বর্ধমানে মন্দির তৈরি করছে মুসলিমরা, মসজিদ নির্মাণে সহায়তা হিন্দুদের

SHARE

প্রতি বছর দুর্গাষ্টমীর দিনভারতের বর্ধমানের সংখ্যালঘু নারীরা ভিড় জমান মন্দিরে। কেউ কেউ মানতের পূজাও করেন। উরস উৎসবে আবার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সব বন্দোবস্ত করেন হিন্দুরা। সবাই মিলে এক সঙ্গে বাঁচাটাই রীতি বর্ধমানের ভাতার ব্লক সদর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরের এরুয়ার গ্রামে।

সেখানে হিন্দু-মুসলিম মিলেমিশে যেমন থাকেন, পরস্পরের বিপদে-আপদে ঝাঁপিয়েও পড়েন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। তাই দুর্গা পূজা সেখানে হিন্দুদের নয়, সবার উৎসব।

৭২ বছর বয়সী আনোয়ার শেখ বলেন, উৎসব মানে তো মিলন, সেখানে কোনো ভেদাভেদ নেই। ছোটবেলায় দেখেছি, হরগৌরির পূজা করতেন প্রভাবতী দেবী পাণ্ডা নামে এক বিধবা নারী। তার কেউ ছিল না বলে আমাদের গ্রামের বেনিয়া চত্বর এলাকার একটি ক্লাবকে পূজার ভার দিয়ে যান। তারপর থেকে আমরা সবাই মিলে পূজা করি। ঈদও আমরা একসঙ্গে পালন করি।

সম্প্রতি ওই মন্দিরের ভগ্নদশার জন্য পাশেই নির্মাণ হচ্ছে নতুন মন্দির। ওই মন্দিরের নির্মাণ কাজের দেখভাল থেকে চাঁদা আদায়ের দায়িত্বে রয়েছেন আনোয়ার শেখ, আসিফ আহমেদ আনসারিরা।

সকাল, বিকেল মন্দিরের নির্মাণ কাজ ঠিক মতো হচ্ছে কিনা, তা দেখতে নরাসপুর থেকে বেনিয়াচত্বরে আসেন আনোয়াররা। নিজের বাড়ির মতোই যত্ন নিয়ে মিস্ত্রিদের বুঝিয়ে দেন নকশা।

মন্দির তৈরির খরচ তোলার জন্য দু’দিনের যাত্রা উৎসব হয়েছে গ্রামে। তারও দায়িত্বে ছিলেন মুসলিমপাড়ার কয়েকজন যুবক। আসিফ আহমেদ আনসারি, মুজিবর শেখ, বাপিয়া রহমানরা বলেন, হরগৌরি মন্দির উন্নয়ন প্রকল্পের জন্যে যাত্রা উৎসবের পরিকল্পনা আমাদের। আমরাই যাত্রাদল বায়না দেয়া, টিকিট বিক্রি করেছি।

তারা আরো বলেন, এই উৎসবের লভ্যাংশ মন্দির তৈরির জন্য দেয়া হবে।

জানা গেছে, মন্দিরের মতো মসজিদ সংস্কার বা মাজারে উরস উৎসবের সময় এলাকার হিন্দু যুবকরাও এগিয়ে আসেন সাহায্য করতে। উরস উৎসবের রক্তদান শিবিরে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেন।

মুজিবর শেখ জানান, মল্লিক পাড়ায় বড় মসজিদ ভেঙে পড়ার সময় হিন্দুরা সাহায্য করেছিল। নরাসপুরে জামে মসজিদ সংস্কারেও হিন্দুরা এগিয়ে এসেছিলেন।

ওই মন্দির উন্নয়ন কমিটির সম্পাদক সৌরভ বুটের কথায়, জাতিধর্ম নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের মানুষ মন্দির তৈরি করার জন্য এগিয়ে এসেছেন। সে কারণেই আমরা কয়েক লাখ টাকা খরচ করে মন্দির তৈরি করতে সাহস পেয়েছি।

স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য হাসমত শেখ, পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ মানগোবিন্দ অধিকারীরাও বলেন, আমরা যা করি, সবাই মিলে করি। সুখে-দুঃখে একসঙ্গে বাঁচাটাই জীবন।