ট্রাম্পকে খুশি করতে ন্যাটোর ওপর প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির চাপ

SHARE

আসন্ন ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনকে সামনে রেখে সদস্য দেশগুলোর প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর লক্ষ্যে জোর চাপ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে আলোচনায় তীব্র সুরে আহ্বান জানান, যেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাওয়া অনুযায়ী জিডিপির ৫ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়ের প্রতিশ্রুতি নেওয়া হয়।

তবে এই উচ্চমাত্রার ব্যয় অনেক দেশের জন্যই বাস্তবসম্মত নয়। এ অবস্থায় ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুট একটি আপসের প্রস্তাব দিয়েছেন, যাতে বলা হয়েছে—সদস্য দেশগুলো ২০৩২ সালের মধ্যে জিডিপির ৩.৫ শতাংশ সামরিক খাতে এবং অতিরিক্ত ১.৫ শতাংশ নিরাপত্তা অবকাঠামোসহ সংশ্লিষ্ট খাতে ব্যয় করবে। এই প্রস্তাব ইতোমধ্যেই বেশিরভাগ সদস্য দেশের মধ্যে সমর্থন পেয়েছে, যদিও কয়েকটি দেশ এখনও দ্বিধায় রয়েছে।

বিশেষ করে স্পেন জানিয়েছে, তারা এখনো বর্তমান লক্ষ্য—জিডিপির ২ শতাংশ ব্যয়—পূরণেই হিমশিম খাচ্ছে। তাই অতিরিক্ত ব্যয়ের জন্য সময়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব তুলেছে তারা। কিছু দেশ চাইছে, বছরে ধাপে ধাপে ০.২ শতাংশ করে ব্যয় বাড়ানোর বাধ্যবাধকতাও যেন বাদ দেওয়া হয়।

রুটের প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষেও গ্রহণযোগ্য বলে জানানো হয়েছে। তবে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জোর দিয়েছেন, শুধু প্রতিশ্রুতি নয়—বাস্তব পরিকল্পনা, বাজেট এবং অগ্রগতির প্রমাণ চায় ওয়াশিংটন।
নতুন সামরিক লক্ষ্য ও ইউক্রেন নিয়ে দ্বিধা

এই সম্মেলনে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে—রাশিয়ার হুমকি মোকাবিলায় ন্যাটোর নতুন অস্ত্র সক্ষমতা নির্ধারণ। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সদস্য দেশগুলোর গড় জিডিপি খরচ দাঁড়াবে ৩.৫ থেকে ৩.৭ শতাংশের মধ্যে।

তবে প্রতিরক্ষা ব্যয়ের আলোচনা ছাড়াও এখন জোটকে বিভক্ত করে রেখেছে ইউক্রেন ইস্যু। ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তনের পর যুক্তরাষ্ট্রের কিয়েভবিরোধী মনোভাব প্রকাশ্য, যার ইঙ্গিত মিলেছে হেগসেথের সর্বশেষ পদক্ষেপে। ইউক্রেনের মিত্রদের এক বৈঠকে তিনি অংশ নেননি, যা পরিষ্কার বার্তা দিচ্ছে—যুক্তরাষ্ট্র এখন ইউক্রেন থেকে সরে আসছে।

ন্যাটো সদস্যদের অনেকেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে এই মাসের শীর্ষ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানাতে জোর দিচ্ছে, সমর্থনের প্রতীক হিসেবে। যদিও এখনো পর্যন্ত ন্যাটো শুধু জানিয়েছে, ইউক্রেন প্রতিনিধিত্ব করবে—তবে জেলেনস্কির উপস্থিতি নিয়ে কিছু বলেনি।

সব মিলিয়ে, এই বছরের ন্যাটো সম্মেলন কেবল প্রতিরক্ষা ব্যয় নয়, বরং ইউক্রেন যুদ্ধ ও রাশিয়ার মোকাবিলায় জোটের ভেতরের ঐক্য এবং অবস্থান পুনঃনির্ধারণের বড় মঞ্চ হয়ে উঠতে চলেছে।