বহু ভাষারীতির দেশ ফিলিপাইন। আনুমানিক প্রায় ১৯টি ভাষা গোটা ফিলিপাইনকে জড়িয়ে আছে। দীর্ঘদিন স্পেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের শাসনে থাকার পর সর্বশেষ ১৯৪৬ সালে দেশটি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা লাভ করে। যদিও স্পেনের কাছে থেকে সেই ১৮৯৮ সালেই স্বাধীনতা পেয়েছিল ফিলিপাইন। তৎকালীন সময়ে এক আধিপত্যবাদীর হাত থেকে অপর এক অধিপত্যবাদীর হাতে পরাস্ত হয় দেশটি। দীর্ঘ পরাধীনতার ইতিহাসে ফিলিপাইনের অর্থনৈতিক কাঠামো প্রায় ধ্বংস করে দেয় দুই আধিপত্যবাদী শক্তি। অবশ্য যতটা অর্থনৈতিক কাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে আধিপত্যবাদী শক্তিগুলো, তারচেয়েও বেশি সাংস্কৃতিক ক্ষতি করেছে তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়িরাই সর্বপ্রথম ফিলিপাইনে তাদের সামরিক বাহিনীর যৌনক্ষুধা মেটানোর জন্য যৌনপল্লী স্থাপন করে। পরবর্তী সময়ে ফিলিপাইন যুক্তরাষ্ট্রের হাত থেকে কাগজে কলমে মুক্তি পেলেও ভৌগোলিক রাজনীতির মারপ্যাচ থেকে রক্ষা পায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠিত যৌনপল্লীগুলো থেকে বর্তমান ফিলিপাইনে অনেক নতুন যৌনপল্লীর সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিবছর দেশটিতে বিপুল সংখ্যক পর্যটক আসেন শুধুমাত্র যৌনপল্লীগুলোকে লক্ষ্য করে।
ফিলিপাইনের বালিবাগো অ্যাভিনিউতে গেলে খুব সহজেই চোখে পরবে ‘সুপারমার্কেট অব সেক্স’। এখানে খুব সহজেই একজন মানুষ অর্থের বিনিময়ে যৌন চাহিদা মেটাতে পারে। এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রচুর মানুষ এখানে যাতায়াত করে। পর্যটক ছাড়াও যারা দেশটির কর্মজীবি মানুষ তারা তাদের পছন্দের নারীর কাছে যাওয়ার জন্য ‘আর্লি ওয়ার্ক রিলিজ’ নামক একটি কাগজও সংরক্ষণ করেন। এই কাগজ থাকলে কোনো প্রকার বেতন কাটা ছাড়াই একজন শ্রমিক তার পছন্দের নারীকে কোনো একটি হোটেলে নিয়ে যেতে পারে। এজন্য তাকে কোনো পুলিশি ঝামেলা পোহাতে হবে না।
সর্বশেষ এক সমীক্ষায় দেখা যায়, ফিলিপাইনের বেশিরভাগ যৌনপল্লীর সদস্যরা বংশ পরম্পরায় এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে তাদের যাওয়ার কোনো জায়গা না থাকায় শিক্ষা কিংবা স্বাভাবিক জীবন যাপন করাও তাদের পক্ষে কষ্টসাধ্য। দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার যৌনপল্লীগুলোকে উঠিয়ে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে এই পেশার সঙ্গে দেশটির জাতীয় অর্থনীতি যুক্ত থাকায় হাজার চেষ্টা স্বত্ত্বেও যৌনপল্লী উঠিয়ে দেয়ার উদ্যোগ সফল হয়নি।
দেশটিতে এমন অনেক শিশু আছে যারা জীবনে তাদের পিতাকে কখনও দেখেনি। হয়তো তার বাবা কোনো অস্ট্রেলিয় কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের কোনো ধনী শেখ। সবচেয়ে হৃদয়বিদারক ব্যাপার হলো, যৌনপল্লীর কোনো শিশুর স্বাভাবিক জীবন যাপনের অধিকার নেই। পাশাপাশি পূর্ণবয়স্ক কোনো নারী ইচ্ছে থাকা স্বত্ত্বেও স্বাধীন কোনো নাগরিককে বিয়ে করে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে না। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এই অবস্থার জন্য দেশটির অর্থনৈতিক ভঙ্গুরাবস্থাকে দায়ি করছে।