তিস্তা প্রটেকশন বাঁধের দুই কি.মি. নদীগর্ভে, আতঙ্ক

SHARE

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগহীনতা ও খামখেয়ালীপনার কারণে তিস্তায় পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় তিস্তা নদীর ডান তীর রক্ষা বাঁধের প্রটেকশনের জন্য দেয়া মার্জিনাল ডাইক বাঁধের দুই কিলোমিটার অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের তীব্রতা কোনোভাবে মূল বাঁধে এসে পৌঁছলে অন্তত তিন হাজার পরিবার রাতারাতি বিলীন হয়ে যাবে বলে আশংকা করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এই ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে উদ্যোগ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে এলজিআরইিডি প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা।image_95560_0

গত সপ্তাহে ভারত গাজলডোবার সবকটি গেট খুলে দেয়ায় উজানের ঢল আর বৃষ্টির পানিতে তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া ব্যারেজ পয়েন্টে একলাফে ৮৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে।

পরে তার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এখন পর্যন্ত তার ওপর দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে। রোববার ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্চিল পানি।

এতে বিস্তৃণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি শুরু হয়েছে ভয়াভহ ভাঙন। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গত ১৬ আগস্ট পানির তোড়ে তিস্তার গর্ভে বিলীন হয়ে যায় রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার আলমবিদিতর ইউনিয়নের পাইকান ব্যাঙপাড়া এলাকায় অবস্থিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের মার্জিনাল ডাইক বাঁধের আধা কিলোমিটার এলাকা।

ধসে যায় ব্যাংক পাড়ার ৫০ ফিট এবং বৈরাতি এলাকার ২৫০ ফিট এলাকার ব্লক পিচিং। এক সপ্তাহের ব্যবধানেও পানি উন্নয়ন বোর্ড এই ডাইক বাঁধটির ভাঙন রোধে কোন কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়ায় শনিবার পর্যন্ত এই ডাইক বাঁধটির দুই কিলোমিটার এলাকার তিস্তার গর্ভে চলে গেছে।

আলমবিদিতর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোকাররম হোসেন সুজন নতুন বার্তা ডটকমকে জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতি ও  অবহেলার কারনেই মার্জিনাল ডাইক বাঁধটি তিস্তার গর্ভে চলে গেছে।

তিনি জানান, বৃহস্পতিবার পানি কমে স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসার সঙ্গে সঙ্গে স্রোতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় আলমবিদিতর পাইকান পীরপাড়া এলাকার মার্জিনাল ডাইকটির ব্লক পিচিংসহ তিস্তায় বিলীন হয়ে গেছে।

ব্যাঙপাড়া হতে ভদভদিপাড়া পর্যন্ত এক কিলোমিটার এবং শুক্রবার ব্যাঙপাড়া হতে পীরপাড়া পর্যন্ত আরও এক কিলোমিটার ডাইক বাঁধ তিস্তা খেয়ে ফেলেছে।

তিনি জানান এই বাঁধটি মুলত মূল বাঁধের প্রটেকশনের জন্য দেয়া হয়েছিল। প্রটেকশন বাঁধ নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় মুল বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। এতে ভদভদিপাড়া, ব্যাঙপাড়া, পীরপাড়া ও হাজীপাড়ার তিন হাজার পরিবার ভাঙন হুমকির মুখে পড়েছে।
এছাড়াও ভাঙ্গন হুমকির মুখে পড়েছে পাইকান ইউসুফিয়া মাদ্রাসা, এতিমখানা, মসজিদ ও প্রাইমারি স্কুল। এসব স্থাপনা মাত্র ১৫ থেকে ২০ ফুট দুরুত্বে অবস্থান করছে তিস্তা থেকে।

ইউপি চেয়ারম্যান সুজনের অভিযোগ, গত জুন মাসে এই মার্জিনাল ডাইক বাঁধে ভাঙ্গন শুরু হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করা সত্বেও তারা কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় এলাকাবাসী বাঁশের বেড়া দিয়ে বাঁধটি ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা করলেও পাউবো এ নিয়ে কোনো ভূমিকায় দেখায়নি তখন।

তিনি বলেন, দ্রুত গতিতে ভাঙন ঠেকানো না গেলে গ্রাম চারটিসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সব ধ্বংস হয়ে যাবে। আমি ভাঙন রোধের জন্য ব্যক্তিগতভাবে দুই হাজার বালুর বস্তা, দুই হাজার টাকা দিয়েছি। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল।

এদিকে ভাঙন ঠেকাতে এলাকাবাসী নিজেদের মধ্যে টাকা তুলে তা দিয়ে বাঁশ বালির বস্তা ফেলে রক্ষার চেষ্টা করছেন। কিন্তু সেটি কাজে আসছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন ঠেকাতে লাল নিশান উড়িয়ে বালুর বস্তা দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু প্রবল  স্রোতে কারণে তাও কাজে আসছে না।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল কুদ্দুস নতুন বার্তা ডটকমকে জানান, তিস্তায় পানি বাড়ার কারনে তীব্র স্রোতেই এই ভাঙন দেখা দিয়েছে। বালুর বস্তা দিয়ে ভাঙনরাধের চেষ্টা করছি।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারী প্রকৌশলী তবিবুর রহমান নতুন বার্তা ডটকমকে জানান, পানি বৃদ্ধিও কারণে বিভিন্ন এলাকায় বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। তবে পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকার কারনে ভাঙন রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রতি বছর বর্ষা মওসুমে ভাঙ্গন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কিছু উদ্যোগ নেয়। কিন্তু সেটি সাময়িক। সেই কাজের মধ্যেও থাকে আবার শুভংকরের ফাঁকি। যখন পানি বাড়া এবং ভাঙ্গন শুরু হয়, তখন সামান্য কাজ করেই বাজেটের টাকা আত্মসাত করে থাকেন পাউবোর একশ্রেণীর কর্মকর্তার যোগসাজসে ঠিকাদাররা।

ফলে মানুষ ভাঙনের হাত থেকেও রক্ষা পায় না। বন্যার সময়ও দুর্বিসহ কষ্টে পড়েন। নদী তীরবর্তী মানুষ তাই সরকারের কাছে ভাঙন ও বন্যার ব্যাপারে আগাম প্রস্তুতি রাখার দাবি জানিয়েছেন সরকারের কাছে।

পাশাপাশি যেসব এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে সেসব এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন তারা।

এদিকে  স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা সম্প্রীতি উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নের চিলাখাল ও আলমবিদিতর ইউনিয়নের ব্যাঙপাড়া এলাকা পরিদর্শন করেন।

এ সময় তিনি ভাঙ্গন রোধে পাউবোর কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন এবং ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধান আশ্বাস দেন এলাকাবাসী।  এসময় তিনি নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন।