মসুলের আইএসমুক্তির ঘোষণা শিগগির

SHARE

আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ইসলামিক স্টেটকে (আইএস) পরাজিত ঘোষণা করতে যাচ্ছে ইরাকের সরকারি বাহিনী। ইরাকের সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ বাহিনীর (সিটিএস) এক শীর্ষ কর্মকর্তা গতকাল শুক্রবার এ কথা জানান।

আগের দিন বৃহস্পতিবার ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল আবাদি আনুষ্ঠানিকভাবে আইএসের তথাকথিত খেলাফতের অবসান ঘোষণা করেন। ইরাকে আইএসের সবচেয়ে শক্ত ঘাঁটি মসুলের ওল্ড সিটিতে আল নুরি মসজিদের নিয়ন্ত্রণ সরকারি বাহিনীর হাতে আসার পর প্রধানমন্ত্রী এ ঘোষণা দেন। তাঁর ভাষ্য মতে, আইএসের ‘মিথ্যার রাজত্ব’ অবসান ঘটছে। সাড়ে ৮০০ বছরের পুরনো আল নুরি মসজিদে দাঁড়িয়ে তিন বছর আগে আইএস নেতা আবু বকর আল বাগদাদি ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশজুড়ে ‘খেলাফত’ ঘোষণা করেছিলেন।

মসুলের বাকি অংশ থেকে আইএসকে উত্খাতে যুদ্ধটা আরো ভয়াবহ হবে বলে পর্যবেক্ষকদের অভিমত। কারণ আইএসের বিদেশি যোদ্ধারা প্রাণপণ লড়াই চালাবে বলে তাঁদের আশঙ্কা। লড়াইয়ের গতিপ্রকৃতি কেমন হতে পারে, সেটা বোঝাতে গিয়ে সিটিএসের মেজর জেনারেল মান আল সাদি জানান, টাইগ্রিস নদীর তীরে প্রায় ২০০ জঙ্গি অবস্থান নিয়েছে। তাদের কাছ থেকে এলাকার দখল নিতে চার-পাঁচ দিন লাগতে পারে। তিনি বলেন, ‘মিদান এলাকায় অগ্রগতি অব্যাহত আছে। এ এলাকার দখল নেওয়া মানে আমরা টাইগ্রিসে পৌঁছে গেছি। ’

এ ছাড়া সিটিএসের স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবদুল ঘানি আল আসাদি বলেন, ‘আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আমরা দায়েশের (আইএসের স্থানীয় নাম) বিরুদ্ধে বিজয় ঘোষণা করব। ’ তবে সরকারি বাহিনীকে সহায়তাকারী যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক সামরিক জোটের মুখপাত্র রায়ান ডিলন বলেন, ‘বিজয় ঘোষণার সময়সীমা আমি নির্দিষ্ট করে বলতে পারছি না। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে, এক সপ্তাহের বেশি বা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে জয় আসতে পারে। ’

বিশ্লেষকরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, বেশির ভাগ সময় জয় ঘোষণা করা এবং প্রকৃত যুদ্ধপরিস্থিতির মধ্যে বিস্তর ফারাক থাকে। না বললেই নয়, প্রধানমন্ত্রী আবাদি আইএসের খেলাফতের অবসান ঘোষণা করলেও মসুলের পশ্চিম ও দক্ষিণে এখনো জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের তারা কবজা করে রেখেছে। এ ছাড়া আইএসের আরেক শক্তিশালী ঘাঁটি সিরিয়ার রাকায় যৌথ বাহিনীর যুদ্ধ চলছে এখনো।

ইরাকের সরকারি বাহিনী গত বছর ১৭ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে মসুলে আইএসবিরোধী অভিযান শুরু করে। স্থল ও আকাশপথে এতে সহায়তা দিয়ে চলেছে আন্তর্জাতিক সামরিক জোট। সরকারি বাহিনী মসুলের নিকটবর্তী হতে শুরু করলে জঙ্গিরা আত্মরক্ষার স্বার্থে আত্মঘাতী বোমা, গাড়িবোমা হামলার পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের মানবঢাল হিসেবে কাজে লাগাতে শুরু করে। এসবের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার আল নুরি মসজিদের দখল নেয় সরকারি বাহিনী, যা গত সপ্তাহে ধূলিসাৎ করে দেয় জঙ্গিরা। সিটিএস কমান্ডার আসাদি জানান, এখনো মসুলে ২০০ থেকে ৩০০ জঙ্গি রয়েছে বলে তাঁদের ধারণা এবং তাদের বেশির ভাগই বিদেশি নাগরিক। জঙ্গিদের কোণঠাসা হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেলেও আইএস নেতা বাগদাদি সম্পর্কে কিছু নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। গত ১৭ জুন রাশিয়া তাঁকে হত্যার কথা জানালেও যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, বাগদাদির নিহত হওয়ার ব্যাপারে তাদের কাছে কোনো জোরালো প্রমাণ নেই।

মসুলে এখনো যে কয়েকটি এলাকা আইএসের দখলে রয়েছে, সেখান থেকে কোনোমতে পালিয়ে আসতে পারা মানুষজন জানাচ্ছে, খাবার, পানি, ওষুধের অভাবে সেখানকার পরিস্থিতি মর্মন্তুদ। স্বাস্থ্যসেবার কোনো বালাই সেখানে নেই।

সূত্র : এএফপি, রয়টার্স।