কাতার সংকট নিয়ে আলোচনা: সৌদি একগুঁয়েমিতে শুরুতেই হোঁচট

SHARE

কাতার সংকট নিরসনে সব পক্ষের অংশগ্রহণে যুক্তরাষ্ট্রে আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে সৌদি আরবের কঠোর ও একরোখা অবস্থানের কারণে শুরুতেই এই আলোচনার সাফল্য নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। বেঁধে দেওয়া শর্ত ও সময়ের বিষয়ে সৌদি আরবের এই একগুঁয়ে মনোভাবের নিন্দা জানিয়েছে কাতার।

পরিস্থিতি নিয়ে চলমান উত্তেজনা হ্রাসে ওয়াশিংটনে সৌদি আরব, কুয়েত ও কাতারের কূটনীতিকদের সঙ্গে গত মঙ্গলবার আলোচনায় বসেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন। কুয়েত আনুষ্ঠানিকভাবে এই সংকটের মধ্যস্থতার দায়িত্ব পালন করছে। তিনি তিনটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেন। পরে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবায়েব এক টুইট বার্তায় বলেন, ‘কাতার প্রসঙ্গে আমাদের দাবি নিয়ে নতুন করে আলোচনার কিছু নেই। এখন কাতারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা সন্ত্রাস ও চরমপন্থাকে সহায়তা দেওয়া বন্ধ করবে কি না। ’

সৌদি আরবের এই অবস্থানের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মাদ বিন আবদুল রহমান আল-থানি। তিনি বলেন, ‘এভাবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক চলে না, আপনি একটি দাবির তালিকা ধরিয়ে দেবেন আর বলবেন আলোচনা সম্ভব নয়—তা হয় না। ’

সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর ও বাহরাইনকে সঙ্গে নিয়ে গত ৫ জুন কাতারের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক স্থগিত করে সৌদি আরব। কাতারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে সহায়তা দেওয়ার অভিযোগ আনে তারা। যদিও দোহা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এই দেশগুলোর আকাশসীমা এবং স্থলে আমিরাতের সঙ্গে একমাত্র সীমান্তও বন্ধ করে দেওয়া হয়। কাতারের খাদ্য আমদানির প্রধান পথ এটি।

গত সপ্তাহে রিয়াদ ১৩টি দাবিসহ একটি তালিকা দোহার কাছে হস্তান্তর করে। এর মধ্যে কাতারভিত্তিক সংবাদ চ্যানেল আল জাজিরা বন্ধ, ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কচ্ছেদ এবং তুরস্কের সামরিক ঘাঁটি বন্ধ করে দেওয়ার মতো বিষয় রয়েছে। দাবিগুলো কাতারকে জানানোর পর সংযুক্ত আরব আমিরাত সতর্ক করে বলে, দাবিগুলো গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে অন্যথায় উপসাগরীয় প্রতিবেশীদের সঙ্গে তাদের স্থায়ীভাবে সম্পর্ক নষ্ট হবে।

এই পরিস্থিতিতে কাতারের পাশে এসে দাঁড়ায় ইরান ও তুরস্ক। কাতারকে খাদ্য সহযোগিতাসহ সব ধরনের সহায়তা জুগিয়ে যায় তারা। যুক্তরাষ্ট্র এ সংকটের শুরুর দিকে দূরত্ব রেখে চলার চেষ্টা করে। সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো নিজেরাই সমাধান খুঁজে নেবে এমন একটা অভিপ্রায় ছিল তাদের। কাতারে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটি। বাহরাইনে রয়েছে মার্কিন নৌবাহিনীর ফিফথ ফ্লিট। আর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাতারের ঘনিষ্ঠতা দীর্ঘদিনের। অর্থাৎ দুই পক্ষের সঙ্গেই যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তাবিষয়ক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।

কুয়েতের মন্ত্রিপরিষদবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মাদ আবদুল্লাহ আল-সাবাহর সঙ্গে টিলারসনের বৈঠক প্রসঙ্গে মুখপাত্র হিথার নওয়ার্ট বলেন, বৈঠকে দুই পক্ষই একমত হয় যে সব পক্ষকেই ফলপ্রসূ আলোচনার স্বার্থে ধৈর্য ধরতে হবে। তিনি আরো জানান, সপ্তাহজুড়েই এই আলোচনা চলবে। তবে কাতারের পক্ষে সৌদি দাবি মেটানো খুব সহজ হবে না বলেই মত দেন তিনি।

ওয়াশিংটনের আরব গাল্ফ স্টেটস ইনস্টিটিউশনের উপসাগরবিষয়ক গবেষক হুসেইন ইবিশ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকেই সমঝোতা সূত্র খুঁজে বের করতে হবে। যাতে করে সব পক্ষেরই মুখ রক্ষা হয়। সূত্র : এএফপি।