ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির সঙ্গে ইংল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলে বৈঠকের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স বলেন, গাজা সংকট মোকাবেলায় পদ্ধতিগত মতপার্থক্য থাকলেও, ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক লক্ষ্য অভিন্ন।
পূর্বে ব্রিটেন ও সেখানকার ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির সমালোচনা করা ভ্যান্স স্ত্রী উষা ও তাদের তিন সন্তানকে নিয়ে লন্ডনে পৌঁছে সেখান থেকে শেভনিং প্রাসাদে যান—যা ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সরকারি গ্রামীণ বাসভবন।
সাংবাদিক ও টিভি ক্যামেরার সামনে দুই নেতা ছিলেন বেশ আন্তরিক। ল্যামি ভ্যান্সকে কেন্ট উপকূলে হাঁটার পরামর্শ দেন এবং ভ্যান্স ব্রিটেনের প্রতি তার ‘ভালোবাসা’ প্রকাশ করেন।
ব্রিটেনের ফিলিস্তিন স্বীকৃতির পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন করলে ভ্যান্স বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের লক্ষ্য এক হলেও তা বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে কিছু মতপার্থক্য আছে, যা নিয়ে আজ আলোচনা হবে। তিনি আরো স্পষ্ট করেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। স্বীকৃতির প্রকৃত অর্থ কি তা তিনি বুঝতে পারছেন না কারণ সেখানে ‘কার্যকর কোনো সরকারই নেই’।
অন্যদিকে ব্রিটেন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তুলনামূলক কঠোর অবস্থান নিয়েছে এবং ফ্রান্স ও কানাডার সঙ্গে মিলে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা করেছে—যাতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর চলমান যুদ্ধ ও গাজার মানবিক সংকট নিয়ে চাপ সৃষ্টি হয়।
চেভনিং প্রাসাদের পেছনের হ্রদে শুক্রবার সকালে ভ্যান্স ও ল্যামি একসঙ্গে মাছ ধরেন, দুজনেই নীল শার্ট পরে ছিলেন ও হাসি-ঠাট্টায় মেতে উঠেছিলেন। ভ্যান্স মজা করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিশেষ সম্পর্কের একমাত্র টানাপড়েন হলো—আমার সব সন্তান মাছ ধরেছে, কিন্তু ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পারেননি।’
ল্যামি এক্সে লিখেছেন, ‘দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শুরুর আগে ভাইস প্রেসিডেন্ট আমাকে ‘কেন্টাকি স্টাইল’ মাছ ধরার কৌশল শিখিয়েছেন।’
চেভনিংয়ের শান্ত পরিবেশে দুই রাত কাটিয়ে ভ্যান্স পরিবারকটসওল্ডসে যাবে—যা ইংল্যান্ডের মনোরম গ্রামাঞ্চল এবং ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জনপ্রিয় অবকাশকেন্দ্র।
আটলান্টিক মহাসাগরীয় অঞ্চলের মধ্যবর্তী অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধি, দুই দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিবর্তন ও ভ্যান্সের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে আগ্রহ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে এ সফর হচ্ছে। ভ্যান্স এখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ মুখ হিসেবে উঠে আসছেন।
পরিকল্পনায় অবগত এক সূত্র জানিয়েছে, এটি একটি কাজের সফর, যাতে থাকবে একাধিক সরকারি বৈঠক, সাংস্কৃতিক স্থান পরিদর্শন ও আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি। ভ্যান্স যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন।
ভ্যান্স ও ল্যামি ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়েও আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন তারা।
চেভনিং প্রাসাদের বাইরে কিছু বিক্ষোভকারী জড়ো হয়েছিল। কেউ কেউ ফিলিস্তিনি পতাকা নাড়াচ্ছিল, আর একজন ভ্যান্সের টাক মাথার ছবি দিয়ে তৈরি একটি ব্যঙ্গ-সংবলিত পোস্টার ধরে ছিলেন।
সূত্র : রয়টার্স