আসছে টানা হরতাল!

SHARE

newsবছরের শেষ দিকে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করতে চায় বিএনপি। এরই ধারাবাহিকতায় আন্দোলনের কর্মসূচি শুরুর আগে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। এ লক্ষ্যে উপজেলা নির্বাচন শেষে দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল করবে বিএনপি। এপ্রিল মাসজুড়েই দল গোছাবে বিএনপি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি মাসেই আসতে পারে দু-একদিনের হরতাল। এরপর মে মাস থেকে ধাপে ধাপে নতুন করে সরকার বিরোধী আন্দোলনের যাত্রা শুরু করবে দলটি। এ বছরের শেষ দিকে সরকারকে বড় ধরনের ধাক্কা দিতে চায় দলটি।

ঢাকা মহানগর বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দলসহ মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি পুনর্গঠন ছাড়াও দলের কাউন্সিল করার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। সারাদেশে দলের মহানগর, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড কমিটিগুলো সম্মেলনের মাধ্যমে গঠন ও পুনর্গঠন করা হবে। আন্দোলনের আগে দলকে ঐক্যবদ্ধ করে সরকারবিরোধী সব শক্তিকে নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার উপর জোড় দিয়েছে দলটি।

বিএনপি ও ১৯ দল মনে করে ভোটারবিহীন ও একতরফা এ নির্বাচন দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্য হয়নি। নৈতিকভাবে সরকার খুবই দুর্বল। ১৯ দলীয় জোট ও বিএনপিকে ভাঙনের চেষ্টা করেও সফল হয়নি আওয়ামী লীগ এটাই আমাদের আন্দোলনের সাফল্য।

জানা গেছে, কাউন্সিলের পর সর্বশক্তি নিয়ে রাজপথে আন্দোলনে নামবে বিএনপি। এবারের আন্দোলন আগের মতো হবে না। সরকারকে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে বাধ্য করা হবে। এ ক্ষেত্রে সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করা হবে। এখন বিএনপিকে দল গুছিয়ে সরকারকে বিদায়ের জন্য যা যা করার তা করতে হবে।

অবশ্য এপ্রিলে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বেশ কয়েকটি জেলা সফর করবেন। এছাড়া বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি, নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকশাসহ আন্দোলনের অংশ হিসেবে এপ্রিলে দু-একদিন হরতালসহ প্রতিবাদ-সমাবেশ কর্মসূচি থাকতে পারে। দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সম্প্রতি একাধিক অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, উপজেলা নির্বাচনের পর দল গুছিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনে যাবে তার দল। সর্বশেষ দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও এপ্রিলে দল গোছানো বিশেষ করে ঢাকা মহানগর কমিটি পুনর্গঠনসহ বেগম জিয়ার জেলা সফর নিয়ে আলোচনা হয়।

জানা গেছে, অঙ্গ-সংগঠনের কমিটি বিশেষ করে ছাত্রদল ও যুবদলের কমিটি করার ক্ষেত্রে বেগম জিয়া দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরামর্শ নেবেন।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাস বলেন, সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবেই আমরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সুসংগঠিত করাই ছিল আমাদের লক্ষ্য। উপজেলা নির্বাচন শেষে আমরা দল গুছিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনে যাব। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো পুনর্গঠন করা হবে।

তিনি বলেন, চলতি মাসেই মহানগর বিএনপির কমিটি দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত ছিল বিএনপির। তবে কমিটি দেওয়ার আগ মুহূর্তে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ দলের একাধিক শীর্ষনেতা গ্রেফতার হন। তাই মহানগর কমিটি দেওয়া থেকে বিরত রয়েছেন বেগম জিয়া। এরা মুক্তি পেলেই দল গোছানোর কাজ শুরু হবে।

ঢাকা মহানগর কমিটি নিয়ে বেশ নাটকীয়তা সৃষ্টি হয়েছে বিএনপিতে। প্রথম দিকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহের নেতৃত্বে মহানগরের কমিটি হওয়ার আলোচনায় থাকলেও এখন আবার আহ্বায়কের তালিকায় সাদেক হোসেন খোকার নাম শোনা যাচ্ছে।

মহানগরের সদস্য সচিব হিসেবে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেলের নাম আলোচনায় রয়েছে। এপ্রিলের শুরুর দিকেই মহানগর কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে জানা গেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ঢাকা মহানগর বিএনপিকে অগোছালো রেখে ভবিষ্যতে চূড়ান্ত আন্দোলন করা যাবে না। তাই শিগগিরই মহানগর কমিটি দিতে প্রক্রিয়াও অনেক দূর এগিয়েছিল। গ্রেফতারকৃত নেতারা মুক্তি পেলেই কমিটি হয়ে যাবে, এরপরই চূড়ান্ত আন্দোলনে যাবে বিএনপি।

এদিকে ছাত্রদল সূত্রে জানা গেছে, সংগঠনটির নতুন কমিটি গঠন করতে বেগম জিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি সমর্থিত শিক্ষকদের একটি অংশ এবং গুলশান কার্যালয়ের কিছু নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। ইতোমধ্যে তারা কাজও শুরু করেছেন। সদ্য উচ্চতর ডিগ্রি শেষ করেছেন কিংবা শেষ করে ভিন্ন কোর্সে ভর্তি হয়েছেন এমন নেতাদের দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি করার চিন্তাভাবনা চলছে।

এছাড়া নিয়মিত ছাত্রদের দিয়ে হল কমিটি করার কথাও আলোচনা চলছে। তবে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি ৩০ থেকে ৩৬ বছরের মধ্যে রাখার কথা ভাবছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। সেক্ষেত্রেও অন্তত সিনিয়র প্রায় ৬০ থেকে ৭০ জন ছাত্রনেতা কমিটি থেকে সরে যেতে পারেন। তাদের যুবদলসহ বিএনপির অন্য অঙ্গ-সংগঠনগুলোতে নেওয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে।

১৯ দলীয় জোটের ইসলামী শরিক দলগুলোর মধ্যে সমন্বয়নহীনতা দেখা দিয়েছে। ‘ভোটের রাজনীতি’র প্রয়োজনে ঐক্য হলেও বিএনপির সঙ্গে আদর্শিক ফারাক রয়েছে বলে মনে করছে ইসলামী দলগুলো। উপজেলা নির্বাচন নিয়ে এসব দলের সঙ্গে বিএনপির ‘বনিবনা’র ক্ষেত্রে নতুন সংকট দেখা দিয়েছে।

এরই মধ্যে বিভিন্ন স্থানে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীদের বিজয়ী করতে একজোট হয়ে কাজ করছেন ইসলামী দলগুলোর স্থানীয় নেতারা।

৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পশ্চিমাসহ দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমকে বলেছেন, জামায়াতের সঙ্গে থাকা কৌশলগত জোট এবং এটা সাময়িক। এত সবকিছুর সমন্বয় ঘটিয়ে বিএনপি বছরের শেষদিকে কি ধরনের সরকার বিরোধী আন্দোলন করবে, তাতে কতটুকু সফল হবে তাই দেখার বিষয়।