নাটোরের গৃহবধূ হালিমা ও তার শিশু সন্তানকে হত্যা করলো কে?

SHARE

নাটোরের নলডাঙ্গার বাঁশিলা উত্তর পাড়ার গৃহবধূ হালিমা খাতুন ওরফে শারমিন (২০) এবং তার দুইবছরের প্রতিবন্ধী ছেলে আব্দুল্লাহকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি মো. মাহবুল আলম মুক্তাকে গত ১৬ মে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এই আসামি হত্যার কথা স্বীকার করে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেয়। হয়তো এখানেই হালিমা হত্যার রহস্যের সমাধান হতে পারতো। কিন্তু তা হয়নি। এই হত্যার দায় স্বীকার করে আনোয়ার বাবু নামের অপর এক ব্যক্তি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। আর এতেই বেঁধেছে ঝামেলা। প্রশ্ন উঠেছে হালিমাকে হত্যা করলো কে? একই ঘটনায় ভিন্ন দুই ব্যক্তির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়া নিয়ে পুলিশের তদন্ত কার্যক্রম নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ অবস্থায় ওই মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের এসআই মো. আমিনুর রহমানকে ডেকে পাঠিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামীকাল মঙ্গলবার তার হাইকোর্টে হাজির হবার জন্য দিন ধার্য রয়েছে।

জানা যায়, গত ১৫ মে রাতে গৃহবধূ হালিমাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। এরপর তার অবুঝ সন্তান আব্দুল্লাহকেও হত্যার পর পার্শ্বের পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় পরদিন ১৬ মে জন্য নিহত গৃহবধূর পিতা ওমর ফারুক বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। মামলায় নিহতের দেবর মাহবুল আলম মুক্তাকে আসামি করা হয়। পুলিশ এদিনই আসামি মুক্তাকে গ্রেপ্তার করে। এরপর হত্যার কথা স্বীকার করে মুক্তা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। গত অক্টোবর পর্যন্ত সকলেই জানতেন যে হালিমা ও তার ছেলেকে হত্যা করেছে মুক্তা। কিন্তু গত ১৯ অক্টোবর পুলিশ গ্রেপ্তার করে ভয়ংকর এক খুনি আনোয়ার হোসেন বাবু ওরফে বাবু শেখ ওরফে আনার ওরফে কালুকে। কালুর বাড়ি একই জেলার রানীনগর উপজেলার হরিশপুর গ্রামে। তার পিতা জাহের আলী। তাকে গ্রেপ্তারের পরই বেরিয়ে আসে একের পর এক হত্যাকান্ডের ঘটনা। এই বাবু শেখই আদালতে স্বীকারেক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে হালিমা ও তার ছেলেকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। আদালতে দেওয়া তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি অনুযায়ী সে ১০টি খুন করেছে। এরমধ্যে একটি শিশু ও ৯ জন নারী। এই হত্যার আগে ৫ জনকে সে ধর্ষণ করে। নাটোর পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী কালু মাছ শিকারীর বেশে গ্রামে গ্রামে ঘুরে তার ‘শিকার’ খুঁজতো। কালুকে গ্রেপ্তার ও হত্যাকান্ডের ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে।

এ অবস্থায় হালিমা হত্যায় কারাবন্দি মুক্তার পক্ষ থেকে হাইকোর্টে লিখিতভাবে বিষয়টি জানানো হয়। তারপক্ষে অ্যাডভোকেট রাশেদ খান বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন। এরপর হাইকোর্ট গত ৪ ডিসেম্বর এক আদেশে মুক্তাকে একবছরের জামিন দিয়েছেন। একইসঙ্গে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আমিনুর রহমানকে তলব করেছেন।

এবিষয়ে আদালতের আদেশে বলা হয়, আমরা এসআই আনিসুর রহমানের তদন্ত কার্যক্রম নিয়ে আশ্চার্যান্বিত হয়েছি। একজন তদন্ত কর্মকর্তা হয়ে তিনি কিভাবে নিশ্চিত হলেন যে মুক্তাই হত্যাকারী? তিনি নিশ্চিত না হয়ে কিভাবে মুক্তাকে জবানবন্দী দিতে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হাজির করলেন?

সংশ্লিষ্ট আদালতের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী কালের কণ্ঠকে বলেন, আদালত মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে হাজির হতে আদেশ দিয়েছেন।