কুমার সাঙ্গাকারা ও মাহেলা জয়াবর্ধনে আসন্ন বিশ্বকাপে শেষবারের মতো ‘রঙিন’ জার্সিতে খেলতে যাচ্ছেন। বিশ্বকাপের পরই তারা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাবেন বলে আগেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন। ফলে বিদায়টাকে রঙিন করতে এবার শিরোপা জয়ের জন্য মরিয়া থাকবে সাঙ্গা-মাহেলার শ্রীলঙ্কা।
অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপের শিরোপা জয় করে আগের দুই আসরের ফাইনালে পরাজয়ের দুঃখ ভুলতে চায় লঙ্কানরা।
২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে মাহেলা জয়াবর্ধনের নেতৃত্বে বিশ্বকাপের ফাইনালে উত্তীর্ণ হয় শ্রীলঙ্কা। ফাইনালে ৫৩ রানের পরাজয়ের বিষাদ নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় লঙ্কানদের।
চার বছর পর ২০১১ সালে ভারত-শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের ফাইনালেও উঠে শ্রীলঙ্কা। সেবার নেতৃত্বে ছিলেন কুমার সাঙ্গাকারা। ফাইনালে জয়াবর্ধনের ৮৮ বলে ১০৩ রানের ‘অনবদ্য’ ইনিংস সত্ত্বেও ধোনির ভারতের কাছে পরাজিত হয়ে মাঠ ছাড়ে ১৯৯৬ সালের বিশ্বচাম্পিয়নরা।
এবারের বিশ্বকাপে অংশ নেয়া খেলোয়াড়দের মধ্যে সাঙ্গাকারা ও জয়াবর্ধনের ওয়ানডে রান সবচেয়ে বেশি। এই দু’জন রয়েছেন দুর্দান্ত ফর্মে। ফলে আসন্ন বিশ্বকাপে এই দু’জনের দিকেস তাকিয়ে থাকবে দল।
তবে গত দুই আসরের ব্যর্থতা নিয়ে চিন্তা করতে রাজি নন মাহেলা জয়াবর্ধনে। আগের দুই আসরের ফাইনালে উঠাটা দলের জন্য ইতিবাচক বলে মনে করেন তিনি।
মাহেলা বলেন, “আমরা গত দুটি আসরের শিরোপা জিততে পারিনি ঠিকই, কিন্তু টানা দুটি বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলাটা প্রমাণ করে যে, আমরা ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলছি। আসন্ন বিশ্বকাপে এটি আমাদের প্রেরণা জোগাবে।”
এবার পঞ্চম বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া জয়াবর্ধনে এর আগে টেস্টের মতো টি-টোয়েন্টি থেকেও অবসর ঘোষণা করেছেন। ২০১৪ সালে বাংলাদেশের মাটিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতে অসবর নেনে তিনি।
সাঙ্গাকারা বিশ্বকাপের পর ওয়ানডে ক্রিকেট বিদায় জানাবেন বলে ঘোষণা দিলেও টেস্ট ক্রিকেটকে আরো দীর্ঘায়িত করার চিন্তা করছেন।
ফলে বিশ্বকাপ জয়ের জন্য এবারই শেষ সুযোগ পাচ্ছেন ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা জুটি সাঙ্গাকারা ও জয়াবর্ধনে।
গত মাসে নিউজিল্যান্ডের কাছে ওয়ানডে সিরিজে ৪-২ ব্যবধানে পরাজিত হলেও গত ২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কার পারফরমেন্স ছিল বেশ উজ্জ্বল। গত বছর লঙ্কানরা সর্বোচ্চ ২০ ম্যাচে জয় পাওয়ার পথে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পাশাপাশি ভারত-পাকিস্তানের মতো পরাশক্তিকে হারিয়ে এশিয়া কাপের শিরোপাও জিতেছিল। ফলে এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট ভাবা হয় শ্রীলঙ্কাকে।
দলগত পারফরমেন্সের মতো গত বছর ব্যক্তিগত পারফরমেন্সেও অনেক এগিয়ে লঙ্কানরা। ওয়ানডেতে গত বছর সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করেছেন কুমার সাঙ্গাকারা। তিনি করেছেন ১ হাজার ২৫৬ রান। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১ হাজার ২৪৪ রান আসে লঙ্কান দলনায়ক ম্যাথুজের ব্যাট থেকে। ৯৯০ রান করে তালিকার চতুর্থ স্থানে রয়েছেন লঙ্কান ওপেনার তিলকরত্নে দিলশান।
গত বছর ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী বোলারও শ্রীলঙ্কার। সর্বোচ্চ ৩৮টি উইকেট নিয়েছেন স্পিনার অজন্তা মেন্ডিস। তবে অফ-ফর্মের কারণে তিনি লঙ্কানদের বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাননি। নির্বাচকরা রঙ্গনা হেরাথ ও সাচিত্র্রা সেনানায়েকের ওপর আস্থা রেখেছেন।
১৯৯৬ সালের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা ইনজুরি থাকা সত্ত্বেও দলের সেরা বোলার লাসিথ মালিঙ্গাকে বিশ্বকাপের ১৫ সদস্যের দলে অন্তর্ভুক্ত করেছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকেই দলের বাইরে রয়েছেন এই লঙ্কান পেসার।
একমাত্র বোলার হিসেবে আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেটে ৩টি হ্যাটট্রিক করা মালিঙ্গা গত মাসে নিউজিলান্ডের বিপক্ষে সাত ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে খেলতে পারেননি।
দুয়ারে কড়া নাড়ছে বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপের পরপরই সাঙ্গাকারা, জয়াবর্ধনের মতো তারকা ক্রিকেটাররা অবসর নিবেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে। ফলে আসন্ন বিশ্বকাপে সাঙ্গা-মাহেলাকে নিয়ে শিরোপা জিততে মরিয়া লঙ্কানরা। ১৯৯৬ সালের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা রয়েছেন সাঙ্গাকারা-জয়াবর্ধেনে ম্যাজিকের অপেক্ষায়। -ক্রিকইনফো ও এনডিটিভি