ইসরায়েল অধিকৃত অঞ্চলে বাণিজ্য নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপ আয়ারল্যান্ডের

SHARE

আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অবৈধ বিবেচিত ইসরায়েলি বসতিগুলো থেকে পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করতে একটি বিলের খসড়া তৈরির অনুমোদন দিয়েছে আয়ারল্যান্ড সরকার। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আয়ারল্যান্ড ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে প্রথমবারের মতো এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করল, যা বিশ্ব কূটনীতিতে এক নতুন নজির তৈরি করল।

এই উদ্যোগ এসেছে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) একটি পরামর্শমূলক মতামতের প্রেক্ষাপটে, যেখানে পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ও গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের দখল আন্তর্জাতিক আইন পরিপন্থী বলে মন্তব্য করা হয়েছে। আয়ারল্যান্ড সরকার জানিয়েছে, আদালতের সেই মতামতই তাদের এই সিদ্ধান্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, “সরকার মনে করে, অবৈধ বসতিগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য নিষিদ্ধ করা আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় আমাদের দায়িত্ব।” এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে আবাসিক, কৃষিজ ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম থেকে উৎপাদিত পণ্য, যেগুলো ইসরায়েলের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমার বাইরে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও উপপ্রধানমন্ত্রী সায়মন হ্যারিস বলেন, “আজ আমরা একটি ছোট দেশ হিসেবে এমন একটি সিদ্ধান্ত নিচ্ছি, যা পশ্চিমা বিশ্বের জন্য নতুন পথ তৈরি করছে। আমি আশা করি, ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোও আমাদের এই সাহসী পদক্ষেপ অনুসরণ করবে।”

আয়ারল্যান্ডের এই সিদ্ধান্ত এসেছে এক মাসের মধ্যে যখন দেশটি স্পেন, নরওয়ে ও স্লোভেনিয়ার সঙ্গে একযোগে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়। এই স্বীকৃতির প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল তীব্র সমালোচনা করে। ফ্রান্সও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি জুনের মধ্যে বিবেচনা করছে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ।

এই পদক্ষেপ এমন এক সময় এসেছে যখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইসরায়েলের সঙ্গে ১৯৯৫ সালের বাণিজ্য ও সহযোগিতা চুক্তি পর্যালোচনার উদ্যোগ নিয়েছে। ইইউর পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রধান কায়া কাল্লাস জানান, ২৭টি সদস্য দেশের শক্তিশালী সংখ্যাগরিষ্ঠতা এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছে, যা ইসরায়েলের ওপর চাপ তৈরির অংশ।

তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই নিষেধাজ্ঞার আর্থিক প্রভাব তুলনামূলকভাবে সীমিত। ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে আয়ারল্যান্ড ও অবৈধ বসতিগুলোর মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ এক মিলিয়ন ইউরোরও কম ছিল। পণ্যের মধ্যে ফলমূল, শাকসবজি ও কাঠজাত দ্রব্য প্রধান।

ক্রিশ্চিয়ান এইড আয়ারল্যান্ডের অ্যাডভোকেসি ও নীতিমালা প্রধান কনর ও’নিল বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে ইউরোপ শুধু বলেই এসেছে যে বসতিগুলো অবৈধ। কিন্তু এবার আয়ারল্যান্ড কথার সঙ্গে কাজ মিলিয়েছে।”

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিলটির খসড়া আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে, তবে শরৎকালের (সেপ্টেম্বর–অক্টোবর) আগে এটি আইন হিসেবে কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা কম।

এই পদক্ষেপ কেবল প্রতীকী নয়; এটি আন্তর্জাতিক আইন, মানবাধিকারের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার একটি শক্তিশালী বার্তা—বিশেষত এমন সময়ে, যখন বৈশ্বিক নেতৃত্ব এই ইস্যুতে নানাভাবে বিভক্ত।

সংবাদ প্রণয়ন: আন্তর্জাতিক ডেস্ক
তথ্যসূত্র: AFP, আইসিজে, আয়ারল্যান্ড পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়