ক্রিকেটার রুবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে আলোচনায় এসেছিলেন মডেল অভিনেত্রী নাজনীন আক্তার হ্যাপি। ঘটনা শুধু এতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। এরপর তা বহু ডালপালা ছড়ায়। হ্যাপি দাবি করেন, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করেছেন রুবেল। দুজনের অন্তরঙ্গ আলাপচারিতার রেকর্ড ইউটিউবে ছেড়েছিলেন। গণমাধ্যমে এ নিয়ে টানা সংবাদ হয়েছে। রুবেলের ক্যারিয়ারেও তা প্রভাব ফেলে। তাঁকে জেল খাটতে হয়। বিশ্বকাপ ক্রিকেট শুরুর মাত্র কিছুদিন আগে তাঁকে জামিন দেওয়া হয়।
তবে নতুন করে সেই হ্যাপি আবার আলোচনায় এসেছেন। তবে তা এই ক্রিকেটারকে ঘিরে নয়। সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিস্থিতিতে উঠে এসেছে হ্যাপির নাম। যিনি ‘আমাতুল্লাহ’ হিসেবে নতুন নাম নিয়েছেন। এর অর্থ আল্লাহর দাসী। আপাদমস্তক তাঁর বোরকায় ঢাকা। এমনকি মোজা দিয়ে ঢেকে রাখার জন্য তাঁর হাতের নখও দেখা যায় না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক থেকে সরিয়ে নিয়েছেন আগের সব ছবি। তাঁকে নিয়ে প্রকাশও করা হয়েছে বই। তবে বইয়ে রুবেলের প্রসঙ্গ কাটছাঁট করা হয়েছে।
হ্যাপির বদলে যাওয়া জীবন নিয়ে আজ বুধবার ঢাকা থেকে বিশেষ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
এএফপির খবরে বলা হয়েছে, হ্যাপিকে নিয়ে লেখা বইটি প্রকাশ করা হয়েছে মাকতাবাতুল আজহার প্রকাশনী থেকে। এই প্রকাশনী সংস্থা থেকে ইসলামি বই প্রকাশ করা হয়ে থাকে। প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ বলেছেন, সবাই জানতে চান কোন বিষয়টি তাঁকে (হ্যাপি) তারকা জীবনযাপন ছেড়ে সাধারণ নিবেদিতপ্রাণ মুসলিম হতে অনুপ্রাণিত করেছে।
হ্যাপি একজন ঢালিউড তারকা। ২০১৩ সালে ‘কিছু আশা কিছু ভালোবাসা’ নামের একটি বাংলা সিনেমায় প্রথম অভিনয় করে তিনি খ্যাতি পান।তবে ২০১৪ সালের শেষ দিকে তারকা ক্রিকেটার ফাস্ট বোলার রুবেল হোসেনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে বিতর্কের সৃষ্টি করেন। হ্যাপি অভিযোগ করেন, ২৫ বছর বয়সী ওই ক্রিকেটারের সঙ্গে তাঁর ‘অন্তরঙ্গ সম্পর্ক’ ছিল। রুবেল তাঁকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এই কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা।
রুবেল দাবি করেন, তিনি ব্ল্যাকমেলের শিকার হয়েছেন। তবে আদালত তাঁকে রিমান্ডে পাঠায়। বিশ্বকাপ শুরুর কয়েক দিন আগে খেলার সুযোগ দিতে তাঁকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়। পরে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ পায়নি আদালত। এ নিয়ে দীর্ঘ গসিপের একপর্যায়ে হ্যাপি রুবেলের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ তুলে নেন এবং তিনি রুবেলকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে জানান।
রুবেল স্ক্যান্ডালে জড়িয়ে থাকা হ্যাপি নতুন চলচ্চিত্রের কাজ শুরু করেন এবং দাবি করেন, জীবনকে গুছিয়ে নিতে তাঁর ‘বোধোদয়’ হয়েছে। রাতারাতি তিনি তাবলিগ জামায়াতে যোগ দেওয়ার কথা বলেন এবং অতীত জীবনের সব বন্ধন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া শুরু করেন।
হ্যাপিকে নিয়ে প্রকাশিত বইয়ের লেখক আবদুল্লাহ আল ফারুক বলেন, ‘ওই রাতে তিনি (হ্যাপি) ফেসবুকে পোস্ট করা হাজার হাজার ছবি মুছে দেওয়া শুরু করেন। পরে চলচ্চিত্রজগতের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেন।’ আবদুল্লাহ আল ফারুক জানান, তাঁর স্ত্রী সাদেকা সুলতানা বইয়ের সহযোগী লেখক। তিনিই হ্যাপির সাক্ষাৎকার নেওয়ার অনুমতি পান।
তিনি আরও বলেন, ‘তিনি (হ্যাপি) তাঁর নতুন নাম রাখেন আমাতুল্লাহ। তিনি বোরকা পরা শুরু করেছেন।’
বইয়ে হ্যাপি বলেছেন, ‘নতুন শিশুর মতো আমার জন্ম হয়েছে। এখন আমার আগের জীবনের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।’ হ্যাপি তাঁর সর্বশেষ চলচ্চিত্র ‘রিয়েল ম্যান’ মুক্তি বন্ধ করার জন্যও চেষ্টা করেন। তবে তিনি তা করতে ব্যর্থ হন।