ধর্ষিতা ছাত্রীকে ইয়াবাসহ পুলিশে দেয়ার হুমকি

SHARE
তুফান সরকার

বগুড়ায় ধর্ষিতা ও তার মাকে মাথা ন্যাড়া করে দেয়ার পর তাদেরকে ইয়াবা দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছিল শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকারের লোকজন।

তুফান সরকার

তাদের শরীরে ইয়াবা ট্যাবলেট ঢুকিয়ে দিয়ে পুলিশে দেয়ার কথা বলা হয়েছিল। নির্যাতন শেষে মা ও মেয়েকে বাড়িতে পাঠিয়ে ২০ মিনিটের মধ্যে বগুড়া ত্যাগ করতে নির্দেশ দেয়া হয়। অন্যথায় তুফান বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে এসিড মারার হুমকি দেয়।

রোববার শজিমেক হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের বিছানায় শুয়ে যন্ত্রণায় কাতর ধর্ষণের পর নির্যাতন ও মাথার ন্যাড়া করে দেয়া ওই ছাত্রী এসব তথ্য জানান।

ওই ছাত্রী বলেন, নির্যাতনকারী রুমকি ও অন্যরা বলে- ‘তারা সরকারি দলের সঙ্গে জড়িত। পুলিশ প্রশাসন তাদের হাতের মুঠোর মধ্যে থাকে; তাই কেউ তাদের কিছু করতে পারবে না।

তিনি জানান, এখন পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় মীমাংসার জন্য (তুফান সরকারের) পরিবার থেকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে (তুফানের) বড় বউকে (আশা) তালাক দেবার কথা হচ্ছে। কিন্তু আমি তাতে রাজি হইনি।

নির্যাতনের শিকার ছাত্রীটি বলেন, ‘ও (তুফান) আমায় নষ্ট করেছে; কেউ আমাকে বিয়ে করবে না। তাই আমি তুফান ও নির্যাতনকারী রুমকিসহ অন্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

ঘটনা সম্পর্কে নির্যাতনের শিকার ছাত্রী জানান, প্রভাবশালী তুফান সরকার ও তার লোকজন মাঝে মাঝে রাস্তায় রিকশা থামিয়ে উত্ত্যক্ত করতো। পরবর্তীতে আমাকে কলেজে ভর্তি করে দেয়ার নামে বাড়িতে ডেকে নিয়ে তুফান ধর্ষণ করে। বাড়িতে ককটেল মারার হুমকি দেয়ায় ও লোকলজ্জায় এতদিন নিজের মাকেও বলিনি।

ওই ছাত্রী জানান, এতদিন পর তুফানের স্ত্রী আশা খাতুন ও শ্যালিকা পৌর কাউন্সিলর মারজিয়া হাসান রুমকি ও শাশুড়ি রুমা খাতুন তাকে বাড়িতে ধরে এনে পতিতা আখ্যায়িত করে নির্যাতন করেছে। রুমকিকে মামী ডাকার পরও সে আমার বুকে হাত দেয় এবং গুণ্ডাদের লেলিয়ে দিয়েছিল। আমার ও নিরাপরাধ মাকে মাথার চুল কেটে দিয়েছে। এতেও রাগ না মেটায় নাপিত এনে ন্যাড়া করে দেয়।

তিনি জানান, তার বাবা ছোট হোটেলের ব্যবসা করেন। লেখাপড়ার জন্য মাকে সঙ্গে নিয়ে বগুড়া শহরের চকসুত্রাপুর এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকে। সে এ বছর স্থানীয় স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেছে। ফলাফল ভালো না হওয়ায় কলেজে ভর্তি হওয়া নিয়ে চিন্তিত ছিল।

বাসার বাইরে গেলে তুফান ও তার লোক দিপু তাকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। রিকশা থামিয়ে তার কাছে ফোন নম্বর চায়। এক পর্যায়ে তুফান ও দিপু তাকে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে ভর্তি করে দেবার প্রস্তাব দেয়। সে বিশ্বাস করে তাদের কাগজপত্র ও ৪ হাজার টাকা দেয়। গত ১৭ জুলাই তুফান তাকে ভর্তির কাগজপত্রে স্বাক্ষর দেয়ার নামে চকসুত্রাপুরের বাড়িতে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানেই নির্যাতন চালায়।

ভুক্তভোগী ছাত্রীটি জানায়, আতিকের মাধ্যমে আশা খাতুন জানতে পারে স্বামী তুফান তাকে বাড়িতে এনে ধর্ষণ করেছে। এতে আশা ক্ষিপ্ত হয়ে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করেন। সে এ ব্যাপারে তার বোন বগুড়া পৌরসভার ২ নম্বর সংরক্ষিত আসনের (৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড) কাউন্সিলর মারজিয়া হাসান রুমকি ও মা রুমি খাতুনের সাথে পরিকল্পনা করেন।

শুক্রবার দুপুরের আগে কাউন্সিলর রুমকি তাদের দুজনকে তার বাদুড়তলার নিজের বাসায় ডেকে নেন। এ সময় রুমকি, আশা ও তাদের মা রুমা খাতুন ছাড়াও তুফান বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য ছিল। তারা সকলে ওই ধর্ষণের জন্য ছাত্রীকে দায়ী করে।

এক পর্যায়ে রুমকি প্রকাশ্যে তার (ছাত্রী) বুকে হাত দেয় এবং অন্যদের মা-মেয়েকে নির্যাতন করতে নির্দেশ দেয়। তখন ছাত্রী নিজে দোষ স্বীকার করে হাত-পা ধরে ক্ষমা চায়। এরপরও তুফানের লোকজন তার শ্লীলতাহানী করে।

এরপর শুরু হয় পৈশাচিকতা। কাচি দিয়ে দুজনকে চুল কেটে দেয়া হয়। এতেও কাউন্সিলর রুমকি, তার বোন আশা সন্তুষ্ট না হওয়ায় নাপিত ডেকে এনে দুজনের মাথা ন্যাড়া করে দেয়। এরপর পৌরসভার কাউন্সিলরের প্যাডে জোর করে স্বাক্ষর নেয়া হয়।

পরে এক প্রতিবেশী টের পেয়ে অসুস্থ অবস্থায় তাদের বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেন।