হাওরের কোমল হৃদয় নেদারল্যান্ডসের পক্ষে

SHARE

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট সব সময়ই অবহেলিত ও শোষিতের পক্ষে। নিজের দেশ, অঞ্চল ও আন্তর্জাতিক বিশ্ব সব ক্ষেত্রেই আজীবন নির্যাতিত ও হতদরিদ্র মানুষের পক্ষে ছিলেন এবং আছেন তিনি। এমনকি বিশ্বকাপ ফুটবলেও বাদ যায়নি তার এ দর্শন। এবারের বিশ্বকাপে প্রথমে সমর্থন ছিল তার নিজের মহাদেশ এশিয়ার দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতি। কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়াসহ একে একে সব দেশই যখন বিদায় নিল, তখন তিনি সমর্থন করলেন দক্ষিণ আফ্রিকার দুটি দেশের। সেগুলোও যখন হেরে গেল, সব শেষে তিনি এখন আছেন নেদারল্যান্ডসের ভরসায়। ব্রাজিল কিংবা আর্জেন্টিনার খেলা দেখলেও দল দুটির প্রতি তেমন কোনো আকর্ষণই নেই আবদুল হামিদের।image_88557_0

বঙ্গভবনে শনিবার মধ্যাহ্ন ভোজ শেষে টানা দুই ঘণ্টা প্রাণখোলা কথাবার্তাকালে বিশ্বকাপ ফুটবল প্রসঙ্গে এসব কথা জানান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। ঢাকাস্থ কিশোরগঞ্জ জেলা সাংবাদিক ফোরামের সৌজন্যে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন রাষ্ট্রপতি। এক দশক বয়সী সংগঠনটির প্রধান অনুপ্রেরকই হলেন আবদুল হামিদ। তখন তিনি ছিলেন সংসদে বিরোধী দলের উপনেতা। গতকাল তেমন কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই দুই ঘণ্টারও বেশি সময় তিনি জাতীয়, আন্তর্জাতিকসহ বিশেষ করে নিজের এলাকা তথা জেলার বিভিন্ন সমস্যার কথা নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময় জেলা সাংবাদিক ফোরামের ১৬ জন প্রতিনিধি ছাড়াও রাষ্ট্রপতি-তনয়, কিশোরগঞ্জ-৪ এলাকার সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক, কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক এস আলম, সিভিল সার্জন, জেলা ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি শফিকুল ইসলামসহ এলাকার বেশ কজন গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।

অনেক দিন পর রাষ্ট্রপতি এলাকার মানুষের সঙ্গে এমনভাবে খোলামেলা আলোচনায় মিলিত হলেন। তিনি ভুলেই গিয়েছিলেন যে তিনি দেশের সর্বোচ্চ পদে আসীন মহামান্য রাষ্ট্রপতি। রেললাইন সমস্যা থেকে শুরু করে ডায়াবেটিক হাসপাতালের ডায়ালোসিস মেশিনের ব্যবস্থা, এমনকি রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট তৈরি-সংক্রান্ত সমস্যার কথাও বাদ যায়নি। পুরো জেলার প্রতিটি থানার প্রতিটি ইউনিয়নের খবর পর্যন্ত ছিল রাষ্ট্রপতির নখদর্পণে। জেলা সদরে বা আশপাশে জরুরি ভিত্তিতে একটি সিএনজি পাম্প স্টেশনের প্রয়োজনীয়তার জোরালো দাবি উঠলে এর দায়িত্ব নেন এমপি তৌফিক। এটি এখন পুরো জেলাবাসীর একান্ত দাবিগুলোর একটি।

এর মধ্যেই রাষ্ট্রপতি আরও জানালেন, তার এলাকার তিনটি উপজেলার একটিতেও কোনো চিকিৎসক থাকতে চান না। হাওর এলাকা হওয়ায় তারা সেখানে যেতে অনাগ্রহী। আর যদি সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক হন ক্ষমতাসীন দলের অনুসারী তবে তো কথাই নেই। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের অনুসারী ইউএনও কিংবা প্রশাসনিক কর্মকর্তারা হাওর এলাকায় না যাওয়ার বায়না ধরে মুখ ফুটেই বলে ফেলেন, ‘এ সরকারের আমলে আমরা যদি পছন্দমতো জায়গায় না থাকতে পারি তবে আর লাভ কী হলো!’ ফলে দক্ষ অফিসারদের সেবা থেকে সব সময়ই বঞ্চিত হচ্ছেন হাওরবাসী। এ ছাড়া শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগসহ আরও কত কি সমস্যা তাদের। রেল-ট্রেনের চাহিদার কথা বিবেচনা করে রাষ্ট্রপতি শেষ পর্যন্ত অন্য ১০টি আন্তর্জাতিক ট্রেন থেকে একটি করে বগি খুলে তৈরি করে দিয়েছেন কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস। এ ধরনের অজস্র সমস্যা রয়েছে জেলাজুড়ে। একে একে সবই শুনতে হয় তাকে।

এর মধ্যেও জেলা সাংবাদিক ফোরাম সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ জেলাবাসীর পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানান তার আন্তরিকতা ও দূরদর্শিতায় কিশোরগঞ্জের অখণ্ডতা রক্ষার জন্য। মরহুম রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের আমলে কিশোরগঞ্জ ভেঙে চারটি উপজেলা নিয়ে ভৈরবকে জেলা বানানোর প্রক্রিয়া চলছিল জোরেশোরেই। দীর্ঘ সময়ের এ আলাপ-আলোচনাকালে রাষ্ট্রপতি বেশ কিছু স্মৃতিচারণাও করেন। সাংবাদিক মনোজ রায় ত্রিশ বছর আগের পুরনো কিছু স্মৃতির কথা বলতে গিয়ে সবাইকে আবেগাপ্লুত করে তোলেন। এ ছাড়া ঢাকাস্থ কিশোরগঞ্জ জেলা সাংবাদিক ফোরামের জন্য ঢাকায় ছোট্ট একটি অফিসের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্যও আবেদন জানানো হয়। খুব বেশি নয়, তিন থেকে চার শতাংশ জমি কিংবা একটি ফ্ল্যাটের মাধ্যমে সাংবাদিক ফোরামের জন্য ছোট্ট একটি স্থায়ী অফিসের ব্যবস্থা করতে বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয় রাষ্ট্রপতির কাছে।

এ ছাড়া ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ সদরের সঙ্গে দ্রুততর সময়ে যোগাযোগের জন্য ভৈরব বাজারের পশ্চিম পাশ দিয়ে ব্রিজের আগে থেকে রেললাইনের একটি বাইপাস সড়ক নির্মাণের প্রস্তাবও উত্থাপন করা হয়।  সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন