করোনার কারণে বিশেষ ছাড় পেলেন ব্যবসায়ীরা

SHARE

করোনার ক্ষতি পোষাতে ব্যবসায়ীদের জন্য বিশেষ সুবিধার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী জুন পর্যন্ত ঋণ পরিশোধে ছাড় পাবেন ব্যবসায়ীরা। এ সময়ে কোনো ঋণগ্রহীতা ঋণ শোধ না করলেও ঋণের শ্রেণিমানে কোনো পরিবর্তন আনতে পারবে না ব্যাংকগুলো। অর্থাৎ তাঁকে খেলাপি করা যাবে না। একই সঙ্গে রপ্তানির অর্থ প্রত্যাবাসন এবং আমদানি পণ্য দেশে আনার সময়সীমা চার মাস থেকে বাড়িয়ে ছয় মাস করা হয়েছে। এ ছাড়া স্বল্পমেয়াদি সাপ্লায়ার্স ও বায়ার্স ক্রেডিট এবং রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের ঋণ পরিশোধের সময়সীমাও বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া ঋণ পুনঃ তফসিল ও এক্সিটসংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালার আওতার সুবিধাপ্রাপ্ত ঋণের প্রভিশন সংরক্ষণেও ছাড় দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক সার্কুলারে এসব সুবিধার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

বর্তমানে কোনো ঋণ ছয় মাস অপরিশোধিত থাকলে সাব স্ট্যান্ডার্ড, ৯ মাস থাকলে নিম্নমান এবং এক বছর থাকলে ক্ষতিজনক মান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ ছাড়া সাব স্ট্যান্ডার্ডের আগের অবস্থা স্পেশাল ম্যানশন অ্যাকাউন্ট বা এসএমএ হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু করোনাভাইরাসে ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় ঋণগ্রহীতাদের জানুয়ারি-জুন সময়ে কিস্তি পরিশোধে বিশেষ ছাড় দিয়ে গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে সার্কুলার জারি করা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ববাণিজ্যের পাশাপাশি বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আমদানি-রপ্তানিসহ দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে করোনাভাইরাসের কারণে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। ফলে অনেক ঋণগ্রহীতাই সময়মতো ঋণের অর্থ পরিশোধে সক্ষম হবেন না বলে ধারণা করা যাচ্ছে। এতে চলমান ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার এবং দেশে সামগ্রিক কর্মসংস্থান বাধাগ্রস্ত হবে—এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে, গত ১ জানুয়ারি ঋণের শ্রেণিমান যা ছিল, আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত ওই মানেই রাখতে হবে। এর চেয়ে বিরূপ মানে শ্রেণীকরণ করা যাবে না। ব্যাংক কম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ৪৯ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করা হলো। এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে।

অন্যদিকে করোনাভাইরাসের প্রভাবে তৈরি হওয়া বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে অনেক দেশ থেকে পণ্য খালাসে দেরি হচ্ছে। আবার বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানিকারকরা দেরিতে পণ্য পাঠাতে বলছেন। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগের আরেক সার্কুলারে রপ্তানির অর্থ দেশে আনার সর্বোচ্চ সময়সীমা চার মাস থেকে বাড়িয়ে ছয় মাস করা হয়েছে। একইভাবে আমদানির ক্ষেত্রে এলসির দেনা পরিশোধের পর দেশে পণ্য আনার সময়সীমাও চার মাস থেকে বাড়িয়ে ছয় মাস করা হয়েছে। বর্তমানে ১২০ দিনের মধ্যে রপ্তানির অর্থ দেশে আনার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। একইভাবে আমদানির ক্ষেত্রে এলসির দেনা পরিশোধের পর সর্বোচ্চ ১২০ দিনের মধ্যে পণ্য দেশে আনার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আমদানি পণ্য এবং রপ্তানির অর্থ দেশে আনার সর্বোচ্চ সময়সীমা বাড়ানোর পাশাপাশি স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ানো হয়েছে।

বর্তমানে ব্যাংকগুলো ছয় মাসের জন্য বাকিতে পণ্য আমদানির ব্যাক টু ব্যাক এলসি খুলতে পারে। এই সময়সীমা আরো ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। ফলে আমদানিকারকরা আমদানি বিল পরিশোধে বাড়তি ছয় মাস সময় পবেন। অন্যদিকে রপ্তানিকারকদের উৎসাহিত করতে ১৯৮৯ সাল থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় বিশেষ ঋণ সুবিধা দিয়ে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল বা ইডিএফ নামে পরিচিত এ তহবিল থেকে ছয় মাস মেয়াদে ঋণ নেওয়া যায়। পরে সময় বাড়িয়ে ৯ মাস করা যায়। এখন তা আরো তিন মাস বাড়ানো যাবে। এর মানে প্রথমেই একজন রপ্তানিকারক ৯ মাস মেয়াদে ঋণ নিতে পারবেন। পরে আরো তিন মাস বাড়িয়ে এক বছর করা যাবে। এ ছাড়া করোনাভাইরাসের কারণে রপ্তানির ৯০ শতাংশ অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই আনতে পারবেন রপ্তানিকারকরা।

ঋণ পুনঃ তফসিল ও এক্সিটসংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালায়ও ছাড় দেওয়া হয়েছে। আরেক সার্কুলারে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলোর মূলধন সংরক্ষের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে ঋণ পুনঃ তফসিল ও এককালীন এক্সিটসংক্রান্ত বিআরপিডির বিদ্যমান সার্কুলারের আওতায় পুনঃ তফসিল ও এককালীন এক্সিট সুবিধাপ্রাপ্ত ঋণগুলো এসএমএ মানে শ্রেণীকরণ করতে হবে।