অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনাই নৌ-দুর্ঘটনার কারণ

SHARE

অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনায় নৌ-দুর্ঘটনা ঘটছে-এই অভিযোগ করে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দোষী মালিকদের বিরুদ্ধে কঠিন শাস্তির দাবি জানিয়েছে উপকূলীয় ১৬টি সংগঠন।image_93391_0

বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাব বর্ধিত হলরুমে আয়োজিত ‘অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনাই নৌ-দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ: নৌ-যানের নকশা অনুমোদন এবং তদারকি ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ প্রয়োজন’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এ দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনটি যৌথভাবে আয়োজন করে অর্পণ, আকাশ, উদয়ন বাংলাদেশ, নিরাপদ নৌপথ বাস্তবায়ন আন্দোলন, এনবিএস, এসডিও, প্রান্তজন, শাপলা ফুল, প্রাণ, ডোক্যাপ, গ্রাউস, পালস-বাংলাদেশ, রয়েল বেঙ্গল ফাউন্ডেশন, সমাজ, সিডিপি ও কোস্ট ট্রাস্ট।

বক্তারা বলেন, অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনাকে নৌ দুর্ঘটনার মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে দেশের নৌ-পথগুলোকে নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত রাখার জন্য দায়িত্বে অবহেলাকারী, দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তা এবং দোষী মালিকদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন- কোস্ট ট্রাস্টের পক্ষে মো. মজিবুল হক মনির, নিরাপদ নৌপথ বাস্তবায়ন আন্দোলনের সদস্য সচিব আমিনুর রসূল বাবুল, কোস্ট ট্রাস্টের মোস্তফা কামাল আকন্দ, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী প্রমুখ।

মো. মজিবুল হক মনির লিখিত বক্তব্যে বলেন, পিনাক-৬ ডুবে যাওয়া কোনো দুর্ঘটনা নয়। প্রকাশ্য অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনার পরিণতিকে কোনোভাবেই ‘দুর্ঘটনা’ বলা যায় না। অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা-অবহেলার একটি করুণ পরিণতি পিনাক-৬ নামের লঞ্চটির এই ডুবে যাওয়া। পিনাক-৬ লঞ্চের চলাচল অনুমোদনের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল, এর যাত্রী ধারণক্ষমতা ছিল ৮৫ অথচ বহন করছিল তিন শতাধিক।

তিনি বলেন, পদ্মায় ২ নম্বর সতর্কসংকেত দেখানো অবস্থায় ৬৫ ফুটের কম দৈর্র্ঘ্যরে লঞ্চ চলাচল নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু পিনাকের দৈর্ঘ ছিল ৫২ ফুট। অর্থাৎ পিনাক-৬ এর চলাচল, ডুবে যাওয়া এবং অনকাঙ্ক্ষিত প্রাণহানি প্রমাণ করে পুরো নৌ পরিবহন ব্যবস্থাপনাটাই আসলে এখানে ছিল অকার্যকর।

তিনি আরো বলেন, প্রত্যেকটা দুর্ঘটনার পরই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। মনে হয় যেন তদন্ত কমিটি গঠন করার মাধ্যমেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তার দায়িত্ব শেষ করতে চায়। কারণ স্বাধীনতার পর এখন পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও  প্রকাশ করা হয়েছে মাত্র তিনটি তদন্ত প্রতিবেদন। অনেক তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমাও দেয় না। দুর্ঘটনার তদন্তে প্রায়ই উঠে আসে মালিক-চালক বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা-গাফিলতির কথা। কিছু  কিছু মামলাও হয়, কিন্তু কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বললেই চলে।

আমিনুর রসূল বাবুল বলেন, দেশে এই মুহূর্তে চলমান নৌযানের সংখ্যা জানতে নৌশুমারি করার প্রয়োজন। প্রচণ্ড স্রোতের মধ্যে ডুবে যাওয়া লঞ্চটি তিন ঘণ্টা পরেও ডুবে যাওয়ার স্থানে থাকার কথা নয়, অথচ লঞ্চটি খোঁজার কাজটি শুরু করা হলো সেখানেই। এটা আসলে এক ধরনের আই ওয়াশ।

যাত্রীর সংখ্যা কম দেখানোর জন্য কর্তৃপক্ষ ইচ্ছে করেই ভুল জায়গায় লঞ্চ খুঁজচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, নৌ দুর্ঘটনা প্রতিরোধে এবং একটি দুর্ঘটনা ঘটলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকারের প্রস্তুতির অভাব রয়েছে। দেশে ডুবুরি আছেন মাত্র ২৫ জন, তাও আবার তারা পূর্ণকালীন নন।

এধরনের দুর্যোগ মোকাবেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগকে সম্পৃক্ত করে তাদের স্বেচ্ছাসেবকদের সহযোগিতা নেয়া প্রযোজন বলেও মত দেন বক্তারা। সংবাদ সম্মেলন থেকে আট দফা দাবি তুলে ধরেন তারা।