যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রুশ আগ্রাসনের মাধ্যমে যুদ্ধটি শুরু হয়েছিল।
ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে যুদ্ধ বন্ধে সক্রিয় ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছেন। যদিও তিনি দাবি করেছিলেন, ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যেই যুদ্ধ বন্ধ’ করতে পারবেন।
তবুও একাধিক শান্তি আলোচনা, ফোনালাপ ও কূটনৈতিক সফর সত্ত্বেও কোনো অগ্রগতি হয়নি।
এই সম্মেলন সম্পর্কে এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে :
কখন
উভয় পক্ষই নিশ্চিত করেছে, এক শীর্ষ বৈঠকের প্রস্তুতি চলছে এবং আগামী সপ্তাহে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে। তবে নির্দিষ্ট কোনো তারিখ এখনো ঘোষণা করা হয়নি।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কির কথা উল্লেখ করে ট্রাম্প বুধবার বলেন, পুতিনের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক ‘খুব শিগগিরই’ হতে পারে।
পরে বৃহস্পতিবার তিনি আরো বলেন, ‘তারা আমার সঙ্গে দেখা করতে চায়, আর আমি হত্যাকাণ্ড বন্ধে যা পারি, করব।’
পুতিন বৃহস্পতিবার বলেন, ‘উভয় পক্ষই এক শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে আগ্রহ দেখিয়েছে।’
অন্যদিকে ক্রেমলিন উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ বলেন, ‘পরবর্তী সপ্তাহকে লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।
জেলেনস্কি কি থাকবেন
এদিকে জেলেনস্কি এই বৈঠককে ত্রিপক্ষীয় রূপ দিতে চাচ্ছেন এবং তিনি বারবার বলেছেন, পুতিনের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎই শান্তির পথে অগ্রগতির একমাত্র পথ।
ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এই সপ্তাহে পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে ত্রিপক্ষীয় সম্মেলনের প্রস্তাব দিয়েছেন। কিন্তু রুশ প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে অনাগ্রহ দেখিয়েছেন।
পুতিন বৃহস্পতিবার বলেন, ‘আমি এর বিরুদ্ধে নই, সাধারণভাবে এটা সম্ভব, তবে এর জন্য কিছু শর্ত তৈরি করতে হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, আমরা এখনো সেসব শর্ত তৈরির কাছাকাছি যাইনি।’
গত জুনে ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত আলোচনায় রুশ প্রতিনিধিরা বলেছিলেন, একটি পুতিন-জেলেনস্কি বৈঠক কেবল তখনই হতে পারে, যখন আলোচনার ‘চূড়ান্ত পর্যায়ে’ উভয় পক্ষ শান্তির শর্তে সম্মত হবে।
এই প্রসঙ্গে ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘না, ওদের (পুতিনকে) জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করতেই হবে—এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।’
কোথায়
এখনো পর্যন্ত সম্মেলনের স্থান নির্ধারিত হয়নি। ক্রেমলিনের উপদেষ্টা উশাকভ বলেছেন, উভয় পক্ষ নীতিগতভাবে একটি স্থান নিয়ে একমত হয়েছে, তবে তিনি সেটি প্রকাশ করেননি। হোয়াইট হাউস আবার জানিয়েছে, কোনো স্থান এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
পুতিন সম্ভাব্য আয়োজক হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) নাম উল্লেখ করেছেন এবং একে ‘একটি যথেষ্ট উপযুক্ত জায়গা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
এ ছাড়া তুরস্কও তালিকায় রয়েছে, যেখানে এ বছর ইউক্রেন-রাশিয়া আলোচনার তিনটি ধাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। পাশাপাশি সৌদি আরবও সম্ভাব্য আয়োজক, যেখানে ফেব্রুয়ারি ও মার্চে যুক্তরাষ্ট্র পৃথকভাবে রাশিয়া ও ইউক্রেনের কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনা করেছিল।
গণমাধ্যমে চীনের নামও সম্ভাব্য আয়োজক হিসেবে উঠে এসেছে। গুঞ্জন রয়েছে, সেপ্টেম্বরে ট্রাম্প ও পুতিন—দুজনই চীন সফর করতে পারেন এবং সে ক্ষেত্রে স্বাগতিক হতে পারেন প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং। গত মাসে ক্রেমলিনও এই সম্ভাবনাকে নাকচ করেনি।
তবে ইউক্রেনের মিত্র ও ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো, যেমন ফিনল্যান্ড তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারে, যেখানে ২০১৮ সালে ট্রাম্প-পুতিন সম্মেলন হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) পক্ষ থেকে পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি থাকায় অনেক দেশই সম্ভাব্য আয়োজক হিসেবে অযোগ্য হতে পারে। কারণ নিয়ম অনুযায়ী সদস্য দেশগুলোকে তাকে গ্রেপ্তার করতে হবে।
আলোচনার অবস্থান
দ্রুতগতির কূটনৈতিক তৎপরতা ও একাধিক শান্তি আলোচনার পরও রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে কোনো চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছয়নি। যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন ও ইউরোপের পক্ষ থেকে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হলেও পুতিন তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
জুনের আলোচনায় রাশিয়া কয়েকটি শর্ত তোলে : ইউক্রেনকে তাদের সেনা প্রত্যাহার করতে হবে সেই চারটি অঞ্চল থেকে, যেগুলো মস্কো ‘সংযুক্ত’ করার দাবি করছে; ইউক্রেনকে নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে থাকতে হবে; পশ্চিমা সামরিক সহায়তা ত্যাগ করতে হবে এবং ন্যাটোতে যোগদানের পথ ত্যাগ করতে হবে।
কিয়েভ অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির পক্ষে জানিয়ে বলেছে, তারা কখনোই রাশিয়ার দখল করা স্বদেশীয় ভূখণ্ডকে স্বীকৃতি দেবে না। তবে তারা এ-ও বলেছে, এসব এলাকা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা যুদ্ধক্ষেত্রে নয়, কূটনৈতিক পথে করতে হবে।
এ ছাড়া ইউক্রেন পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চায়, যার মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষা বাহিনী মোতায়েন করে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা।