মেহেদির স্পিনেই আবার নাকাল রংপুর
বিপিএলে শনিবার রংপুর রাইডার্সকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। ১০ ম্যাচে ৮ জয়ে তামিম ইকবালের দল থাকল শীর্ষে। দুই ম্যাচ বাকি রেখে নিশ্চিত করল সেরা দুইয়ে থাকাও। আগামী শুক্রবার খেলবে তারা প্রথম কোয়ালিয়ায়ারে।
শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের উইকেট ছিল বেশ মন্থর। বল ব্যাটে এসেছে ধীরে, বাউন্স ছিল অসমান। উঁচু-নিচু হয়েছে প্রায়ই। শট খেলা ছিল কঠিন।
এমন উইকেটের সঙ্গে যোগ হয়েছিল রংপুরের বাজে ব্যাটিং আর কুমিল্লার দারুণ বোলিং। রংপুর গুটিয়ে যায় ৯৭ রানেই। এবারের বিপিএলে একশর নিচে প্রথম স্কোর এটিই।
গেইল-ম্যাককালামের উইকেটসহ ২২ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন মেহেদি। চারটিই বোল্ড!
মন্থর উইকেটে রান তাড়ায় ভুগেছে কুমিল্লার ব্যাটসম্যানাও। তবে শেষ পর্যন্ত লক্ষ্য ছোট বলেই পা হড়কায়নি। জিতেছে তারা ৩ বল বাকি রেখে।
কুমিল্লা ম্যাচের শুরু করেছিল আফগান অফ স্পিনার মুজিব জাদরানকে দিয়ে। আফগানিস্তান অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে সম্প্রতি সাড়া জাগানো এই স্পিনার উইকেট পেতে পারতেন বিপিএল অভিষেকে প্রথম বলেই। জোড়ালো আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার।
পরের ওভারেই মেহেদির জোড়া ছোবল। দুদলের আগের ম্যাচে আম্পায়ারের ভুলে প্রথম বলেই গেইলের উইকেট পাননি এই অফ স্পিনার। এবার আর আম্পায়ারের দিকে তাকাতে হলো না। প্রথম বলেই বোল্ড!
এক বল পর বেরিয়ে এসে চার মেরেছিলেন জিয়াউর। তবে তার পরিণতিও গেইলের মতো। ওই ওভারেই স্লগ করতে গিয়ে বোল্ড।
মিঠুন উইকেটে যাওয়ার পর চেষ্টা করেছিলেন পাল্টা আক্রমনের। মেহেদির পরের ওভারে চার মারেন পরপর দুই বলে। বেরিয়ে এসে চার মারেন মুজিবকেও। কিন্তু আরও একবার সম্ভাবনাময় ইনিংসকে বড় করতে ব্যর্থ হন। সাইফ উদ্দিনের প্রথম বলেই ক্যাচ দেন কাভারে (১৪ বলে ১৭)।
রংপুর তখন তাকিয়ে ম্যাককালামের দিকে। ৬ রানে শোয়েব মালিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যাওয়ার পর খেলছিলেন সতর্কতায়। কিন্তু দিনটি যে মেহেদির! তার সামনে বিবর্ণ সবাই। দুইবারের দেখায় দ্বিতীয়বারও এই অফ স্পিনারের শিকার সাবেক কিউই অধিনায়ক (৩১ বলে ২৪)।
নিজের শেষ ওভারে নাহিদুলকে বোল্ড করে টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবার ৪ উইকেট পেয়েছেন মেহেদি। রান আউটে ফিরেছেন রবি বোপারা। এবার প্রথম খেলতে নামা চামারা কাপুগেদেরা আউট বাজে শটে। এদিন ত্রাতা হতে পারেননি মাশরাফিও। রংপুর থমকে যায় একশর নিচে।
এবারের বিপিলের সবচেয়ে ছোট রান তাড়ায়ও ধুঁকেছে কুমিল্লা। প্রথম ৩ ওভারে যদিও রান উঠেছিল ২২। কিন্তু মাশরাফি লিটন দাসকে ফেরানোর পর বদলে যায় চিত্র।
৬ রানে মাশরাফির বলে তামিমকে স্টাম্পিংয়ের সুযোগ হাতছাড়া করেন মিঠুন। তামিম পরে ফিরেছেন ২২ বলে ২২ রানে। ম্যাচের প্রেক্ষিতে এটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস।
ছোট পুঁজি নিয়েও লড়াই ছাড়েনি রংপুর। নতুন বলে আবারও কিপটে বোলিং করেছেন সোহাগ গাজী। টুর্নামেন্ট জুড়ে দারুণ বোলিং করে চলা মাশরাফি নিয়েছেন ৩ উইকেট। চেষ্টার কমতি ছিল না নাজমুল অপু, নাহিদুল ইসলামদের বোলিংয়েও।
২৬ বলে ১৪ করে দলকে বিপদে ফেলে যান ইমরুল কায়েস। বড় ভরসা হয়ে থাকা শোয়েব মালিক বোল্ড হন অপুর বাঁহাতি স্পিনে দু পায়ের ফাঁক দিয়ে (২০)।
নিয়মিত উইকেট হারালেও কুমিল্লার হাতেই ছিল নিয়ন্ত্রণ। তবে শেষ দিকে একটু জমে যায় ম্যাচ। শেষের আগের ওভারে সাইফ উদ্দিনকে ফেরান মাশরাফি, কুমিল্লার প্রয়োজন তখন ৭ বলে ৮। কিন্তু পরের বলেই বিশাল ছক্কায় উত্তেজনা সব শেষ করে দেন হাসান আলি।
শেষ ওভারে প্রথম দুই বলে রান না হলেও তৃতীয় বলে বাউন্ডারিতে কুমিল্লাকে জেতান স্যামুয়েলস। স্বস্তির নি:শ্বাস কুমিল্লার ড্রেসিং রুমে। রংপুর হয়ত তখন করছে আফসোস। শুরুতে তামিমের স্টাম্পিং মিস না হলে হয়ত অন্যরকম হতে পারত ফল!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রংপুর রাইডার্স: ১৭.১ ওভারে ৯৭ (জিয়াউর ৬, গেইল ০, ম্যাককালাম ২৪, মিঠুন ১৭, বোপারা ৪, কাপুগেদেরা ২, নাহিদুল ৬, মাশরাফি ৯, উদানা ৯, সোহাগ ১২, অপু ১*; মুজিব ০/১৭, মেহেদি ৪/২২, হাসান ১/১৫, সাইফ উদ্দিন ৩/২২, আল আমিন ১/১৮)।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ১৯.৩ ওভারে ১০০/৬ (তামিম ২২, লিটন ৩, ইমরুল ১৪, বাটলার ৫, মালিক ২০, স্যামুয়েলস ১৬*, সাইফ ৬, হাসান ৬*; সোহাগ ১/১৫, মাশরাফি ৩/২৪, উদানা ০/১৮, বোপারা ০/১১, অপু ২/১৭, নাহিদুল ০/৭)।
ফল: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৪ উইকেটে জয়ী