সবার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে গেছে মুঠোফোন। দ্রুত তথ্য বা বার্তা পাঠানো, একে অপরের খোঁজ নেয়া এমনকি সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে এখন মুঠোফোনই একমাত্র ভরসা। প্রয়োজনে ও অপ্রয়োজনে মুঠোফোনে কথা বলতে হয় সবার। কিন্তু অতিরিক্ত সময় ধরে কথা বললে আপনার শরীরে কিছু মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে, সে বিষয়গুলো জেনে নেওয়া জরুরি।
মুঠোফোনে অতিরিক্ত কথা বললে ব্যবহারকারীর স্বাস্থ্যের ওপর নানা প্রভাব পড়ে। জনপ্রিয় সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইট দ্যা হাফিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুঠোফোনে অতিরিক্ত কথা বলায় শারীরিক ও মানসিক নানা সমস্যায় পড়ছেন ব্যবহারকারীরা। ফোন হারানোর ভয়, বারবার ফোন আসা, মুঠোফোন সব সময় ঠিক জায়গায় আছে কিনা তা নিয়ে সতর্ক থাকায় মনের মধ্যে জন্ম নেয় অস্থিরতা। গবেষকেরা এ অস্থিরতার নাম দিয়েছেন ‘নোমোফোবিয়া’; যার পুরো অর্থ ‘নো মোবাইল-ফোন ফোবিয়া’।
বর্তমানে যুক্তরাজ্যের ৫৩ শতাংশ এবং ২৯ শতাংশ ভারতীয় উপমহাদেশের তরুণরা এ রোগের শিকার। পাঁচ বছর আগেও এই রোগের অস্তিত্ব ছিল না। মনোবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, দুশ্চিন্তা, কাজের চাপ আর মুঠোফোন নিয়ে অনেকের দিন কাটে। তাই রাতে বিছানার পাশে মুঠোফোন না রাখার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকেরা।
এই সমস্যার আরও একটি দিক হলো চোখের জ্যোতি কমে যাওয়া। চোখের খুব কাছে রেখে অতিরিক্ত সময় ধরে স্মার্টফোন ব্যবহার করলে জিনগত সমস্যা দেখা দিতে পারে। গবেষকেরা একে ‘এপিজেনেটিকস’ সংক্রান্ত বিষয় বলেন। গবেষকেরা দীর্ঘক্ষণ ধরে স্মার্টফোনে চোখ না রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন। দৈনিক কিছু সময় মোবাইল ফোন থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেন। স্মার্টফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে বয়স বিবেচনার বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের গবেষকেরা। কানে কম শোনা মুঠোফোন ব্যবহারের ফলে কানের সমস্যা তৈরির বিষয়টি অভ্যাসের ওপর নির্ভর করে। হেডফোন ব্যবহার করে উচ্চশব্দে গান শুনলে অন্তকর্ণের কোষগুলোর ওপর প্রভাব পড়ে এবং মস্তিষ্কে অস্বাভাবিক আচরণ করে। একসময় বধির হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। কানের ভেতর অতিরিক্ত চুলকাতেও পারে।
বেশি সময় ধরে মেসেজ বা বার্তা লিখলে আঙুলের জয়েন্টগুলোতে ব্যথা হতে পারে। অনেকে কাজের সময় মুঠোফোন ব্যবহার করতে গিয়ে কাঁধ ও কানের মাঝে ফোন রেখে কথা বলেন। অভ্যাস গুলো অব্যাহত থাকলে হাড় অবস হয়ে আর্থরাইটিসের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে পুরুষের প্রজননতন্ত্রেরও।
গবেষকদের দাবি, মুঠোফোন থেকে নির্গত ক্ষতিকর তরঙ্গ শুক্রাণুর ওপর প্রভাব ফেলে এবং শুক্রাণুর ঘনত্ব কমিয়ে দিতে পারে। যখন তখন ফোন বেজে ওঠা বা উদ্বিগ্নতা এই সমস্যার জন্য দায়ি।
মার্কিন গবেষকেরা পরীক্ষা করে দেখেছেন,টয়লেট সিটের তুলনায় ১০ গুণ বেশি ব্যাকটেরিয়া থাকে মুঠোফোনে। মুঠোফোন নিয়মিত পরিষ্কার না করায় এটি জীবাণুর অভয়ারণ্য হয়ে ওঠে। নিয়মিত মুঠোফোন পরিষ্কার করলে এ সমস্যা থেকে দূরে থাকা যায়।