প্রত্যাশাটা বিরল বটে। তবুও জনপ্রত্যাশা বলে কথা! শেষ পর্যন্ত সেটাই সত্য হলো। মাশরাফি বিন মর্তুজা খেললেনই না।
বাংলাদেশের কোটি কোটি সমর্থক চাননি, অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামুন। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে, অনলাইনে তারা ম্যাচের আগ পর্যন্ত নিজেদের এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করে গেছেন। না, কোনো ক্ষোভ থেকে নয়। ভালোবাসা ও স্বপ্ন থেকে। মাশরাফিকে যে আসল সময়ে বড়ই প্রয়োজন। মাশরাফির বিশ্রামের জন্যই কিউইদের বিপক্ষে অধিনায়কের আর্মব্যান্ড উঠেছিল সাকিবের হাতে। কিন্তু সাকিবের কিছু সিদ্ধান্তের জন্যই এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হাতের মুঠোয় চলে আসা জয়টা হাতছাড়া হয়ে গেল।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ খেলল গ্রুপ পর্বে নিজেদের ষষ্ঠ ও শেষ ম্যাচ। টানা পাঁচ ম্যাচ খেলার পর, বাংলাদেশের কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে দিয়ে এই লড়াইয়ে বিশ্রাম নিয়েছেন ইনজুরিপ্রবণ মাশরাফি। আরেকটা কারণ হলো, নিষেধাজ্ঞার খৰ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের ম্যাচে শ্লথগতির ওভাররেটের কারণে জরিমানা গুনতে হয়েছিল তাকে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একই ঘটনা ঘটলে এক ম্যাচের জন্য নিষেধাজ্ঞার খাঁড়ায় পড়তে হতো।
তবে দীর্ঘদিন পর অধিনায়কত্ব করতে নেমে সেডন পার্কের পেস উইকেটে দুই স্পিনার দিয়ে শুরু করেন সাকিব। ক্রিকেট ইতিহাসে তিনিই প্রথম অধিনায়ক, যিনি কি-না বোলিং শুরু করেন দু’জন বাঁহাতি স্পিনার দিয়ে। টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে তোলা ২৮৮ রানকে সুরক্ষা দিতে গিয়ে আক্রমণটা শুরু করেন সাকিব নিজেই। অপর প্রান্ত থেকে আনলেন বিশ্বকাপে এই ম্যাচে প্রথম খেলতে নামা তাইজুল ইসলামকে। বাংলাদেশের এ ম্যাচের পরিকল্পনাই ছিল স্পিন দিয়ে কিউইদের ঘায়েল করা। শুরুতে দুই উইকেট পড়লেও শেষ পর্যন্ত এ কৌশল কাজে আসেনি। সাকিব অবশ্য এ ম্যাচে পেসারদের ওপর খুব একটা নির্ভরও করলেন না। নইলে একজন বোলার কম খেলিয়েও রুবেল-তাসকিনের দুই-দুই চার ওভার বেঁচে যায় কীভাবে! আগের ম্যাচের হিরো রুবেলকে তো ডেথ ওভারে বোলিংয়েই আনলেন না সাকিব। কে জানে, হয়তো অধিনায়ক মাশরাফি খেললে, বোলার মাশরাফি খেললে ম্যাচটার ফল অন্য রকমও হতে পারত!
সাকিব অবশ্য খেলা শেষে জানিয়েছেন, একজন বোলার কম থাকাতেই সমস্যা হয়েছে। বললেন, ‘একজন বোলার কম নিয়ে খেলায় কাজটা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছিল। আমাদের পাঁচজন নিয়মিত বোলার ছিল না। আমরা তবুও লড়াইয়ের চেষ্টা করে গেছি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারিনি।’ হয়তো এ কারণেই আটজন বোলার ব্যবহার করেও সাকিব বাংলাদেশকে জয়টা এনে দিতে পারেননি! বাংলাদেশের জয় হাতছাড়া হওয়ার পেছনে আরও একটি বড় কারণ হলো, চতুর্থ ওভারের সময় একটি রিভিউ না নেওয়া। রুবেলের ওই ওভারের শেষ বলে জোরালো এলবির আবেদন হয়েছিল মার্টিন গাপটিলের বিপক্ষে। কিন্তু আম্পায়ার তাতে সাড়া দেননি। তবে এমন একটি আবেদনে আম্পায়ার সাড়া না দিলেও রিভিউ তো ছিল! কিন্তু সাকিব সাহস করে সেটাও নেননি। টিভি রিপ্লেতে দেখা গেছে, রুবেলের ডেলিভারিটি পরিষ্কার মিডল স্টাম্পে আঘাত হানত। গাপটিলের রান তখন ১৯। শেষ পর্যন্ত রুবেলই দুর্দান্ত ক্যাচ ধরে গাপটিলকে বিদায় করেন। অবশ্য ততক্ষণে যা করার তা করে ফেলেছেন গাপটিল। সেঞ্চুরি করে কিউইদের জয়ের কাছাকাছি পেঁৗছে দিয়েছেন এ ওপেনার। ধারাভাষ্যকার এবং স্টার স্পোর্টসের বিশেষজ্ঞদের মতে, সাকিব যদি এ সাহসী সিদ্ধান্তগুলো নিতে পারতেন তাহলে এ ম্যাচে জয়টা বাংলাদেশেরই হতো।