আমাদের গুপ্তচরই বাগদাদির অন্তর্বাস চুরি করেছে : কুর্দি নেতা

SHARE

কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স বা এসডিএফ বলছে, তাদের একজন গুপ্তচর আবু বকর আল-বাগদাদির অন্তর্বাস চুরি করেছিল এবং সেখান থেকে নেয়া ডিএনএ-র নমুনার সাথে মিলিয়ে তার পরিচয় নিশ্চিত করা হয়েছে। আর এরপরই যুক্তরাষ্ট্র অভিযান চালিয়ে বাগদাদিকে হত্যা করতে পেরেছে।

এসডিএফের একজন শীর্ষস্থানীয় উপদেষ্টা পোলাট ক্যান দাবি করেছেন, ইসলামিক স্টেটের এই নেতা কোথায় অবস্থান করছেন সেটা খুঁজে বের করতে তাদের সোর্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

তার পরেই যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশেষ বাহিনী সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইদলিব প্রদেশে আল-বাগদাদিকে হত্যার অভিযান চালায়।

এই অভিযানের সময় আল-বাগদাদি নিজের শরীরে বেঁধে রাখা বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মহত্যা করেন।

কুর্দি বাহিনীর এই দাবিকে ততোটা গুরুত্ব দিচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন ২৭শে অক্টোবর আইএস নেতাকে হত্যা করার কথা ঘোষণা করেন, তখন তিনি বলেছিলেন, কুর্দি বাহিনী এমন তথ্য সরবরাহ করেছিল যা তাদেরকে এই অভিযান চালাতে সাহায্য করেছে, তবে এই অভিযানে তাদের কোন সামরিক ভূমিকা ছিলো না।

পোলাট ক্যান সোমবার এক টুইটার বার্তায় দাবি করেন, এই অভিযানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল এসডিএফের।

‘আল-বাগদাদির কাছে পৌঁছানো, তিনি যেখানে আছেন সেই জায়গাটিকে শনাক্ত করা – এধরনের সব গোয়েন্দা তৎপরতাই সম্ভব হয়েছে আমাদের কাজের ফলে। আমাদের গোয়েন্দা সূত্রগুলো অভিযান সমন্বয়ের সাথে জড়িত ছিল, উপর থেকে বোমা ফেলা, তাতে অংশ নেয়াসহ এই অভিযান সফল করতে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমাদের বাহিনী কাজ করেছে,’ বলেন তিনি।

পোলাট ক্যান তার টুইটে লিখেছেন, ‘আমাদের নিজেদের সোর্স – যিনি আল-বাগদাদির কাছে পৌঁছাতে পেরেছিলেন – তার একটি আন্ডারওয়্যার চুরি করে নিয়ে এসেছিলেন ডিএনএ পরীক্ষার জন্য, যাতে শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যায় যে তিনিই আল-বাগদাদি।’

তিনি আরো বলেছেন, ইসলামিক স্টেটের নেতা কোথায় আছেন সেটা খুঁজে বের করতে এসডিএফ যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গুপ্তচর সংস্থা সিআইএর সাথে ১৫ই মে’র পর থেকে কাজ করে আসছিল।

এক পর্যায়ে এসডিএফের গোয়েন্দারা জানতে পারেন যে আল-বাগদাদি ইদলিব প্রদেশের বারিশা গ্রামে লুকিয়ে আছেন।

পোলাট ক্যান বলেন, তাদের সোর্স এও জানতে পেরেছিল যে আইএস নেতা জারাবলুসের নতুন একটি গোপন আস্তানায় চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিল।

ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের লড়াই-এ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মিত্র বাহিনী এসডিএফ।

কিন্তু এমাসেরই শুরুর দিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সিরিয়ার উত্তরাঞ্চল থেকে তার সৈন্য প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা ঘোষণা করেন।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার করে নেওয়ার ফলেই তুরস্কের সামরিক বাহিনী সিরিয়ায় ঢুকে এসডিএফের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর সুযোগ পায়।

অভিযান সম্পর্কে কী জানি?
আল-বাগদাদিকে হত্যার এই অভিযান সম্পর্কে ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য মিত্র বাহিনীকে আগেই জানানো হয়েছিল।

তাদের মধ্যে রয়েছে উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় তৎপর তুর্কী, ইরাকি ও কুর্দি বাহিনী এবং রাশিয়া যারা ইদলিব প্রদেশের আকাশে বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

মার্কিন সৈন্যরা সেখানে পৌঁছেই আল-বাগদাদিকে আত্মসমর্পণের আহবান জানায়।

আল-বাগদাদি তখন একটি সুড়ঙ্গ দিয়ে পালিয়ে যায়।

মার্কিন সৈন্যরা তখন দরজা দিয়ে ভেতরে না ঢুকে দেয়ালে গর্ত তৈরি করেন। তারা মনে করেছিলেন দরজায় বোমা পাতা থাকতে পারে।

এক পর্যায়ে পলায়নপর আল-বাগদাদি নিজের শরীরে বেঁধে রাখা আত্মঘাতী ভেস্টের বিস্ফোরণ ঘটান এবং সুড়ঙ্গের ভেতরেই মারা যান।

ট্রাম্প বলেছেন, বিশেষ বাহিনী দেহাবশেষ নিয়ে ডিএনএ পরীক্ষা চালায় এবং ফলাফল থেকে আল-বাগদাদির পরিচয় সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হয়।

অভিযানের সময় সৈন্যদের সাথে কারিগরি লোকজনও ছিলো যারা তাদের সাথে করে আল-বাগদাদির ডিএনএ নিয়ে গিয়েছিল।

খবরে বলা হচ্ছে, কারো মুখ দেখে তাকে চিহ্নিত করার প্রযুক্তি ও ডিএনএ পরীক্ষার ছোট্ট একটি যন্ত্র হেলিকপ্টারে করে নিয়ে যেতে পারে।

কারিগরি লোকজন হেলিকপ্টারে করে আল-বাগদাদির ছিন্নভিন্ন দেহের কিছু অংশ সাথে করে নিয়ে এসেছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফ জেনারেল মাইক মাইলে সোমবার বলেছেন, আমেরিকান কর্মকর্তারা তার দেহাবশেষের ‘অন্তিম ব্যবস্থা’ সম্পন্ন করেছে।

এর বিস্তারিত তিনি আর কিছু বলেন নি।