‘নিখোঁজ আব্বু’কে সুস্থ অবস্থায় ফেরত চায় সালাহউদ্দিন আহমেদের ছোট মেয়ে ফারিবা আহমেদ রাইদা।
সোমবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক উপাচার্য্ অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমদ সালাহউদ্দিন আহমেদের পরিবারকে সহমর্মিতা জানাতে গুলশানের বাসায় গেলে তার ছোট মেয়ে সাংবাদিকদের কাছে এই আকুতি জানান।
আবেগে এর বেশি কিছু রাইদা বলতে পারছিল না।
রাত সাড়ে ৮টায় অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুল হাই শিকদার, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সিনিয়র সহসভাপতি এম আবদুল্লাহ, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম মহাসচিব রফিকুল ইসলাম লাবলু প্রমূখ নেতৃবৃন্দ গুলশানের ৭২ নম্বর সড়কের ৭ নম্বর বাসায় আসেন।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ ও তার ছেলে-মেয়েকে সমমর্মিতা জানাতে আসা অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমদ পরিবারের সদস্যদের খোঁজ-খবর নেন।
সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রীকে তিনি বলেন, ‘‘তুমি আমার মেয়ের মতো। আল্লাহ আল্লাহ করো।’’
তিনি ‘‘আমি বিশ্বাস করি, সালাহউদ্দিন আহমেদকে খুঁজে বের করে আনার কাজ রাষ্ট্রের। যে অবস্থায় তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, ওইরকম অবস্থায় আমার প্রিয় ছাত্র সালাহউদ্দিন আহমেদকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জোর দাবি আমি রাষ্ট্রের কাছে জানাচ্ছি।’’
এরপর সাংবাদিকদের কাছে হাসিনা আহমেদ কান্না বিজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘‘আমার একটিই চাওয়া আমার স্বামীকে ফিরিয়ে দাও। যেভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে তুলে নিয়ে গেছে, সেইরকম সুস্থ অবস্থায় তাকে আদালতে হাজির করা হোক-এটাই আমার আবেদন।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাচ্ছি তিনি যেন আমার স্বামীকে ফিরিয়ে দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে যথাযখ নির্দেশ দেন। আমার ছেলে মেয়েকে আশ্বস্ত করুন-আমার স্বামী সুস্থ ও ভালো আছেন।’’
এ সময়ে মায়ের পাশে বসা তার ছোট ছেলে সৈয়দ ইউসুফ আহমেদ ও মেয়ে রাইদা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়তে দেখা যায়।
হাসিনা আহমেদ বলেন, ‘‘বিদেশে আমার বড় ছেলে ও মেয়েও কিছুক্ষণ পরপর টেলিফোন করে বাবার সন্ধান জানতে চায়। আমি কিছুই বলতে পারি না। আমি আমার স্বামীকে ফেরত চাই।’’
সালাহউদ্দিন আহমেদর বড় ছেলে সৈয়দ ইব্রাহিম আহমেদ কানাডা ও বড় মেয়ে পারমিজ আহমেদ ইকরা মালয়েশিয়াতে অধ্যয়ন করছেন।
সালাহউদ্দিনের পরিবারের অভিযোগ, গত ১০ মার্চ রাতে উত্তরার একটি বাসা থেকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিনকে তুলে নিয়ে গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তবে সরকার বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি স্বীকার করেনি।
ছয় দিন ধরে ‘নিখোঁজ’ বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদের কোনো ‘সন্ধান পাওয়া যায়নি’ বলে উচ্চ আদালতকে জানিয়েছে এসবি, সিআইডি, র্যা ব, ডিএমপি ও পুলিশ হেড কোয়ার্টার। সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ স্বামীর খোঁজ চেয়ে হাই কোর্টে গেলে বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের বেঞ্চের জারি করা রুলের জবাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আলাদাভাবে ও্ই বেঞ্চে প্রতিবেদন জমা দেয়।
রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে গত জানুয়ারি মাসের শেষ দিক থেকে সালাহ উদ্দিনের নামেই গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে হরতালের বার্তা দেওয়া হচ্ছিল। তবে নিজের অবস্থান প্রকাশ করছিলেন না এই রাজনীতিক। হাসিনা আহমেদের অভিযোগ, তিনি স্বামীর খোঁজ চেয়ে গুলশান থানা ও উত্তরা থানায় জিডি করতে চাইলেও পুলিশ তা নেয়নি।
সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এপিএস ছিলেন সালাহ উদ্দিন। পরে তিনি চাকরি ছেড়ে কক্সবাজারের সংসদ সদস্য হন এবং প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তার স্ত্রী হাসিনাও সংসদ সদস্য ছিলেন।