শিশু জিয়াদের মৃত্যু : চার আসামি হাইকোর্টে খালাস

SHARE

পাঁচ বছর আগে শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনিতে পরিত্যক্ত পানির পাইপে পড়ে শিশু জিয়াদের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় নিম্ন আদালতে ১০ বছর করে সাজাপ্রাপ্ত চার আসামিকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার এ রায় দেন। যাদের খালাস দেওয়া হয়েছে তারা হলেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এস আর হাউসের মালিক আবদুস সালাম, রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন ও ইলেকট্রিশিয়ান জাফর আহমেদ। তাদের প্রত্যেককে ১০ বছর কারাদণ্ডের পাশাপাশি দুই লাখ টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরো দুই বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছিল ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালত।

২০১৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার আদালতের দেওয়া এ রায়ের বিরুদ্ধে সাজাপ্রাপ্তরা আপিল করেন। এই আপিলের ওপর শুনানি শেষে আদালত আসামিদের খালাস দিয়ে রায় দেন।

পরিত্যক্ত পানির পাইপ ঢেকে রাখা আসামিদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না এবং এরইমধ্যে অন্য একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে শিশু জিয়াদের পরিবারকে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ায় হাইকোর্ট আসামিদের খালাস দিয়েছেন বলে জানান আইনজীবীরা। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আমিনুল ইসলাম।

আদালতে আসামিপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মনসুরুল হক চৌধুরী, এস এম শাহজাহান, এম সারোয়ার আহমেদ, আনোয়ারুল ইসলাম শাহীন ও এম আলী মর্তুজা। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আমিনুল ইসলাম।

২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে খেলার সময় রেলওয়ে মাঠের পরিত্যক্ত পানির পাম্পের পাইপে পড়ে যায় জিয়াদ। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা জিয়াদের মরদেহ উদ্ধারে ব্যর্থ হয়। এক পর্যায়ে উদ্ধার অভিযান স্থগিত করে। এরপর কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রায় ২৩ ঘণ্টা পর ২৭ ডিসেম্বর বেলা তিনটার দিকে জিয়াদের মরদেহ উদ্ধার করে। এ ছাড়া জিয়াদের পাইপ লাইনে পড়া দিয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালকসহ দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা সন্দেহ প্রকাশ করেন। জিয়াদের পিতাসহ বেশ কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। এ অবস্থায় জিয়াদের পিতা নাসির উদ্দিন ফকির শাহজাহানপুর থানায় মামলা করেন। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে কর্তব্যে অবহেলা ও বিপজ্জনক গভীর পাইপের মুখ খোলা রাখার অভিযোগ আনা হয়। এ মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত চারজনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেয় এবং দুই আসামিকে খালাস দেয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন সাজাপ্রাপ্তরা।

এ ছাড়া চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আবদুল হালিমের করা এক রিট আবেদনে হাইকোর্ট ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি এক রায়ে ক্ষতিপূরণ হিসেবে জিয়াদের পরিবারকে ২০ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দেন। রায়ের কপি পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালককে ১০ লাখ এবং ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ও পরিচালককে (অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণ) ১০ লাখ টাকা দিতে বলা হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন রেলওয়ে মাহপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন। এরপরও টাকা না দেওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করা হয়। এ মামলায় হাইকোর্ট রেলওয়ের ডিজিকে তলব করেন। এ অবস্থায় তারা জিয়াদের পরিবারকে ২০ লাখ টাকা দেন। ওই দুজন ২০১৮ সালের ১৪ আগস্ট হাজির হয়ে টাকা দেওয়ার তথ্য আদালতকে জানান এবং আদালতে নিঃশর্ত ক্ষমা চান। এরপর আদালত তাদের ক্ষমা করে দেন।