে হওয়ায় দুর্যোগের বিভিন্ন ডাঁটা বিনিময়ের মাধ্যমেও একটি সহযোগিতার বন্ধন তৈরি করা যেতে পারে।
ক্ষয়ক্ষতি হবে সীমাহীন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান, পরিবেশ বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. আবদুর রব যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশ অবশ্যই ভূমিকম্প প্রবণ এলাকায় অবস্থিত। যে কোনো সময় এই দেশ ভূমিকম্পে আক্রান্ত হতে পারে। ভারতীয় প্লেট ও ইউরোশিয়ান প্লেটের মধ্যকার সংঘর্ষের কারণেই এভূমিকম্পের উৎপত্তি। এই সংঘর্ষ কোটি কোটি বছর আগে থেকেই চলে আসছে। আড়াই কোটি বছর আগে ভারত ছিলো সম্পূর্ণ আলাদা একটি দ্বীপ। একসময় এটি ধীরে ধীরে সরে এসে মধ্য এশীয় টেকটোনিক প্লেটের সঙ্গে ধাক্কা খায়। টেকটোনিক বলতে সঞ্চরণশীল ভূত্বকের বিশাল খণ্ডকে বোঝায়। বর্তমানে ভারতীয় প্লেট ইউরোশিয়ান প্লেটের দিকে সরে আসতে থাকায় অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, ভারতীয় প্লেট ইউরোশিয়ান প্লেটের নিচের দিকে ঢুকে যাচ্ছে। প্রতি বছর দুটি প্লেটের পরস্পরের দিকে সরে আসার পরিমাণ দুই ইঞ্চি। এ সরে আসার কারণে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। এই দুই প্লেটের সংঘর্ষের কারণেই তৈরি হচ্ছে পর্বতমালার। পৃথিবীর যেখানেই দুটি প্লেটের সংঘর্ষ সেখানেই পর্বতের সৃষ্টি। এ রকম অবস্থা যেমন ভূ-স্থলে হতে পারে, তেমনি সমুদ্রের তলায়ও হতে পারে। হিমালয় পর্বতমালা ভারতীয় প্লেটের ওপর দিয়ে প্রবলভাবে ধাক্কা দিচ্ছে ইউরোশিয়ান প্লেটকে। ফলে সেখানে তৈরি হচ্ছে দুই থেকে তিনটি বড় ধরনের চ্যুতি। এর মধ্যে মৃদু গতিতে সঞ্চরণশীল চ্যুতিও রয়েছে। এরই ফলে সেখানে সৃষ্টি হচ্ছে ভূমিকম্প। ভূমিকম্পপ্রবণ জোন হিসেবে বাংলাদেশকে যে তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে, উত্তরবঙ্গ সেই তালিকার ‘এ’ ক্যাটাগরিতেই আছে। উত্তর বঙ্গের পাশাপাশি বাংলাদেশের চট্টগ্রামও ভূমিকম্পের ‘এ’ ক্যাটাগরির জোনেই পড়েছে। ওই অঞ্চল ভূমিকম্পপ্রবণ হওয়ার কারণ হল, মিয়ানমারের টেকটোনিক প্লেটও এসে আমাদের এ অঞ্চলের প্লেটকে ধাক্কা দিচ্ছে। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ ভূমিকম্পের আশঙ্কা। মিয়ানমারের প্লেটের ধাক্কার কারণে অন্য আরেকটি বাড়তি বিপদ যোগ হয়েছে চট্টগ্রামের মানুষদের দিকে। ভূমিকম্পের কারণে ওই অঞ্চলে যে কোনো সময় সুনামি সৃষ্টি হতে পারে।
অতি ঝুঁকিতে থাকা ‘এ’ ক্যাটাগরির পর রয়েছে ‘বি’ ক্যাটাগরির অঞ্চল। যেখানে মাঝারি মানের ভূমিকম্প হতে পারে বলে ধারণা করা হয়। এ জোনে রয়েছে রাজশাহী, বগুড়া, ঢাকা, কুমিল্লা ইত্যাদি অঞ্চলগুলো। এ জোনে মাঝারি মানের ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও এ জোনের ক্ষয়ক্ষতিই অন্যান্য অঞ্চলকে ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।
বাকি থাকল ভূমিকম্পপ্রবণ ‘সি’ ক্যাটাগরির অঞ্চল। ‘এ’ ও ‘বি’ জোন ছাড়া বাংলাদেশের যেসব অঞ্চল বাকি ছিল সেসব অঞ্চলই ‘সি’ জোনে পড়েছে। এ অঞ্চল ভূমিকম্প ঝুঁকি থেকে কিছুটা নিরাপদে থাকলেও একেবারেই যে নিশ্চিন্ত তা কিন্তু নয়। দক্ষিণ বঙ্গের অনেক অঞ্চলই ভূমিকম্পের কারণে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
সাক্ষাৎকার গ্রহণ যাকারিয়া ও সাইফ বিন আইয়ুব