বিশ্বে খাদ্য সরবরাহ বিপর্যস্ত, গরু খাচ্ছে মানুষের খাবার

SHARE

ভারতের মহারাষ্ট্রের সাতারা জেলা। কৃষকরা তাদের ষাঁড়কে বাঁধাকপি খাওয়াচ্ছেন, কেউবা গরুকে খাওয়াচ্ছেন স্ট্রবেরি। এটি সাধারণত পশুর খাবার নয়, মানুষই খেয়ে থাকে। কিন্তু সেই খাবার কেন গরুকে খাওয়ানো হচ্ছে? কৃষকদের উত্তর- নষ্ট করে ফেলার চেয়ে গরুকে খাওয়ানো উত্তম নয় কি? আর অন্য কৃষকরা তাই করছে, ট্রাকে ট্রাকে তাজা-পঁচা আঙ্গুর ফেলে সার বানানোর চেষ্টা চলছে।

কৃষক অনিল সালুনখি বলেন, ‘এখানে পর্যটকরা স্ট্রবেরি খেত, এখন তারা নেই বিক্রি করতে পারছি না। আবার বাড়ি থেকে বের হওয়া নিষিদ্ধ হওয়ায় দূরে কোথাও যেতেও পারছি না। ফলে গরুকে খাওয়ানো ছাড়া আর কি করতে পারি।’ আরেক কৃষক প্রভাকর বলেন, ‘ষাঁড়কে বাঁধাকপি খাওয়াচ্ছি কারন হোটেল-রেস্টুরেন্টে এগুলো সরবরাহ করতাম, এখন বন্ধ।’

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ভারতজুড়ে ২১ দিনের দীর্ঘ লকডাউন চলছে। ফলে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল আর ভোক্তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছে না। শুধু ভারত নয়, এমন পরিস্থিতি বিশ্বজুড়ে। এতে মানুষ যেমন চলাচল করতে পারছে না, তেমনি পরিবহন ব্যবস্থাও অনেকটা বন্ধ। ফলে খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা দুটোই বিপর্যস্ত। বাজার সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, এর কারণে বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকট দেখা দেওয়ার পাশাপাশি পণ্যের দাম বেড়ে যাবে।

বিশ্বে লাখ লাখ কৃষক ফসল ফলাতে পারছে না, সামান্য কিছু পরিবহন খাদ্য সরবরাহ করছে। এছাড়া বিমান ও জাহাজ দুই পরিবহন ব্যবস্থাই অচল হয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় মাঠেই নষ্ট হচ্ছে তরমুজ ও ব্লুবেরি। মেক্সিকোর অভিবাসী শ্রমিক না থাকায় সেগুলো তোলা সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে ইউরোপে শ্রমিক না পাওয়ায় ফার্মগুলো ফসল আবাদ করতে পারছে না। বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনাভাইরাস বহুমুখী আঘাত হেনেছে। খাদ্য উৎপাদন, সরবরাহ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে পুরো অর্থনীতিকে গলাটিপে ধরেছে।

অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্যের মধ্যে চাল ও গম কিছুটা সরবরাহ করা গেলেও এগুলোর নতুন আবাদ সম্ভব হচ্ছে না, শ্রমিক সংকট ও অন্যান্য লজিস্টিকস সহায়তা না থাকায়। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সিনিয়র অর্থনীতিবিদ আব্দুল রেজা আব্বাসি বলেন, ‘ফসল আবাদ বিপর্যস্ত হওয়ায় বিপুল জনসংখ্যার দরিদ্র দেশগুলোই এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে।’

অন্তারিওভিত্তিক অরবিট ব্রোকার্স এর প্রেসিডেন্ট ক্যা কেসটেলিনো বলেন, ‘এক দেশ থেকে সরবরাহ করতে পারছে না, তাতে আরেক দেশে খাদ্য ঘাটতি তৈরী হচ্ছে। যেমন কানাডায় বিপুল ভারতীয় শাকসবজি আসে। কিন্তু বিমান পরিবহন প্রায় বন্ধ হয়ে পড়ায় শাকসবজি আমদানি ৮০ শতাংশ কমে গেছে। এর মানে এক দেশে খাদ্যের অপচয় হবে অন্য দেশ পাবে না। যা বিশ্বে বড় ধরণের খাদ্য সংকট তৈরী করবে।’

শ্রমিক সংকট, পরিবহন ব্যবস্থা বিপর্যস্ত ও মানুষের চলাচল বন্ধ থাকায় ফসল উৎপাদন ও সরবরাহ নিয়ে বিপাকে স্পেন, ইতালি, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনাসহ বিশ্বের বহুদেশ। আব্বসি বলেন, ‘এ এক ভয়াবহ পরিস্থিতি, আপনি ফসল ফলাবেন, শ্রমিক নেই, বাজারে পণ্য নেবেন, ট্রাক নেই। আবার আরেকজনের হাতে টাকাও নেই যে খাদ্য কিনবে।’

সূত্র: রয়টার্স