করোনা থেকে দেশ বাঁচাতে সাজার বিকল্প নেই

SHARE

আর দেরি নয়, মানুষকে ঘরে রাখতে এখনই আইনের কঠোর প্রয়োগ চান আইন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, দেশে যখন করোনা রোগী শনাক্ত হলো, তখনই সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ সংক্রান্ত আইনের কঠোর প্রয়োগ করা উচিত ছিল। আইনটির প্রয়োগ কঠোরভাবে করা হলে সারা দেশে এভাবে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ত না। তারা বলছেন, সরকার জনগণকে ঘরে রাখার জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করল, কিন্তু একশ্রেণির মানুষ তা মানছে না। তাই বলব, আর দেরি নয়, এখনই আইনের কঠোর প্রয়োগ করা হোক। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যারা ঘরের বাইরে বের হবে তাদের আর্থিক জরিমানা করা হোক। সাজা দেওয়া হোক। এটা করা হলেই মানুষ জরিমানা আর সাজার ভয়ে ঘরে থাকবে। দেশ ও দেশের মানুষকে বাঁচাতে এর কোনো বিকল্প নেই।

তারা বলছেন, গত ১৬ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সারা দেশকে করোনাভাইরাসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার পর থেকেই মানুষকে ঘরে রাখতে এই আইন সরকারের জন্য একটি হাতিয়ার হিসেবে দেখা দিয়েছে।
বিশ্বব্যাপী মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বাংলাদেশ সরকার জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানষুকে ঘরে থাকতে বলছে। আর এজন্য সরকার সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিল্প-কলকারাখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাবসহ আইন শৃংখলাবাহিনীর সদস্যরা মানুষকে ঘরে থাকতে আহ্বান জানিয়ে আসছে। গণমাধ্যমেও ব্যাপকভাবে এর সংবাদ প্রচারিত ও প্রকাশিত হচ্ছে। যারা ঘরে বাইরে আসছেন তাদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হচ্ছে।

এরইমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গোটা দেশকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে এরইমধ্যে প্রায় ৫০ জেলা লকডাউন ঘোষণা করেছে স্থানীয় প্রশাসন। লকডাউন ঘোষিত জেলা-উপজেলা থেকে অন্য জেলায় বা উপজেলায় মানুষের চলাচল সীমিত করা হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই লকডাউন ঘোষণা কাগজেই সীমাবদ্ধ। বাস্তব চিত্র ভিন্ন। প্রতিদিনই এক জেলা থেকে অন্য জেলায় লোকজন যাচ্ছে নানাভাবে। আইন শৃংখলাবাহিনীর নজরে যারা পড়ছেন তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আইন শৃংখলাবাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় চলে যাচ্ছেন।

খোদ রাজধানীতে সরকারি ঘোষণা অমান্য করে লোকজন ঘোরাফেরা করছে। কিন্তু তাদের ক্ষেত্রে শুধুই ঘরে থাকার আহ্বানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে আইন শৃংখলাবাহিনী। এই আহ্বানে সাড়া মিলছে কম। ফলে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। সারা দেশেই রোগী শনাক্ত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, মহামারী ঠেকাতে না পারলে দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে।

এ অবস্থায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আরো মারাত্মক হবার আগেই সংক্রামক রোগ(প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রন ও নির্মূল) আইন-২০১৮ এর কঠোর প্রয়োগ চান আইন বিশেষজ্ঞরা। এই আইনে সরকারি নির্দেশনা অমান্যকারীদের সর্বোচ্চ ৬ মাস কারাদণ্ড, এক লাখ টাকা জরিামান বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার সুযোগ রয়েছে। এই আইনের ২৫ ধারায় বলা হয়েছে, যেসব মানুষ সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করবে তাদের অনধিক ৩ মাস কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। আর ২৪ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, যারা নিজের আক্রান্তের তথ্য গোপন করে রোগ বিস্তারে ভূমিকা রাখবে তাকে সর্বোচ্চ ৬ মাসের কারাদণ্ড, এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার যাবে। এই আইন থাকার পরও আইন শৃংখলাবাহিনী আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে শৈথিলতা দেখাচ্ছে।

এ বিষয়ে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) প্রেসিডেন্ট সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, এই আইনটি সরকারের একটি হাতিয়ার।

তিনি বলেন, গত ১৬ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সারাদেশকে করোনাভাইরাসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষনা দিয়ে প্রজ্ঞাপণ জারি করেছেন। এরপর থেকেই এই আইনটি প্রয়োগের সুযোগ এসেছে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, আইন শৃংখলাবাহিনী বা কেউই এই আইনের প্রয়োগ করছেন না। গত পরশু দেখলাম, সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় এক পরিবহন শ্রমিককে সড়ক পরিবহণ আইনে সাজা দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ আইন থাকার পর অন্য আইনে কেন সাজা হবে? মূলত সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ আইন সম্পর্কে মাঠ পর্যায়ে অজ্ঞতার কারণেই এটা হয়েছে। এ আইনজীবী বলেন, যা হবার হয়ে গেছে। আর দেরি না করে এখনই এই আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হোক। তিনি বলেন, আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে আইন না মানার একটা প্রবণতা আছে। কিন্তু আপনি যখন আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করবেন তখন দেখবেন, মানুষ সেই আইন মেনে চলছে। তাই বলবো, চোখ বন্ধ করে এই আইনের ২৫ নম্বর ধারা কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হোক। যারা অকারণে ঘরের বাইরে বের হবেন তাদের একবার সাজা দেওয়া হলে, আর তা জানাজানি হলে দেখবেন জরিমানা বা সাজার ভয়ে আর কেউ বের হচ্ছে না।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মোতাহার হোসেন সাজু কালের কণ্ঠকে বলেন, সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ আইন-২০১৮ করার উদ্দেশ্য হলো সংক্রামক ব্যাধির বিস্তার রোধ ও প্রতিরোধ করতে, এই রোগ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে। কিন্তু এই আইনের প্রয়োগ সেভাবে দেখছি না।

তিনি বলেন, এই আইনের ২৫(১)(খ) ধারায় বলা আছে, সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলের উদ্দেশ্যে মহাপরিচালক, সিভিল সার্জন বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কোনো নির্দেশ পালনে কেউ অসম্মতি জানালে তাকে এই আইনের ২৫(২) ধারায় ৩ মাসের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার সুযোগ আছে।

তিনি বলেন, আইন শৃংখলবাহিনীর সদস্যদের বলব, আপনারা এই আইনটি প্রয়োগ করা শুরু করন। দেখবেন, মানষু আর ঘরের বাইরে আসছে না। তাহলে আপনাদের আর কষ্ট করে দিনরাত রাস্তায় দাঁড়িয়ে পাহারা দিতে হবে না। মানুষ তখন এক জেলা থেকে অন্য জেলা বা এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যাবে না জরিমানা বা শাস্তির ভয়ে। আর এটা হলই দেখবেন সংক্রমণ কমবে।