মঞ্চটা নিজেদের বলেই হাতের তালুর মতোই চেনা ছিল রিয়াল মাদ্রিদের। তবে চেনা মঞ্চে আজ নিজেদের রূপকথা লিখতে পারেনি তারা। এর আগে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে অনেকবারই কামব্যাকের ইতিহাস লিখলেও এবার নায়োকোচিত হাসি নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারেননি লুকা মদরিচ-ভিনিসিয়ুস জুনিয়ররা।
রিয়ালের মঞ্চেই শেষ হাসি হেসেছেন বুকায়ো সাকা-গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেলিরা।
চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে ২-১ গোলে জিতে ১৬ বছরের অপেক্ষা ঘুচিয়েছে আর্সেনাল। দুই লেগ মিলিয়ে ৫-১ ব্যবধানের জয়ে ২০০৯ সালের পর সেমিফাইনালে উঠেছে গানাররা। বিপরীতে ঘরের মাঠে বিদায় ঘণ্টা বেজেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের।
আরেকটি কামব্যাকের গল্প লিখতে ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই অবশ্য প্রতিপক্ষের জাল কাঁপিয়ে দিয়েছিল রিয়াল।
তবে সতীর্থ ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের বাড়ানো বল বুক দিয়ে জালে জড়ানোর আগে অফসাইড ছিলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। ষষ্ঠ মিনিটে ম্যাচে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল আর্সেনালও। বুকায়ো সাকার ডান পায়ের জোড়াল শটটি যদি গোলবারে রাখতে পারতেন। দুই মিনিট পর অবশ্য রেখেছিলেন।
তবে রিয়ালের গোলবারের রক্ষাকর্তা থিবো কোর্তোয়া কর্নারের বিনিময়ে দারুণ এক সেভ করলেন। এতে ২০ গজ থেকে শট নেওয়া সাকাকে হতাশই হতে হলো।
তবে এই কর্নার কপাল খুলেই গিয়েছিল গানারদের। কেননা কর্নার কিকের সময় মিকেল মেরিনোকে বক্সের মধ্যে ফেলে দেন রাউল আসেনসিও। ভিএআরের সহায়তা পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন ফ্রাঁসোয়া লেটেক্সি।
কিন্তু সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেননি সাকা। আসলে তাকে সফল স্পটকিক নিতে দেননি কোর্তোয়া। আর্সেনাল ফরোয়ার্ডের নেওয়া পেনাল্টি ঠেকিয়ে দেন রিয়াল গোলরক্ষক। এতে প্রথম লেগের ৩-০ গোলের ব্যবধানটা বাড়িয়ে নেওয়ার দুর্দান্ত সুযোগ মিস হয় কোচ মিকেল আর্তেতার দলের।
২৩ মিনিটে এবার আর্সেনালের বিপক্ষে পেনাল্টির বাঁশি বাজান ফ্রান্সের রেফারি। বক্সের মধ্যে এমবাপ্পেকে ফেলে দেন প্রথম লেগের জোড়া গোলের নায়ক ডেকলাইন রাইস। রেফারি সঙ্গে সঙ্গে রাইসকে হলুদ কার্ড দেখালেও ভিএআরে দুটি সিদ্ধান্তই বদলান লেটেক্সি। বিরতিতে যাওয়ার আগে যোগ করা সময়ের পঞ্চম মিনিটে আরেকটা দারুণ সেভ দেন কোর্তোয়া, আর্সেনালের উইঙ্গার গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেলির শট প্রতিহত করে।
৫৭ মিনিটে গোলের দেখা প্রায় পেয়েই গিয়েছিল রিয়াল। তবে রদ্রিগোর নেওয়া কর্নার সরাসরি জালে জড়ানোর আগেই পাঞ্চ করে আর্সেনালকে গোল হজম করা থেকে বাঁচান গোলরক্ষক ডেভিড রায়া। ৬৫ মিনিটে ভুলের প্রায়শ্চিত করেন সাকা। মোরেনোর পাস ধরে কোর্তোয়াকে ফাঁকি দেন ইংল্যান্ডের স্ট্রাইকার। এতে দুই লেগ মিলিয়ে ৪-০ গোলে পিছিয়ে পড়া রিয়ালের কামব্যাকের আশা যেন ক্ষীণ হয়ে আসে। এমন সময়ই লস বø্যাঙ্কোসদের ঘুরে দাঁড়ানোর দারুণ এক সুযোগ করে দেন আর্সেনালের ডিফেন্ডার উইলিয়াম সালিবা।
৬৭ মিনিটে গোলরক্ষক রায়ার বাড়ানো বল সালিবা নিয়ন্ত্রনে নিয়ে সতীর্থকে পাস দেওয়ার আগে পেছন থেকে দৌড়ে এসে পাখির মতো বল ছিনিয়ে নেন ভিনিসিয়ুস। তারপর মুহূর্তের মধ্যে গানারদের জালে বল জড়িয়ে দেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। ম্যাচে সমতায় ফিরলেও প্রতিপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি রিয়াল। উল্টো ৮১ মিনিটে মার্টিন ওডেগার্ড গোলবারে বল রাখতে পারলে ২-১ ব্যবধানের লিড পেত আর্সেনাল।
শেষ দিকে অবশ্য দুটি সুযোগ পেয়েছিল রিয়াল। তবে ৯০ মিনিটে ব্রাহিম দিয়াজের শট আটকিয়ে দেন গানারদের গোলরক্ষক রায়া। ফিরতি মিনিটে এনদ্রিক গোলে রাখতে পারলেও ব্যবধান কমত। রিয়ালের ফরোয়ার্ড যখন সুযোগ হাতছাড়া করলেও আর্সেনালের মার্তিনেলি ভুল করেননি। যোগ করা সময়ের ৩ মিনিটে ম্যাচের শেষটা টানলেন দারুণ এক ফিনিশিংয়ে। এতে ২-১ গোলে হেরে চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বিদায় নিশ্চিত হয় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের।
কোয়ার্টার ফাইনালের আরেক ম্যাচে বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে ঘরে মাঠ সান সিরোতে ২-২ গোলে ড্র করেছে ইন্টার মিলান। দি¦তীয় লেগের ড্রয়ে দুই লেগ মিলিয়ে ৪-৩ ব্যবধানে জিতে সেমিফাইনালে উঠেছে ইন্টার মিলান। মিলানের হয়ে গোল দুটি করেন লাউতারো মার্তিনেজ ও বেঞ্জামিন পাভার্ড। আর বায়ার্নের হয়ে করেন হ্যারি কেইন ও এরিক ডিয়েরার।