দুই শিশুসহ মুসলিম নারীকে আশ্রয় দিয়েছেন হিন্দু পুরোহিত

SHARE

ভারতে যখন একের পর ধর্মীয় সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। ঠিক সেই সময়ে উঠে এসেছে হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতির নজির। জানা গেছে, মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার চোঁয়া গ্রামে হিন্দু এক পুরোহিতের বাড়িতে আশ্রয় পেয়েছেন মুসলিম নারী।

গরিব পুরোহিত সুহাস রায় চৌধুরির সংসার চলে পূজা-অর্চনা করে পাওয়া অর্থ দিয়ে। ঘরে তার স্ত্রী আর এক মেয়েসহ পাঁচ জনের সংসার। নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা। তার ওপর থাকার বলতে এক চিলতে ঘর।

আট মাস আগে সুহাসের মেয়ে কাকলি জানতে পারেন, তাদের গ্রামের সখিনা বিবিকে তার স্বামী মেরে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে ঘরে তালা মেরে চলে গেছে। সখিনা তার ১০ বছরের ছেলে, আর এক বছরের মেয়েকে নিয়ে সারাদিন বাড়ির বাইরে বসে থাকে। খাবারও জোটে না। সন্ধ্যা হলেও তার দিকে কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি।

কাকলির বন্ধু সখিনা। খবর পেয়ে বাবা-মাকে বলতেই তারা সখিনাকে ঘরেনিয়ে আসতে বলেন। সেই থেকে আট মাস ধরে ব্রাহ্মণ পুরোহিতের ‘‌মেয়ে’‌ হয়ে থাকছেন সখিনা বিবি।

জানা গেছে, সখিনার বাড়ি জলঙ্গিতে। বাবা-মা বেঁচে নেই। চোঁয়ার রাজমিস্ত্রি নূর ইসলামের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল। সখিনার অভিযোগ, সব সময় টাকার জন্য অত্যাচার করত স্বামী। হঠাৎ বলে দেড় লাখ টাকা দিতে হবে। আমি বলি আমার ভাইয়েরা সেটা পারবে না। তখন বলে ব্যাংক থেকে লোন করে দিতে। আমি রাজি হইনি বলে আমাকে মারধর করে ছেলেমেয়েসহ বের করে দেয়। কাকলি এর পর তাদের বাড়িতে নিয়ে আসে।

সখিনা আরো বলেন, আমার খারাপ লাগত, ওরা ব্রাহ্মণ। পূজা করে। আমি মুসলিম। কীভাবে থাকব? কিন্তু ওরা কাছে টেনে নিয়েছে। আর কোনো দ্বিধা নেই। আমরা একসঙ্গে খাই, ঘুমাই। আমার কোনো প্রতিবেশী আশ্রয় দেয়নি। আমার জন্য ওদের কত কু-কথা শুনতে হয়েছে।’

পুরোহিত সুহাস রায় চৌধুরি বলেন, হিন্দু-মুসলিম কোনোদিন মানিনি। একটা মেয়ে তার সন্তান নিয়ে অসহায় হয়ে রাস্তায় পড়ে আছে। তার পাশে দাঁড়াব না? তখন ওই মেয়ে কোন ধর্মের, কোন জাতের এসব দেখব? আমি পারিনি। মেয়েকে বলেছিলাম, সখিনাকে নিয়ে আয়। ‌আমার কষ্টের সংসার। পাঁচজনের খাবার জোগাড় করতে কষ্ট হয়। সখিনারা তিনজন। আমাদের ঠিক চলে যাচ্ছে।

তবে এত সহজে সবকিছু হয়নি। মুসলিম গৃহবধূকে আশ্রয় দেয়ার জন্য নানা কথাও শুনতে হয়েছে। এমনও বলা হয়, আর পূজা করতে সুহাসকে নেয়া হবে না। মাঝে ঝামেলা করতে এসেছিল সখিনার স্বামী নূর ইসলাম। কিন্তু ওসবকে গুরুত্ব দেননি সুহাস।

সুহাসের স্ত্রী ইলা রায় চৌধুরি বলেন, কারো কোনো কুকথা আমরা গ্রাহ্য করিনি। কাকলি যেমন আমার মেয়ে, সখিনাও আমার আরেক মেয়ে। আমার মেয়েও স্বামী পরিত্যক্তা। ওই কষ্ট আমি বুঝি। সখিনাও স্বামী পরিত্যক্তা। আমরা দুঃখকষ্ট নিয়ে আমাদের মতো আছি, থাকব।

সখিনার বন্ধু কাকলির একটাই আবেদন, সরকার কি সখিনার জন্য কিছু করতে পারে না?

ওই হরিহরপাড়ায় এক সময় সমাজবিরোধীদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে সাত জন শহিদ হয়েছিলেন। সেই হরিহরপাড়া দেখাল সম্প্রতির এক ছবি। এমন ছবি বাঙালির সম্প্রীতিরই উদাহরণ।‌