ইয়েমেন বিপর্যয়ে প্রতি মিনিটে মারা যাচ্ছে ১২ শিশু

SHARE

মানব ইতিহাসের অন্যতম প্রাচীন বসতি আর আরব বিশ্বের সবচেয়ে গরীব দেশ ইয়েমেন। গৃহযুদ্ধে দেশটি পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এর ফলে দেশটিতে দেখা দিয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানব-সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয়। গত তিনবছরে ২ লাখ ৩৩ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার শিশু নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।

বর্তমানেও থেমে নেই দেশটিতে নিহতের সংখ্যা। প্রতি ১২ মিনিটে মারা যাচ্ছে একটি শিশু। সেই হিসেবে এক দিনে মারা যাচ্ছে একশ ২০টি শিশু। এ ছাড়াও পাঁচ বছরের নীচের চার লাখ শিশু চরম অপুষ্টিতে ভুগছে, যা তাদের জীবনকে আরো ঝুঁকিতে ফেলছে।

গৃহযুদ্ধের ফলে দেশটিতে দেখা দিয়েছে চরম দুর্ভিক্ষ। এর আগে ১৯৮৪ সালে এই ধরনের দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিলো ইথিওপিয়ায়। বর্তমানে ইয়েমেন এক কাপ দুধ আর একটি রুটি পাওয়াকে বিলাসিতা হিসেবা বর্ণনা করছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।

খাদ্যদ্রব্যের অতিরিক্ত মূল্য বৃদ্ধি এবং সামরিক অবরোধের কারণে লাখ লাখ মানুষ না খেয়ে থাকছেন দেশটিতে। কিন্তু টিভিতে এই ধরনের খবর প্রকাশ করাই হয় না। তারা এই যুদ্ধকে ভুলে গেছে। তবে শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর সৌদি আরবে কাছে অস্ত্র বিক্রির বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করছে কিছু সংবাদ মাধ্যম। কারণ হুথি যোদ্ধাদের ওপর বোমা হামলা করতে সৌদি আরব সরকার ইয়েমেনের সরকারি বাহিনীকে সমর্থন করছে। সরকারি বাহিনী হুথি যোদ্ধাদের সাথে যোদ্ধ করে যাচ্ছে কিছু পয়েন্টে। ফলে দেশটির দুর্ভিক্ষ কবলিত অঞ্চলটিতে খাবার সহযোগিতা পৌঁছাতে পারছে না।

যুদ্ধ কবলিত অঞ্চলে বসবাস করা আব্দুল্লাহ নামের এক নাগরিক তার নিজের বসত বাড়ি ছেড়ে পারি জমিয়েছেন মারিব ক্যাম্পে। যুদ্ধ চলাকালে তিনি তার পরিবার ও স্বজনদের নিয়ে পালিয়ে যান নিজের জীবন বাঁচাতে। তিনি জানান, যুদ্ধাদের বুলেটে অথবা মাইনের আঘাত থেকে বাঁচতে পালিয়া আসা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না। আমাদের হাতে কোনো ধরেনের খাবার ছিলো না। ওই আঞ্চলে বসবাস করলে আমাদের না খেয়ে মরতে হতো। তাই আমরা বাধ্য হয়েই পালিয়ে এসেছি।

আব্দুল্লাহ আরো জানান, কিছু না খেয়ে ওই অঞ্চলে বসবাস করা অসম্ভব ছিলো। আমারা সবাই ক্ষুধার্ত ছিলাম। তাই আমাদের সবারই চলে আসা উচিত ছিলো। আবাক করার মতো বিষয় হলেও সত্যি যে, আমাদের হাতে যে খাবার ছিলো তা ছিনিয়ে নিয়ে যায় বিদ্রোহীরা।

ইয়েমের সানায় একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন ব্রিট সুলতানা বেগম। যুদ্ধ কবলিত অঞ্চলের দুঃখজনক ঘটনাগুলো দেখেছেন তিনি। তিনি জানান, ইয়েমেনের মানুষ এখন না খেয়ে জীবনযাপন করছেন। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে এই আবস্থার জন্য দায়ি মানুষই। এই ধারণা ভুল নয়। দেশটির ২০ মিলয়নেরও বেশি মানুষ না খেয়ে বসবাস করছেন। কোনো ধরনের মানবিক সহয়তা ছাড়াই বসবাস করেছেন তারা। খাবারের সহায়তা ছাড়া তারা যেকোনো সময় মারা যেতে পারেন।

ইউনিসেফের আঞ্চলিক পরিচালক জিয়র্ট কাপপেলারি এই অবস্থাকে ‘জীবন্ত নরক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

ইয়েমেনে নিয়োজিত জাতিসংঘের মানবিক সহায়তার সমন্বয়কারী লিস গ্রান্ডে বলেন, ইথিওপিয়ার মতোই ইয়েমেনে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। ২১ শতাব্দীতে বসবাস করে এই ধরনের পরিস্থিতিতে পড়া আসলেই দুঃখজনক। মানুষ হিসেবে এই ঘটনাগুলো সহ্য করার মতো নয়।

ইয়েমেনে যা কিছুই ঘটছে, তা যেন আঞ্চলিক দেশগুলোরই ব্যাপার। তবে দেশটি অস্থিরতার মধ্যে থাকলে তা পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য হামলার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে।

ইয়েমেনের আল কায়েদাকে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর জঙ্গি সংগঠন বলে বলছে পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। কারণ তাদের প্রযুক্তিগত সুবিধা এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগ আছে।

তবে ইয়েমেনের এই সংকটকে সৌদি আরব আর ইরানের মধ্যে আঞ্চলিক ক্ষমতার লড়াই হিসাবেও দেখা হচ্ছে।

কৌশলগত ভাবে ইয়েমেনের নিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ দেশটি বাব আল-মানডাবের ওপর বসে আছে, যা রেড সি আর গালফ অফ এডেনের সংযোগস্থল। এখান থেকেই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেলের সরবরাহ হয়ে থাকে।