কারামুক্ত হলেন জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম

SHARE

ঢাকা, ২৮ মে ২০২৫ (বাসস):
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় থেকে খালাস পাওয়ার পর জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম ১৩ বছর পর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

আজ (বুধবার) সকাল ৯টা ৫ মিনিটে তিনি ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থান থেকে মুক্তি পান। মুক্তির সময় জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। কারা কর্তৃপক্ষ তার মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

ঢাকা বিভাগের কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন্স) মো. জাহাঙ্গীর কবির জানান, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী এটিএম আজহারুল ইসলামকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

মুক্তির পর আজহারুল ইসলাম রাজধানীর শাহবাগে জামায়াতে ইসলামীর এক সমাবেশে যোগ দেন এবং বলেন, “আমি আজ স্বাধীন, আমি এখন মুক্ত, আমি স্বাধীন দেশের একজন স্বাধীন নাগরিক।”

গতকাল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এই মামলার চূড়ান্ত রায় প্রকাশ করে, যেখানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় বাতিল করে তাকে খালাস দেওয়া হয়। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে আজহারুল ইসলামের আপিল গ্রহণ করে রায় দেন।

তিন পাতার সংক্ষিপ্ত আদেশে আদালত উল্লেখ করে, অন্য কোনো মামলা বা আইনগত জটিলতা না থাকলে তাকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।

আজহারুল ইসলাম মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া প্রথম ব্যক্তি, যিনি আপিল বিভাগের রায়ে সম্পূর্ণ খালাস পেলেন। ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় কুড়িগ্রামে গণহত্যা, ধর্ষণ ও অন্যান্য অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেয়। পরে ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর আপিল বিভাগ ওই রায় বহাল রাখে। তবে ২০২০ সালের জুলাই মাসে তিনি রায়ের পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন, যার নিষ্পত্তি হলো প্রায় পাঁচ বছর পর।
বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বিতর্ক

মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক ছিল। বিএনপি ও জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই বিচার প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০১২ সালের “স্কাইপি কেলেঙ্কারী” এবং আসামিপক্ষের সাক্ষীদের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আরও প্রশ্ন তোলে।

আজহারুল ইসলামের খালাসকে অনেকে এই বিচার প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে দেখছেন। তবে এটি শুধু একটি মামলার নিষ্পত্তি, পুরো বিচারের বৈধতা নিয়ে বিতর্ক আরও দীর্ঘ সময় চলবে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।