ঢাকা উত্তর সিটির ২৩৮৪ কোটি ৮০ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা

SHARE

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য ২ হাজার ৩৮৪ কোটি ৮০ লাখ টাকার বাজেট (প্রস্তাবিত) ঘোষণা করেছে। রাজধানীর গুলশান-২ এ অবস্থিত ডিএনসিসির কার্যালয়ে আজ বুধবার বিকেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই বাজেট ঘোষণা করেন ডিএনসিসির মেয়র আনিসুল হক।

সংবাদ সম্মেলনে মেয়র আনিসুল হক বলেন, “এই অর্থবছরে নিজস্ব উৎস থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯৭৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে হোল্ডিং ট্যাক্স বাবদ আয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪৮৫ কোটি টাকা, যা মোট রাজস্ব আয়ের শতকরা ৫০ ভাগ। ”

সংবাদ সম্মেলনে তিনি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য ১ হাজার ২৩১ কোটি ২৬ লাখ টাকার সংশোধিত বাজেটও উপস্থাপন করেন।

মেয়র বলেন, “২০১৭-১৮ অর্থবছরে নিজস্ব আয়ের অন্যতম খাত হলো হোল্ডিং ট্যাক্স। মোট রাজস্ব আয়ের ৫০ শতাংশ এই খাত থেকে ধরা হয়েছে। এছাড়া বাজার হতে সালামী বাবদ ১২০ কোটি টাকা ও ট্রেড লাইসেন্স বাবদ ৬০ কোটি টাকা এবং সম্পত্তি হস্তান্তর বাবদ ১৮০ কোটি টাকা পাওয়ার আশা করছি। ”

সরকারি উন্নয়ন অনুদান হিসেবে ১৫০ কোটি টাকা এবং সরকারি ও বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প থেকে প্রায় ১ হাজার ২৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

মেয়র আনিসুল হক মশাবাহিত রোগ চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব ও মশক নিধন সম্পর্কিত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, “এবার মশক নিধন কার্যক্রমের জন্য ২০ কোটি টাকার বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। আমরা প্রতি বছরই মশক নিধনের জন্য কার্যক্রম বাড়াচ্ছি। মশক নিধনের কার্যক্রম জোরদার করার লক্ষে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে যন্ত্রপাতি ওষুধ ক্রয় এবং জলাশয়ের কচুরিপানা পরিষ্কার করা হয়েছে। ”

আনিসুল হক বলেন, সিটি কর্পোরেশনের চেষ্টা অব্যাহত থাকার পরও মশা নিধন না হওয়ায় আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। বাজেট ঘোষণার আগে নগর উন্নয়নের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, “চাইলেই আমরা মশা নিধন করতে পারছি না। এর প্রধান কারণ হচ্ছে সমন্বয়ের অভাব। সিটি কর্পোরেশন চাইলেই নগরের সব জায়গায় মশা মারার ওষুধ প্রয়োগ করতে পারে না। ”

নগরের ময়লা-আবর্জনা মশা বিস্তারের আরেকটি কারণ উল্লেখ করে মেয়র বলেন, সাধ্যের মধ্যে চেষ্টা করে আমরা ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করার চেষ্টা করছি। কিন্তু নগরবাসী এখনও সচেতন নয়। এখনও যত্রতত্র ময়লা ফেলে নগরের দূষণ বাড়াচ্ছেন। আর তাতেই মশার বিস্তার ঘটছে।

আনিসুল হক বলেন, বাজেটের ব্যয়ের উল্লেখযোগ্য খাতগুলো হচ্ছে- বেতন, পারিশ্রমিক ও ভাতা ১৭৫ কোটি টাকা, যা গত বছর ছিল ১৫৪ কোটি টাকা। জ্বালানি, পানি ও বিদ্যুৎ খাতে ৫৬ কোটি টাকা, নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ৬০ কোটি টাকা, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ২৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা, মশক নিয়ন্ত্রণে ২০ কোটি টাকা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘গত আড়াই বছরে ডিএনসিসির উন্নয়নে আমাদের চেষ্টার কোনও কমতি ছিল না। এর মধ্যে আমরা অনেক কাজ করেছি। উত্তরার চেহারা বদলে গেছে, ফুটপাত বাড়িয়ে এখন ১২ থেকে ১৫ ফুট পর্যন্ত হয়েছে। কাজের মানের বিষয়ে আমাদের কোনও ছাড় নেই। ’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে দেশীয় প্রজাতির ১৬ হাজার ৩৩৮টি গাছ লাগানো হবে। আর চার লাখ ৬৯ হাজার ৬০৮টি ছোট ফুলের গাছ লাগানো হবে। এছাড়া প্রতিবন্ধীদের উপযোগী ফুটপাত নির্মাণ করেছি। বিদেশি যেসব দূতাবাস ফুটপাত দখল করে রেখেছে তাদের উচ্ছেদ করেছি। উত্তরা-গুলশানের চেহারা বদলে যাচ্ছে। অধিকাংশ এলাকায় সিটিটিভি স্থাপন করেছি। ’

জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ‘এরই মধ্যে ঢাকা ওয়াসার সঙ্গে বেশ কয়েকবার বৈঠক করেছি। যেসব খাল বেদখল রয়েছে সেগুলো উদ্ধারের জন্য অভিযান চলছে। বড় বড় ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে উন্নয়নগুলো দৃশ্যমান হবে। ’

২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আয় ৯৭৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা এবং অন্যান্য আয় ধরা হয়েছে ১১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এছাড়া প্রকল্প থেকে এক হাজার ১৭৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা আয় ধরা হয়েছে।

আনিসুল হক জানান, গত অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ ধরা হয়েছিল দুই হাজার ৮৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। সংশোধিত বাজেটে ডিএনসিসির প্রায় ৬০ শতাংশ বাজেট বাস্তবায়ন হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিসবাউল ইসলাম, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম সালেহ ভূইয়া প্রমুখ। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসি’র বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরবৃন্দ।