করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) আক্রান্ত এক রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসাসেবার সঙ্গে নিয়োজিত থাকা নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিন চিকিৎসকসহ ১৮ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে নগরের দামপাড়া এলাকার ৬৭ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির করোনাভাইরাস শনাক্তের পর তাঁদের কোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়।
এছাড়া শনাক্তের আগে ওই ব্যক্তির বাসায় খোঁজ-খবর নিতে যাওয়া এক পুলিশ কর্মকর্তাকেও হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। সবমিলে চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো এক ব্যক্তির করোনাভাইরাস শনাক্তের পর শনিবার পর্যন্ত ১৯ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগ ও পুলিশ সূত্র জানান।
নগরের মেহেদিবাগ সড়কের বেসরকারি ন্যাশনাল হাসপাতালের এসব চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান ও ওয়ার্ডবয়দের হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়।
জানতে চাইলে চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর গতকাল শনিবার দুপুরে কালের কন্ঠকে বলেন, নগরের বেসরকারি ন্যাশনাল হাসপাতালের তিন চিকিৎসক, তিন নার্সসহ হাসপাতালের বিভিন্ন পদে কর্তরত ১৮ জনকে ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে।
বেসরকারি ন্যাশনাল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মোহাম্মদ ইউসুফ কালের কন্ঠকে বলেন, গত ১ এপ্রিল বিকেলে আমাদের হাসপাতালের পাশ্ববর্তী (দামপাড়া এলাকা) এক বাসিন্দা (পুরুষ) সর্দি, কাশি ও নিউমোনিয়া নিয়ে আসেন জরুরী বিভাগে। আমরা উপসর্গ দেখে সন্দেহ করলেও রোগী করোনার বিষয়টি এড়িয়ে যান। তাঁরা (রোগীর পরিবার) এসময় এক চিকিৎসককে দেখানোর কথা বলে কেবিনে ভর্তি হন। ওই দিন বিকালে এ চিকিৎসক কেবিনে দেখতে আসেন। চিকিৎসক এসে একটু দূর থেকে তাঁকে (রোগী) দেখেন এবং কথা বলে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিশ্চিত হন। এসময় চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে (করোনাভাইরাসের চিকিৎসালয়) যেতে বলেন। পরে শুনেছি ওই রোগী অপর একটি বেসরকারি হাসপাতাল হয়ে পরে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে পরীক্ষার পর শুক্রবার রাতে ওই রোগীর করোনাভাইরাস শনাক্তের বিষয়টি জানাজানি হয়।
তিনি আরও বলেন, ৬৭ বছর বয়সী ওই রোগীর করোনাভাইরাস শনাক্তের পর আমাদের এখানে থাকাকালীন (ন্যাশনাল হাসপাতাল) তাঁর আশেপাশে যারা ছিলেন তাদের সবাইকে (১৮ জন) হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়। তবে ওই সময় আমাদের এখানে তাঁর আশেপাশে যারা গিয়েছিলেন (চিকিৎসাসেবায়) তাঁদের সবার গাউন, মাস্কসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা সামগ্রী ছিল। আমাদের এখানে ২/৩ ঘন্টা ছিল।
নগরের চকবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ নিজাম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ওই পরিবারে (করোনাভাইরাস আক্রান্ত) সৌদিআরব ফেরত সদস্যের উপস্থিতির কথা জানার পর গত বৃহস্পতিবার থানার একজন উপ-পরিদর্শককে সেখানে পাঠানো হয়েছিল। আক্রান্ত ব্যক্তির জামাতা সৌদিআরব প্রবাসী। মেয়ে ও তার শাশুড়ি ওমরা হজ্ব পালন শেষে গত ১২ মার্চ চট্টগ্রাম শাহআমানত বিমানবন্দর দিয়ে বাবার (ওই ব্যক্তি) বাসায় তারা আসেন। সেখান থেকে শাশুরি তার বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া চলে যান। আমাদের উপ-পরিদর্শককে ওই ব্যক্তির পরিবার কোনো সহযোগিতা করেনি। জেনারেল হাসপাতালে ভর্তির পর ওই ব্যক্তির করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর তার বাসায় তদন্তে যাওয়া আমাদের এক উপ-পরিদর্শককেও হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই রোগীর গত শুক্রবার করোনাভাইরাস শনাক্তের পর থেকে আক্রান্ত ওই ব্যক্তি যেখানে থাকতেন সেই ভবনসহ আশেপাশের আরও কয়েকটি ভবন এদিন রাত থেকে লকডাউন করেছে প্রশাসন। একই সঙ্গে সাতকানিয়ার বাড়িও লকডাউন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।